রাজধানীর মোহাম্মদপুরের গজনবী রোডে অবস্থিত মুক্তিযোদ্ধা টাওয়ার-১। ১৫ তলা এই টাওয়ারের অর্ধেক ঢেকে আছে বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ডে। খোঁজ নিয়ে জানা গেলো, এই ভবনটিতে রয়েছে ছয়টি বেসরকারি হাসপাতাল। কোনও হাসপাতালে ১০ বেড, আবার কোনোটার আছে ২০ বেড। একটি হাসপাতালে শুধু অপারেশন থিয়েটার ভাড়া দেওয়া হয়। হাসপাতাল ছাড়াও এই ভবনে আছে ব্লাড ট্রান্সফিউশন সেন্টার, ফার্মেসি, হেয়ারিং সেন্টারসহ আরও কয়েকটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। অন্যান্য রোগে আক্রান্তরা চিকিৎসা পেলেও করোনা রোগীদের চিকিৎসা এখানে হয় না বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
যমুনা জেনারেল হাসপাতালের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাদের হাসপাতালে আছে মাত্র ২০টি বেড এবং আইসিইউ সুবিধা। তবে করোনার কারণে আইসিইউ সেবা বন্ধ রেখেছেন তারা। এখানে মূলত অর্থোপেডিক সমস্যার রোগীরাই আসেন চিকিৎসা নিতে। হাসপাতালটি প্রায় ৩ বছর ধরে চালু রয়েছে। এছাড়া অপারেশন থিয়েটার সুবিধাও আছে এখানে।
নাম প্রকাশ না করে হাসপাতালের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা জানান, এখানে কম খরচে রোগীদের সেবা দেওয়া হয়। বেড ভাড়া প্রতিদিন ১২০০ টাকা। হাসপাতালের অনুমোদন আছে কিনা— প্রশ্নে এই কর্মকর্তা বলেন, জুন মাসে মেয়াদ শেষ হয়েছে। আমরা আবেদন করেছি কিন্তু এখনও পাইনি।
যমুনা জেনারেল হাসপাতালের সঙ্গে একই ফ্লোরে রয়েছে রয়্যাল মাল্টিস্পেশালিটি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। এখানেও রোগীদের যাবতীয় টেস্টের পাশাপাশি চিকিৎসার ব্যবস্থা আছে। তারাও কয়েকটি ফ্লোরের এক-একটি অংশ ভাড়া নিয়ে হাসপাতাল পরিচালনা করছেন। এই হাসপাতালের প্রধান শাখা বাবর রোডে বলে জানান দায়িত্বরত কর্মকর্তারা। মুক্তিযোদ্ধা টাওয়ারে তাদের দ্বিতীয় ইউনিট।
পঞ্চম তলা থেকে নেমে চতুর্থ তলায় গিয়ে দেখা যায়, সেখানে একটি ফ্লোর-জুড়ে আছে ঢাকা হেলথ কেয়ার হাসপাতাল। এই হাসপাতালে ফার্মেসি, ল্যাবরেটরি টেস্ট এবং আইসিইউ সুবিধা আছে। হাসপাতালটির কর্মকর্তারা জানান, কম খরচেই চিকিৎসা সেবা পান এখানে আগত রোগীরা। তবে আইসিইউ সুবিধা যাদের লাগে, তাদের প্রতিদিন ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা খরচ হয় বলে জানান তারা।
হেলথ কেয়ার হাসপাতালের ম্যানেজার লুৎফর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এই ভবনের ভাড়া তুলনামূলকভাবে কম হওয়ায় কম খরচে হাসপাতাল পরিচালনা করা যায়। এখানে যে পরিমাণ জায়গা আছে, অন্যখানে তা ভাড়া নিলে ৪-৫ গুণ বেশি টাকা লাগতো।’
তবে এসব হাসপাতালে কর্মরত কয়েকজন জানান, মুক্তিযোদ্ধা টাওয়ারে হাসপাতাল অনেকটা ব্যাঙের ছাতার মতো হয়ে গেছে। হাসপাতালগুলোতে ভর্তি রোগীর সঙ্গে স্বজনদের থাকার তেমন কোনও ব্যবস্থা নেই। দোকানের জন্য বরাদ্দ রাখা ফ্লোরে রোগীর স্বজনরা রাত কাটান।
ভবনের তৃতীয় তলায় লাইফ কেয়ার জেনারেল হাসপাতাল। তারা মূলত অপারেশন থিয়েটার সাপোর্ট দিয়ে থাকেন। লাইফ কেয়ারের মালিক জানান, অপারেশন থিয়েটারের চার্জ খুবই কম রাখা হয়। এখানে কোনও রোগীর এপেন্ডিসাইটিস অপারেশন সবমিলিয়ে খরচ পড়ে ১৭ হাজার টাকার মতো। তাছাড়া এই হাসপাতালের ১০টি বেডের অনুমোদন আছে বলেও জানান তিনি।
তৃতীয় তলায় আরও দুইটি হাসপাতালের ইউনিট রয়েছে। একটি হচ্ছে রয়্যাল মাল্টিস্পেশালিটি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং রেমেডি কেয়ার হাসপাতাল লিমিটেড। এছাড়া দ্বিতীয় তলার ফ্লোরে আছে প্রাইম হাসপাতাল। তবে এসব হাসপাতালের কেউই এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হয়নি।