রাজধানীর একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন বেলাল আহমেদ। থাকেন ক্যান্টনমেন্ট এলাকার মানিকদীতে। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘আমি প্রতিদিনই এই পথে যাওয়া-আসা করি। এখানে অনেক দিন ধরে দেখছি জেব্রা ক্রসিংয়ের খুব খারাপ অবস্থা। মার্কিংটা মুছে গেছে। এই বিষয়গুলো কেউ দেখেন না।’
এই মার্কিং না থাকায় কী ধরনের সমস্যা হচ্ছে—এমন প্রশ্নের জবাবে বেলাল আহমেদ বলেন, ‘মার্কিং না থাকায় চালক বুঝবে না এখানে জেব্রাক্রসিং আছে কিনা, তাই গাড়িও থামবে না। গাড়ি না থামলে পথচারীরা কীভাবে পারাপার হবেন? এতে ঝুঁকি নিয়ে হাত উঁচু করে ইশারা দিয়ে আমাদের পারাপার হতে হয়।’
প্রায় একই অভিযোগ রমিজ উদ্দিনের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আসওয়ারেরও। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘অনেক সময় আমরা একা একা পারাপার হই। ওই সময় যানবাহনগুলো থামতে চায় না। এতে আমাদের পারাপারে সমস্যা হয়। তবে, প্রায় সড়ক পারাপারে ট্রাফিক পুলিশ ও সেনা সদস্যরা আমাদের সহযোগিতা করেন।’
দক্ষিণখানের মোল্লারটেক এলাকায় থাকেন আবদুল বাকি। শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী তিনি। বাস থেকে নেমে সড়ক পার হয়ে তাকে কলেজে ঢুকতে হয়। সড়ক পারাপারের বিষয়ে এই শিক্ষার্থী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কলেজে যেতে হলে বাস থেকে এমইএস নেমেই আমার সড়ক পার হতে হয়। সড়কে জেব্রা ক্রসিং বরাবর দুইপাশেই একজন ট্রাফিক পুলিশ ও একজন সেনা সদস্য থাকেন। তারা গাড়ি থামিয়ে আমাদের পার করিয়ে দেন।’
এই শিক্ষার্থী আরও বলেন, ‘কলেজ শুরুর আগে ও ছুটির সময় প্রতিদিনই শিক্ষার্থীরা জেব্রাক্রসিং দিয়ে পারপার হন। এজন্য সড়কের দুই পাশে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরাও থাকেন। তারা আমাদের সড়ক পারাপারে সহযোগিতা করেন।’
ঢাকার বিমানবন্দর সড়কে এমইএস বাসস্টপে দায়িত্বরত ট্রাফিক সার্জেন্ট টিটন দেবনাথ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এমইএস স্পটে ট্রাফিক পুলিশের ৪ জন সদস্য প্রতিদিনই নিয়োজিত থাকেন।’ জেব্রাক্রসিং মার্কিং মুছে যাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘অনেক দিন হয়েছে, সড়কে যানবাহনের চাকার ঘষায় রঙ উঠে গেছে। তবে সড়কের বিভিন্ন সাইন ও সিগন্যাল (চিহ্ন) আঁকা বা তৈরির বিষয়টি দেখে রোড অ্যান্ড হাইওয়ে বিভাগ।’
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ২৯ জুলাই দুই বাসের পাল্লাপাল্লিতে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সামনে বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহত হন। তারা হলেন শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র আবদুল করিম রাজু ও একই কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী দিয়া খানম মিম। আহত হয়েছিলেন আরও ১০-১২ জন শিক্ষার্থী। এতে শহীদ রমিজ উদ্দিন কলেজসহ আশপাশের কয়েকটি স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে। শুরু হয় নিরাপদ সড়ক আন্দোলন। রাজধানীসহ সারাদেশে বিক্ষোভ ও আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। রাস্তায় নেমে আসে লাখ লাখ শিক্ষার্থী।