কোন খাবারে কতটুকু ক্যালসিয়াম পাবেন?

সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য অপরিহার্য উপাদান হচ্ছে ক্যালসিয়াম। এটি কেবল শক্তিশালী হাড় এবং দাঁত তৈরিতেই সাহায্য করে না, পাশাপাশি শরীরের বিভিন্ন ক্রিয়াকলাপে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে এই গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদানটি আমাদের দেহ নিজে নিজে তৈরি করতে পারে না। খাবারের মাধ্যমে পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম গ্রহণ করতে হয় আমাদের।

আমাদের শরীরের জন্য ক্যালসিয়াম কেন গুরুত্বপূর্ণ?
ক্যালসিয়াম শুধুমাত্র একটি সাধারণ খনিজ নয়, এটি আমাদের সুস্থতার জন্য অন্যতম অপরিহার্য খনিক উপাদান। শক্তিশালী হাড় এবং দাঁত তৈরি এবং বজায় রাখার ক্ষেত্রে এর ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। ক্যালসিয়াম অনেকটা নির্মাণ শ্রমিকের মতো, কাঠামো মজবুত থাকা নিশ্চিত করে এটি। এছাড়া পেশী সংকোচন এবং শিথিল করতে সাহায্য করে। ক্যালসিয়ামের অভাব হলে পেশী সঠিকভাবে কাজ করে না। এমনকি সহজতম কাজগুলোও সম্পাদন করা কঠিন হয়ে পড়ে। স্নায়ুতন্ত্র, মস্তিষ্ক এবং শরীরের মধ্যে সংকেত প্রেরণের জন্য ক্যালসিয়ামের প্রয়োজন। 

পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম না পেলে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়তে ;পারেন। ইউএস ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথের মতে, অপর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম গ্রহণের ফলে অস্টিওপোরোসিসের মতো রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। এই রোগ হলে হাড় দুর্বল এবং ভঙ্গুর হয়ে  পড়ে। শিশুদের মধ্যে দেখা দিতে পারে রিকেটস রোগ। এতে হাড় নরম হয়ে যায়। 

দৈনিক কতটুকু ক্যালসিয়াম প্রয়োজন আমাদের?
৯ বছরের কম বয়সীদের জন্য দৈনিক ১ হাজার মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম প্রয়োজন হয়। ৯ থেকে ১৮ বছরের বয়সীদের দরকার দৈনিক ১ হাজার ৩০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম। ১৯ থেকে ৫০ বছর বয়সীদের দৈনিক ১ হাজার মিলিগ্রাম (সর্বোচ্চ সীমা ২ হাজার ৫০০ মিলিগ্রাম) চাহিদা থাকে। আর ৫০ বছরেরে বেশি বয়সীদের দৈনিক ১ হাজার ২০০ মিলিগ্রাম (সর্বোচ্চ সীমা ২ হাজার মিলিগ্রাম)। 

কোন কোন খাবারে মিলবে ক্যালসিয়াম?
ক্যালসিয়ামের একটি ভালো উৎস হচ্ছে দুগ্ধজাত খাবার। তবে যদি আপনার ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতার সমস্যা থাকে, তবে দুধের বিকল্প খাবারগুলোও নিশ্চিন্তে গ্রহণ করতে পারেন ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণের জন্য। টাইমস অব ইন্ডিয়ার একটি প্রতিবেদন জানাচ্ছে ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ কিছু খাবারের খোঁজ। 

  • এক কাপ দুধে (২০০ মিলি) প্রায় ২৪০ গ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে। যারা ল্যাকটোজ অসহিষ্ণু বা উদ্ভিদভিত্তিক বিকল্প পছন্দ করেন, তাদের জন্য সয়া দুধ একটি চমৎকার পছন্দ হতে অপারে। এক কাপ ফোর্টিফাইড সয়া দুধে (২০০ মিলি) সাধারণত ২১০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে।
  • দইয়ের একক পরিবেশনেও দৈনিক ক্যালসিয়ামের চাহিদা পুরোপুরি পূরণ হতে পারে। ক্যালসিয়াম পাওয়ার হাউস বলা হয় দইকে। মাত্র এক কাপ দই (২০০ মিলিl) প্রায় ২৬০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম প্রদান করতে পারে। এছাড়াও এটি প্রোবায়োটিক দ্বারা পরিপূর্ণ যা অন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্য দুর্দান্ত।
  • ৩০ গ্রাম পনির থেকে প্রায় ২৪০ থেকে ৩৫০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম মেলে। 
  • এক কাপ রান্না করা পালং শাক (২১০ গ্রাম) প্রায় ৩১০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম সরবরাহ করে।
  • এক কাপ রান্না করা বাঁধাকপি (১৬০ গ্রাম) প্রায় ২৮০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম সরবরাহ করে। 
  • ক্যালসিয়ামের একটি দারুণ উৎস হচ্ছে পোস্তদানা। মাত্র এক টেবিল চামচ পোস্তদানায় প্রায় ১২৬ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে। এগুলো সালাদে ছিটিয়ে খেতে পারেন বা রান্নায় ব্যবহার করতে পারেন।
  • এক আউন্স কুমড়ার বীজ প্রায় ৪২ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম সরবরাহ করে। সকালের সিরিয়াল বা সন্ধ্যার সালাদে ছিটিয়ে দিতে পারেন এই বীজ।
  • দুই টেবিল চামচ চিয়া বীজ প্রায় ১৮০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম সরবরাহ করে।
  • অন্যান্য ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবারের সাথে প্রতিদিন ব্রকোলি খান। আধা কাপ কাটা ব্রকোলিতে ১০.৭ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়।  
  • ক্যালসিয়ামের একটি চমৎকার উৎস হচ্ছে আমন্ড। এক আউন্স বাদামে প্রায় ৭৬ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে। 
  • একটি মাঝারি আকারের কমলাতে প্রায় ৫২ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে। এগুলো ভিটামিন এরও ভালো উৎস যা ক্যালসিয়াম শোষণে সহায়তা করে।