নিপাহ ভাইরাসে ৫ জনের মৃত্যু

চলতি বছরে নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দেশে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। এই ভাইরাসে মৃত্যুর হার ৭১ শতাংশ। আর সারা দেশজুড়েই ছড়িয়েছে এই ভাইরাস। বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) নিপাহ ভাইরাসের বিস্তার এবং ঝুঁকি বিষয়ক মতবিনিময় সভায় সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান থেকে এসব তথ্য জানানো হয়।

অনুষ্ঠানে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক তাহমিনা শিরীন নিপাহ ভাইরাস নিয়ে প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন।

সেখানে তিনি বলেন, বিশ্বে মালয়শিয়ায় প্রথম নিপাহ ভাইরাস শনাক্ত হয়। সেটা ছড়িয়েছিল শূকরের মাধ্যমে। পরবর্তীকালে ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর, ভারত এবং বাংলাদেশেও নিপাহতে মানুষের মৃত্যু হয়েছে। তবে বাংলাদেশে প্রথম নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয় ২০০১ সালে এবং ২০০৬ সাল থেকে আইইডিসিআর নিপাহ ভাইরাস নিয়ে কাজ শুরু করে আইসিডিডিআরবি’র সহযোগিতায়। তখন থেকে বাংলাদেশে এখনও পর্যন্ত ৩৪৩ জন রোগী পাওয়া গেছে। নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুহার ৭১ শতাংশ। তবে যারা বেঁচে থাকেন তাদের দীর্ঘমেয়াদি নানা ধরনের স্নায়ুজনিত রোগ দেখা দেয়।

তাহমিনা শিরীন জানান, চলতি বছরে এখনও পর্যন্ত নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন পাঁচজন এবং তাদের সবাই মারা গেছেন। এই পাঁচজনের মধ্যে দুজন মানিকগঞ্জের, আর খুলনা দাকোপ, নওগাঁ এবং শরীয়তপুরের নড়িয়ায় মারা গেছেন একজন করে।

২০২৩ সালের তথ্য তুলে ধরে তাহমিনা শিরীন বলেন, গত বছর এক মায়ের খেঁজুরের রস খাওয়ার ইতিহাস ছিল এবং তিনি তার সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়াতেন। তারা দুজনই নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হন। অর্থাৎ এখানে দেখা যাচ্ছে, নিপাহ মায়ের বুকের দুধের মাধ্যমেও ছড়ায়। এতদিন দিন পর্যন্ত খেঁজুরের রস, পাখির খেয়ে রাখা ফল এবং মানুষ থেকে মানুষে ছড়ানোর কথা আমরা জেনেছি। তবে গত বছর দেখা গেলো— যে শিশুটির মৃত্যু হয়েছে সে তার মা থেকে সংক্রমিত ছিল। শিশুটি মারা গেলেও মা বেঁচে আছেন এখনও।

আইইডিসিআর জানায়, ২০২৩ সালে সবচেয়ে বেশি নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে নওগাঁ থেকে পাঁচজন, রাজবাড়ি থেকে চারজন, রাজশাহী, পাবনা, নাটোর ও নরসিংদী থেকে পাওয়া যায় একজন করে। তবে এখনও পর্যন্ত দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে ৩৪ জেলায় নিপার সংক্রমণ পাওয়া গেছে। ধীরে ধীরে এটা বাড়ছে।

আইইডিসিআরের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এ এস এম আলমগীর অনুষ্ঠানে বলেন, পুরো দেশই এখন নিপাহর ঝুঁকিতে রয়েছে।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, নিপা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এখনও পর্যন্ত মৃত্যুহার বেশি হলেও বেঁচে আছেন ৮৮ জন। তাদের মধ্যে ৫২ জন আইইডিসিআরের নিয়মিত ফলোআপে রয়েছেন।

চিকিৎসকদের মতে, নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে যখন কেউ আসে, সেটা পরিবারের সদস্য অথবা  চিকিৎসকের কাছ থেকেও নিপা ভাইরাসে সংক্রান্ত হয়। এই হার ২৮ শতাংশ বলে জানান তাহমিনা শিরীন।

তাই নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দেওয়ার সময় অবশ্যই পরিবারের সদস্য এবং চিকিৎসকসহ অন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। আর স্বাস্থ্যবিধি কী এবং স্বাস্থ্যবিধি মানার সুবিধা কী—  সেটা করোনা মহামারী আমাদের শিখিয়েছে, মন্তব্য করে আইইডিসিআর পরিচালক বলেন, মাস্ক এবং গ্লাভস পরা, বারবার হাত ধোয়া সাবান পানি দিয়ে, এগুলো খুবই পরিচিত টার্ম আমাদের জন্য।

তাহমিনা শিরীন বলেন, ‘শীতের সময় অনেকেই খেঁজুরের কাঁচা রস খেতে অনেকেই পছন্দ করেন। কিন্তু আমাদের দেশে নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার প্রধান কারণই এই কাঁচা রস। রস সংগ্রহ করার জন্য যখন খেঁজুর গাছ কাটা হয়, তখন সেখানে বাদুড় বসে। বাদুড়ের মুখের লালা, প্রশ্রাবের মাধ্যমে নিপাহ ভাইরাস রসের সঙ্গে মিশে যায়। সেই রস যখন মানুষ খায়, তখন তিনি নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হন। তাই কোনোভাবেই এই রস খাওয়া যাবে না।’