সাময়িক কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণ ও প্রতিরোধের উপায়

কোরবানি ঈদের পর কিংবা খাবারে অনিয়ম করলে সাময়িক কোষ্ঠকাঠিন্যে ভোগেন অনেকে। কোষ্ঠকাঠিন্য হচ্ছে খুব শক্ত মলত্যাগ হওয়া, সপ্তাহে তিনবারের কম মলত্যাগ হওয়া, মলত্যাগ করতে প্রচুর সময় ব্যয় হওয়া, খুব বল প্রয়োগ করে কিংবা মলদ্বারে কোনও কিছু প্রবেশ করিয়ে মলাশয় খালি করা বা মলত্যাগ করার পর মনে হওয়া যে, মলাশয় খালি হয়নি এরকম। কোষ্ঠকাঠিন্য দুই ধরনের- সাময়িক ও দীর্ঘস্থায়ী। 

যদি অল্প কয়েক দিনের জন্য কোষ্ঠকাঠিন্যের উপসর্গ দেখা দেয় অথবা যদি তিন মাসের কম সময় ধরে এসব উপসর্গ থাকে, তাহলে এই অবস্থাকে সাময়িক কোষ্ঠকাঠিন্য বলে। যেমন কোনও অনুষ্ঠানে গিয়ে প্রচুর পরিমাণ মাংস খাওয়ার পর দেখা গেল দুই-তিন দিন মলত্যাগ হচ্ছে না কিংবা খুব শক্ত অল্প অল্প মলত্যাগ হচ্ছে। এটাই সাময়িক কোষ্ঠকাঠিন্য।

সাময়িক কোষ্ঠকাঠিন্যের উপসর্গ

  • মলত্যাগের সাধারণ রুটিন পরিবর্তন হয়ে যাবে।
  • শক্ত মলত্যাগ হবে।
  • মলত্যাগের সময় মলাশয়ে ব্যথা হবে।
  • মলত্যাগের সময় জোর প্রয়োগ করতে গিয়ে অনেক সময় ব্যয় হবে।
  • মলত্যাগ অল্প অল্প হতে পারে।
  • পেট ফুলে যেতে পারে।
  • পেটে ব্যথা হতে পারে।
  • কিছুক্ষণ পরপর বায়ু ত্যাগ হতে পারে।
  • খাওয়ার রুচি কমে যাবে।
  • দুশ্চিন্তা ও অবসাদগ্রস্ত মনে হতে পারে।
  • স্বাভাবিক কাজকর্মে ব্যাঘাত ঘটবে। 

সাময়িক কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগলে যেসব জটিলতা দেখা দিতে পারে

  • হেমোরয়েড বা পাইলসের সমস্যা দেখা দিতে পারে। পায়ুপথের আশেপাশের রক্তনালী সমূহে প্রদাহ হতে পারে এবং মলত্যাগ করার সময় পায়ুপথে রক্ত যেতে পারে। ব্যথা হতে পারে, পায়ু পথে চুলকানি দেখা দিতে পারে।
  • এনাল ফিস্টুলা দেখা দিতে পারে।
  • ইউরিনারি ইনকন্টিনেন্স/প্রসাবে অনিয়ম দেখা দিতে পারে।


কেন হয় সাময়িক কোষ্ঠকাঠিন্য? 

  • আঁশযুক্ত খাবার কম খাওয়া তথা শাক সবজি কম খাওয়া।
  • নিয়মিত মলত্যাগ না করা, মলত্যাগের প্রেসার আসলেও আটকে রেখে কাজ কর্ম করা।
  • নিয়মিত খাবার না খাওয়া।
  • পরিমিত ঘুম না যাওয়া, অবসাদগ্রস্ত থাকা।
  • আইবিএস এর সমস্যা থাকা।
  • মেডিসিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া যেমন ক্যালসিয়াম চ্যানেল ব্লকার, অ্যান্টি স্পাজমোডিক, অ্যান্টি ডায়েরিয়াল ড্রাগস, আয়রন ট্যাবলেট, এলুমিনিয়াম যুক্ত অ্যান্টাসিড ইত্যাদি।
  • দৈনিক অতিরিক্ত প্রোটিন খাওয়া যেমন অধিক পরিমাণে মাংস খেলে সাময়িক কোষ্ঠকাঠিন্যতা দেখা দিতে পারে।


দৈনিক প্রোটিনের পরিমাণ কতটুকু হওয়া চাই?
ইনস্টিটিউট অব মেডিসিন ইউএসএ'র দেওয়া তথ্য অনুযায়ী একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দৈনিক প্রোটিন চাহিদা হচ্ছে ১ গ্রাম/কেজি বডি ওয়েট। অর্থাৎ একজন মানুষের ওজন যদি ৬০ কেজি হয়ে থাকে, আর সে যদি ভারি কোনও কাজ না করে, তাহলে তার দৈনিক প্রোটিন দরকার পড়ে ৬০ গ্রাম। আর ভারি কাজ করলে আরও ৩০ গ্রাম বাড়বে, অর্থাৎ ৯০ গ্রাম প্রোটিন দরকার। এটা হচ্ছে স্বাভাবিক শারীরিক ক্রিয়া প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য প্রয়োজনীয় প্রোটিন।

তবে একজন সুস্থ মানুষ কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়া দৈনিক সর্বোচ্চ ২ গ্রাম/কেজি বডি ওয়েট করে প্রোটিন খেতে পারবে। সুতরাং একজন ৬০ কেজি ওজনের মানুষ দৈনিক সর্বোচ্চ ১২০ গ্রাম প্রোটিন খেতে পারবে কোনও পার্শপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই। এর চেয়ে বেশি খেলে ডায়রিয়া কিংবা কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে। প্রোটিনের উপাদান হচ্ছে মাংস, মাছ, ডিম ইত্যাদি।

এবার বুঝে নিই, ১২০ গ্রাম প্রোটিন খেতে পারলে কত গ্রাম মাংস খাওয়া যাবে? আমরা অনেকে মনে করি এক গ্রাম মাংস মানে এক গ্রাম প্রোটিন, যা ভুল ধারণা। আমেরিকার ইন্সটিটিউট অব মেডিসিনের তথ্য অনুযায়ী, ১০০ গ্রাম রান্না করা মাংসের মাঝে ২৬ গ্রাম প্রোটিন, ১০ গ্রাম ফ্যাট, ৬১-৬৩ গ্রাম পানি থাকে।

তার মানে, মাংস থেকে ২৬ গ্রাম প্রোটিন পেতে হলে ১০০ গ্রাম মাংসের প্রয়োজন, তথা ১ গ্রাম প্রোটিনের জন্য প্রায় ৪ গ্রাম মাংসের দরকার। যেহেতু একজন ৬০ কেজি ওজনের সুস্থ লাইট ওয়ার্কার মানুষের দৈনিক প্রোটিন চাহিদা হচ্ছে ৬০ গ্রাম, সুতরাং সে স্বাভাবিক মাংস থেকে সেই পরিমাণ প্রোটিন নিতে চাইলে ২৪০ গ্রাম মাংস খেলেই যথেষ্ট।

আবার ৬০ কেজি ওজনের মানুষ দৈনিক সর্বোচ্চ ১২০ গ্রাম প্রোটিন কিংবা ৪৮০ গ্রাম মাংস খেতে পারবে। তবে তা হতে হবে তিন বেলায় ভাগ করে অল্প অল্প করে। নাহলে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে।  আবার অনেকের ক্ষেত্রে ২০০ গ্রামের বেশি মাংস খেলেও কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে।

সাময়িক কোষ্ঠকাঠিন্য এড়াতে কী করবেন? 

  • প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমান শাক সবজি খেতে হবে।
  • পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে।
  • ফাস্টফুড জাতীয় খাবার কম খেতে হবে।
  • অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার পরিহার করতে হবে।
  • অতিরিক্ত মাংস খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
  • দৈনিক ১০০-১৫০ গ্রামের চেয়ে বেশি মাংস না খাওয়াই ভালো।
  • নিয়মিত ইসুবগুলের শরবত খেতে হবে।
  • সম্ভব হলে প্রতিদিন আপেল খেতে পারেন। আপেলে পর্যাপ্ত ফাইবার রয়েছে।
  • নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে এবং পর্যাপ্ত ঘুমাতে হবে।

যেদিন বেশি পরিমাণে মাংস খাওয়া হবে, সেদিন মাংসের সাথে শাক সবজি, গাজর, শসা ইত্যাদি খেতে হবে। সকাল, দুপুর, রাত্রে এক গ্লাস পানিতে দুই টেবিল চামচ ইসুবগুলের ভুষি মিশিয়ে শরবত খেতে পারেন। এতে করে কোলনের মধ্যে কিছু পরিমাণ পানি রিটেনশন হবে এবং মল তরল থাকবে। । যারা নিয়মিত ইসুবগুলের শরবত খান, তাদের কোষ্ঠকাঠিন্যের প্রবণতা ৯০% কমে যায়।

ঈদ উৎসবে পরিমিত এবং সুষম খাবার খান। হঠাৎ করে অতিরিক্ত পরিমাণে খেয়ে ফেলবেন না। সবার উৎসব আনন্দময় হোক।

লেখক: সিইও, সেন্টার ফর ক্লিনিক্যাল এক্সিলেন্স অ্যান্ড রিসার্চ