বাবুল আক্তার খুব কম সময়েই তার কাজের জন্য সাধারণ মানুষের কাছে যেমন জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন, ঠিক তেমনই উপকূলের দস্যু, কক্সবাজার- চট্টগ্রামের জঙ্গি সন্ত্রাসীদের জন্য তিনি আতঙ্কের অন্য নাম। হঠাৎ তার স্ত্রীকে হত্যার পর সবার মনেই প্রশ্ন, তবে কী তার মতো নিষ্ঠাবান পুলিশ কর্মকর্তার প্রত্যয় ভেঙে ফেলতেই তার পরিবারের ওপর হামলা করা হলো?
রবিবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে চট্টগ্রামে বিভিন্ন জঙ্গিবিরোধী অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানমকে গুলি ও ছুরিকাঘাতে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। ছেলেকে স্কুলের বাসে তুলে দেওয়ার জন্য তিনি জিইসি মোড়ে দাঁড়িয়েছিলেন। এ সময় মোটরসাইকেলে আসা তিন দুর্বৃত্ত তাকে ছুরিকাঘাত ও গুলি করে পালিয়ে যান।
২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর রামুর বৌদ্ধমন্দিরে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় সরকারি তদন্ত কমিটির সদস্য ছিলেন বাবুল। তদন্ত অনুসারে হামলার ইন্ধনদাতা হিসেবে আরাকানি নেতা আবু ছালেহকে গ্রেফতারে ভূমিকা রেখেছিলেন তিনি। এরও আগে থেকেই তার ওপর নানা ধরনের হুমকি থাকলেও তিনি তার কাজটাকেই একমাত্র লক্ষ্য করে রেখেছেন জীবনে।
২০০৯ সালে নগরীর টাইগার পাস এলাকায় এক সন্ত্রাসী ধরতে গিয়ে অস্ত্রের মুখোমুখি হওয়ার পর প্রাণের ভয় না করে আসামিকে আটক করতে সফল হয়েছিলেন সেই সময়ের তরুণ সহকারী পুলিশ কমিশনার বাবুল আক্তার। এ কারণে তিনি পেয়েছিলেন রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক বা পিপিএম (সাহসিকতা) ২০০৯।
উখিয়া মডেল প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক মেধু বড়ুয়া ফেসবুকে লিখেছেন, সরকারের কাছে সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে অবিলম্বে সঠিক বিচার দাবি করছি। অন্যথায় বাংলাদেশের সব সরকারি কর্মচারী যারা দৃঢ় সততার সঙ্গে কাজ করেন, আমরা তাদেরকেও হারাবো। এসপি বাবুল আক্তার আমাদের গর্ব।
‘পুলিশ আমাদের গর্ব’ ফেসবুক পেজে লেখা হয়েছে, দেশের জনগণের নিরাপত্তা দিতে সততার সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে জীবন দিতে হলো পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার স্যারের স্ত্রীকে।
বাবুল আক্তারের সহকর্মী শাহাদাত হোসেন ফেসবুকে বাবুল আক্তারকে তার সততার জন্য স্যালুট জানিয়ে লিখেছেন, শ্রদ্ধেয় পুলিশ সুপার জনাব বাবুল আক্তার স্যার আমাদের পুলিশ বাহিনীর গর্ব। তিনি ১০০% ফেয়ার ও দক্ষ একজন পুলিশ অফিসার। তার স্ত্রীর হত্যাকারীরা অত্যন্ত ভীরু, কাপুরুষ ও জঘন্যতম নর পিশাচ।
বাবুল আক্তার শুরু থেকে জঙ্গি, সাইবার ক্রাইম, মাদক ও উপকূলের অপরাধীদের কাছে আতঙ্কের নাম। ২০১৫ সালে অক্টোবর চট্টগ্রামের কর্ণফুলী থানার খোয়াজনগর এলাকার একটি ভবনে জেএমবি আস্তানায় অভিযান চালাতে গিয়ে তিনি গ্রেনেড হামলা থেকে অল্পের জন্য রক্ষা পান। এরপরও সেখান থেকে আটক করেন জেএমবি চট্টগ্রামের সামরিক শাখার প্রধান মোহাম্মদ জাবেদকে।
জঙ্গিবাদ ও অপরাধ দমনে সাফল্যের স্বীকৃতি হিসেবে বাবুল আক্তার পেয়েছেন রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক পিপিএম (সেবা) ২০০৯, পিপিএম (সাহসিকতা) ২০১০ সালে আইজিপি ব্যাজ, ২০১১ সালে পুলিশের সর্বোচ্চ মর্যাদাশীল পুরস্কার বাংলাদেশ পুলিশ মেডেল (সাহসিকতা)। চারবার অর্জন করেছেন চট্টগ্রাম রেঞ্জের সেরা সহকারী পুলিশ সুপারের মর্যাদা।
- একইদিনে পুলিশের স্ত্রী ও খ্রিস্টান ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে হত্যা
- আতঙ্কিত মিতুর ছেলে
- সন্দেহের তীর জঙ্গিদের দিকে
- এ হত্যার পেছনে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
/এপিএইচ/আপ-এজে