রাজধানীর গ্রিন রোডে কমফোর্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও নার্সিং হোম হাসপাতালে ‘ভুল’ চিকিৎসায় মারা গেছেন মিনিস্টার-মাইওয়ান গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক মো. সামসুদ্দোহা শিমুল বলে অভিযোগ উঠেছে। অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির দুজন চিকিৎসকসহ চার জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে তার পরিবার। বুধবার (২১ আগস্ট) ঢাকার কলাবাগান থানায় এই মামলা করেন সামসদ্দোহা শিমুলের ভাগনে রিয়াজ ইসলাম। মামলায় দুজন চিকিৎসককে গ্রেফতার করা হলেও বর্তমানে তারা জামিনে আছেন বলে জানিয়েছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা।
মামলার আসামিরা হচ্ছেন— কমফোর্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও নার্সিং হোম হাসপাতালের চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. জাহীর আল আমিন, অ্যানেস্থেশিওলোজিস্ট ইফতেখারুল কাওছার, হাসপাতালের চেয়ারম্যান কবির আহামেদ ভূঁইয়া এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সামিয়া ইসলাম।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, নাকের হাড় বেড়ে যাওয়া সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে ২০ আগস্ট বিকালে সামসুদ্দোহা কমফোর্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও নার্সিং হোম হাসপাতালে চিকিৎসক জাহীর আল আমিনের অধীন ভর্তি হন। ওই দিন রাত সোয়া ১১টার দিকে তাকে নাকের হাড় অপসারণের জন্য অস্ত্রোপচার কক্ষে নেওয়া হয়। রাত সোয়া একটার দিকে জানানো হয়, সামসুদ্দোহা মারা গেছেন।
সামসুদ্দোহা শিমুলের মৃত্যুর ঘটনায় বিচারের দাবি জানিয়েছে মিনিস্টার-মাইওয়ান গ্রুপের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। মিনিস্টার-মাইওয়ান গ্রুপের সব সদস্যসহ তার পরিবার সঠিক তদন্তের মাধ্যমে অভিযুক্ত চিকিৎসকসহ দোষী সবাইকে আইনের আওতায় এনে বিচার করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানান।
সামসুদ্দোহার স্ত্রী সায়মা সুলতানা জানান, সামসুদ্দোহ শিমুল একজন সুস্থ ও সবল মানুষ ছিলেন। একটি ছোট অস্ত্রোপচার করতে গিয়ে তাকে (সামসুদ্দোহা) মেরে ফেলা হয়েছে। তিনি এই ‘হত্যার’ বিচার দাবি করেন।
চিকিৎসক জাহির আল আমিন ২০২২ সাল পর্যন্ত একটি বেসরকারি হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে ছিলেন। ২০২২ সালের ২০ নভেম্বর থেকে এক বছরের জন্য তার নিবন্ধন স্থগিত করে বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি)। ভুল চিকিৎসা দেওয়া ও এক নারী রোগীর চিকিৎসায় অবহেলার দায়ে এক বছরের জন্য নিষিদ্ধ করা হয় তাকে। এরপর তাকে ওই হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।
মোমেনা হক মুন নামে একজন নারী রোগীর স্বামী জিয়াউর রহমান ভুঁইয়া বিএমডিসিতে ভুল অপারেশন, বাম কানের পরিবর্তে ডান কানের অপারেশন, রোগীর মুখের আকৃতি বাকা হয়ে যাওয়ার ও রোগীর অভিভাবককে মিথ্যা তথ্য দেওয়ার বিষয় উল্লেখ করে ২০২০ সালের ১ জুন অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে কাউন্সিল তদন্ত করে জানতে পারে যে, চিকিৎসায় ডা. জাহির আল আমিনের যথেষ্ট অবহেলা ও গাফিলতি ছিল । এর পরিপ্রেক্ষিতে ওই চিকিৎসককে ৭ দিনের মধ্যে ব্যাখ্যা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। তিনি ব্যাখ্যা জমা দিলেও তার ব্যাখ্যা সন্তোষজনক না হওয়ায় এক বছরের জন্য লাইসেন্স স্থগিত করে বিএমডিসি। এ সময়ের মধ্যে তিনি কোথাও প্র্যাকটিস করতে পারবেন না এবং নিজেকে চিকিৎসক হিসেবে পরিচয় দিতে পারবেন না বলে জানায় বিএমডিসি।
বিএমডিসি’র তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, চিকিৎসক অপারেশনের আগে ব্যবস্থাপত্রে ডান পাশের প্যারোটিড সোয়েলিং সম্পর্কে কোনও তথ্য উল্লেখ করেননি। ব্যবস্থাপত্রে শুধুমাত্র বাম পাশের প্যারোটিড সোয়েলিংয়ের এফএনএসিসহ পরীক্ষা- নিরীক্ষা উল্লেখ আছে।
এছাড়া অপারেশনের সময় চিকিৎসকের ভাষ্যমতে, বাম পাশের প্যারোটিড গ্ল্যান্ডের অপারেশন আগে না করে শনাক্তকৃত আইডেন্টিক্যাল টিউমার অব রাইট প্যারোটিড গ্ল্যান্ডের অপারেশন করেন। কারণ হিসেবে চিকিৎসক অপারেশনের সময় টেবিলে তাৎক্ষণিকভাবে ডানপাশে টিউমার শনাক্তের কথা উল্লেখ করেন। রোগী বা রোগীর অভিভাবকের সম্মতি ছাড়া তাৎক্ষণিকভাবে শনাক্তকৃত টিউমারের অপারেশন তিনি আগে করেন।
তাৎক্ষণিকভাবে শনাক্তকৃত ডান পাশের প্যারোটিড গ্ল্যান্ডের অপারেশনকৃত কথিত টিউমারের হিস্টোপ্যাথলজি রিপোর্ট তদন্ত কমিটি পায়নি।
তবে বিএমডিসি’র সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে রিট করেন ডা. আল আমিন। সেটি এখনও আপিল বিভাগে বিচারাধীন আছে।