ইলন মাস্ক ‘শিশুদের দল’ গড়ার পরিকল্পনায় কাজ করছেন। এমনকি তিনি তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে সম্ভাব্য মাতাদের খুঁজেছেন। দ্রুত এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে সারোগেট মায়ের ব্যবহারের প্রস্তাবও দিয়েছেন বলে দাবি করেছে দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের একটি প্রতিবেদন। ভারতের সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি এ খবর জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই প্রচেষ্টার ফলে মাস্কের চারপাশে সৃষ্টি হয়েছে এক ধরনের ‘হারেম নাটক’, যেখানে তিনি শিশুদের মায়েদের আর্থিক প্রণোদনা ও কঠোর গোপনীয়তা চুক্তির মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
সেপ্টেম্বর মাসে মাস্কের ১৩তম সন্তানের জন্ম দেন ২৬ বছর বয়সী রক্ষণশীল ইনফ্লুয়েন্সার অ্যাশলি সেন্ট ক্লেয়ার। তিনি জানান, তিনি মাস্কের কাছ থেকে একাধিক বার্তা পেয়েছেন, যেখানে মাস্ক তার ‘বড় একটি সন্তানের দল’ গড়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন।
একটি বার্তায় মাস্ক তাকে বলেন, ‘আমি তোমাকে আবার গর্ভবতী করতে চাই’।
টেসলার সিইও মাস্ক এখন পর্যন্ত চারজন পরিচিত নারীর সঙ্গে অন্তত ১৪টি সন্তানের বাবা হয়েছেন। এদের মধ্যে রয়েছেন সেন্ট ক্লেয়ার, গায়িকা গ্রাইমস, নিউরালিঙ্ক নির্বাহী শিভন জিলিস এবং তার প্রাক্তন স্ত্রী জাস্টিন মাস্ক।
তবে মাস্কের ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো বিশ্বাস করে, এই সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাপানের কিছু কর্মকর্তার অনুরোধে মাস্ক একটি পরিচিত জাপানি নারীর কাছে নিজের শুক্রাণু সরবরাহ করেছেন।
শিভন জিলিস, যিনি মাস্কের চার সন্তানের মা, তার একটি ‘বিশেষ মর্যাদা’ আছে বলেও দাবি করা হয়। জিলিসকে মাস্কের সঙ্গে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক, যেমন: ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সাক্ষাৎ ও বিশ্বনেতাদের অংশগ্রহণে একটি অভিষেক-পূর্ব নৈশভোজেও দেখা গেছে।
সেন্ট ক্লেয়ার বলেন, যখন তিনি প্রসব যন্ত্রণায় ছিলেন, মাস্কের ঘনিষ্ঠ সহকারী জ্যারেড বার্চাল তার কাছে একটি প্রস্তাব নিয়ে আসেন—যদি তিনি সন্তানের জন্মসনদে মাস্কের নাম না লেখেন এবং বাবার পরিচয় গোপন রাখেন, তাহলে তাকে ১.৫ কোটি ডলার এবং প্রতি মাসে ১ লাখ ডলার করে সহায়তা দেয়া হবে।
তিনি গোপনীয়তার শর্তে রাজি না হলেও জন্মসনদে মাস্কের নাম লেখেননি। পরে যখন ফেব্রুয়ারিতে তিনি তাদের সম্পর্ক প্রকাশ্যে আনেন, তখন সেই সহায়তা ৪০ হাজার ডলার করে কমে যায় এবং পরবর্তীতে ২০ হাজার ডলারে নামিয়ে আনা হয়।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, মাস্ক আরও কয়েকজন নারীর সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন—যেমন ক্রিপ্টো ইনফ্লুয়েন্সার টিফানি ফং। তাকে মাস্ক সন্তান ধারণের প্রস্তাব দেন। ফং এই বার্তাগুলো প্রকাশ করে দিলে মাস্ক তাকে আনফলো করে দেন।
সেন্ট ক্লেয়ারসহ একাধিক নারী দাবি করেন, মাস্কের টিম গোপনীয়তা চুক্তি ও অর্থ ব্যবহার করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখে। তার সহযোগী বার্চাল এই অভ্যন্তরীণ গোষ্ঠীকে ‘মেরিটোক্র্যাসি’ হিসেবে বর্ণনা করেন, যেখানে যারা “ভালো কাজ” করে, তারাই সুযোগ-সুবিধা পায়।
মাস্ক বারবার বলেছেন, জন্মহার কমে যাওয়ার ফলে মানবসভ্যতা বিপদে পড়বে এবং স্মার্ট মানুষদের আরও বেশি সন্তান নেয়া উচিত—এই বিশ্বাস থেকেই তার এই প্রচেষ্টা।
দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল আরও জানায়, মাস্কের জীবন আইনি ও আর্থিক সুরক্ষায় ঘেরা। তার সঙ্গে গ্রাইমসের তিনটি সন্তান রয়েছে। তিনি জানান, বাচ্চাদের অভিভাবকত্ব নিয়ে লড়াই তাকে আর্থিকভাবে ভেঙে দিয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে সন্তানদের একটি চিকিৎসাজনিত জরুরি পরিস্থিতিতে তিনি মাস্ককে এক্সে এসে প্রকাশ্যে বার্তা দেন।
ফোর্বস অনুযায়ী, ইলন মাস্ক বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি। তার মোট সম্পদ প্রায় ৩৬৭.৯ বিলিয়ন ডলার।
তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনে ‘সরকারি দক্ষতা বিভাগে’র প্রধান এবং মন্ত্রিসভায় একজন উপদেষ্টা হিসেবেও কাজ করছেন।