গাজায় হামাসবিরোধী বিক্ষোভ জোরালো হচ্ছে, নিয়ন্ত্রণ কমছে গোষ্ঠীটির

প্রায় দুই দশক ধরে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকা শাসনকারী হামাসের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ ক্রমেই তীব্র হয়ে উঠছে। গাজার বিভিন্ন প্রান্তে এখন আর কোনও রাখঢাক না রেখেই জনগণ গোষ্ঠীটির বিরুদ্ধে স্লোগান দিচ্ছে। 

টেলিগ্রামে ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিওতে একদল বিক্ষোভকারী চিৎকার করে বলছেন, ‘হামাস, চলে যাও!’ আরেকটি ভিডিওতে তারা বলছেন, ‘হামাস মানেই আবর্জনা!’ 

গাজার বাসিন্দা, আইনজীবী ও সাবেক রাজনৈতিক বন্দি মৌমন আল-নাতুর বলেন, বিশ্ব গাজাকে হামাস আর হামাসকে গাজা হিসেবে দেখে। অথচ আমরা হামাসকে নির্বাচিত করিনি, ওরা জোর করে শাসন করছে এবং আমাদের ভাগ্য তাদের সঙ্গে জুড়ে দিয়েছে।

হামাসের শাসনের বিরুদ্ধে মুখ খোলা গাজায় অত্যন্ত বিপজ্জনক। মার্চের শেষে ওয়াশিংটন পোস্টে প্রকাশিত এক নিবন্ধে আল-নাতুর লিখেছেন, হামাসকে সমর্থন মানেই ফিলিস্তিনিদের মৃত্যুকে সমর্থন করা, স্বাধীনতাকে নয়।

সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে গাজায় হামাসবিরোধী বিক্ষোভে অংশ নেওয়া ২২ বছর বয়সী ওদাই আল-রুবাইকে অপহরণের পর মারাত্মক নির্যাতনে হত্যা করা হয়। তার পরিবার হামাসকে দায়ী করেছে। ফিলিস্তিনি মানবাধিকার কমিশন এই ঘটনাকে ‘বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড’ হিসেবে বর্ণনা করেছে।

রুবাই মৃত্যুর আগে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা এক ভিডিওতে বলেছিলেন, ‘গাজা এখন ভূতুড়ে শহর, আমি রাস্তায় আটকে পড়েছি, জানি না কোথায় যাব। হামাস আমাদের ধ্বংস করে দিয়েছে।’

হামাসের বিরুদ্ধে বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলার অভিযোগ নতুন নয়। গত বছর হামাসবিরোধী বক্তব্যের জন্য আমিন আবেদকে মুখোশধারীরা পিটিয়ে হাড় ভেঙে ফেলে। তিনি বর্তমানে দুবাইয়ে চিকিৎসাধীন। সেখান থেকেই তিনি আন্দোলনে সক্রিয়।

আবেদ বলেন, হামাস আগের মতো শক্তিশালী নেই। ওরা এখন শুধু ভয় দেখিয়ে মানুষ দমাতে চায়। কিন্তু মানুষ আর আগের মতো ভয় পায় না।

উত্তর গাজার বেইত লাহিয়ায় সম্প্রতি হামাস যোদ্ধারা এক বৃদ্ধের বাড়ি থেকে রকেট ছোড়ার চেষ্টা করলে প্রতিবেশীরা প্রতিবাদ করেন। গুলিবর্ষণে কয়েকজন আহত হলেও স্থানীয়রা হামাস সদস্যদের বাড়ি থেকে বের করে দেন। একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘আমরা বলেছি—আমরা আর ধ্বংস চাই না, অস্ত্র চাই না।’

তবে এই ধরনের প্রতিরোধ এখনও ঝুঁকিপূর্ণ। গাজা শহরে এক বিক্ষোভকারীকে গুলি করে হত্যা করেছে হামাস।

এক দশকেরও বেশি সময়ের ইসরায়েলি অবরোধ, তিনটি বড় যুদ্ধ এবং সম্প্রতি ধ্বংসাত্মক হামলার মুখে গাজাবাসী এখন আর শুধু ইসরায়েল নয়, বরং হামাসকেও দায়ী করছে তাদের দুর্দশার জন্য।

বিক্ষোভ এখনও বিদ্রোহ নয়, তবে অনেকের মতে হামাসের ‘লৌহ মুষ্টি’ ধীরে ধীরে দুর্বল হচ্ছে।

সূত্র: বিবিসি