ইয়েমেনের রস ইসা জ্বালানি টার্মিনালে যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক বিমান হামলায় অন্তত ৭৪ জন নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে হুথি-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। লোহিত সাগর উপকূলে অবস্থিত এই টার্মিনালে বৃহস্পতিবার চালানো হামলাকে চলমান মার্কিন অভিযানের সবচেয়ে প্রাণঘাতী বলে বর্ণনা করছে তারা। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আনিস আল-আসবাহি জানান, প্রাথমিক হিসাবে হামলায় আরও ১৭১ জন আহত হয়েছেন। এখনও নিখোঁজদের সন্ধানে উদ্ধার তৎপরতা চালানো হচ্ছে।
হুথিদের বিরুদ্ধে হামলা আরও জোরদারের নির্দেশ দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। জানুয়ারিতে দায়িত্ব গ্রহণের পর মধ্যপ্রাচ্যে এটি যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় সামরিক অভিযান বলে জানিয়েছে ওয়াশিংটন। হুথিদের বিরুদ্ধে হামলা চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যতক্ষণ না তারা লোহিত সাগরের রুটে বাণিজ্যিক জাহাজে হামলা বন্ধ করছে।
মার্কিন সেনাবাহিনীর দাবি, হামলার লক্ষ্য ছিল হুথিদের অর্থনৈতিক সক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্ত করা। ইয়েমেনি সূত্র বলছে, রস ইসা টার্মিনালে জ্বালানি আমদানির পাশাপাশি বড় ধরনের সামরিক অবস্থানও রয়েছে।
নিহতদের মধ্যে সাফার অয়েল কোম্পানি ও ইয়েমেন পেট্রোলিয়াম কোম্পানির কর্মীরাও রয়েছেন বলে জানিয়েছে স্থানীয় সূত্র। এই প্রতিষ্ঠান দুটি যথাক্রমে টার্মিনাল পরিচালনা, জ্বালানি আমদানি ও বণ্টন ব্যবস্থাপনা করে থাকে।
মার্কিন সেন্ট্রাল কমান্ড নিহতের সংখ্যা নিয়ে কোনও মন্তব্য করেনি। তবে এক্স প্ল্যাটফর্মে দেওয়া এক বার্তায় বলা হয়েছে, এই হামলার উদ্দেশ্য ছিল হুথিদের অর্থনৈতিক শক্তিকে দুর্বল করা, যারা নিজেদের জনগণের ওপর নিপীড়ন চালাচ্ছে।
এর আগেও যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল এই বন্দরে হামলা চালিয়েছে। তারা মনে করে, এটি হুথিদের ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্র ও জাহাজবিধ্বংসী হামলার ঘাঁটি।
ইরান ঘনিষ্ঠ হুথিরা এক দশকের বেশি সময় ধরে ইয়েমেনের বিস্তীর্ণ এলাকা দখল করে রেখেছে। ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে তারা লোহিত সাগর এলাকায় ইসরায়েল-সংশ্লিষ্ট জাহাজ লক্ষ্য করে ডজনখানেক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। গাজায় ইসরায়েলি অভিযানের প্রতিবাদে তারা এই হামলা চালিয়ে আসছে।
হোদেইদা বন্দরনগরী থেকে প্রায় ৫৫ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত রস ইসা টার্মিনালের ধারণ ক্ষমতা ৩০ লাখ ব্যারেল। জ্বালানি আমদানির ওপর কর থেকেই হুথি প্রশাসনের বার্ষিক শত কোটি ডলারের রাজস্ব আয় হয়।
গাজায় দুই মাসের যুদ্ধবিরতির সময় হুথিরা লোহিত সাগর এলাকায় হামলা স্থগিত রেখেছিল। তবে ইসরায়েল নতুন করে অভিযান শুরুর পর তারা হামলা চালানোর হুমকি দিলেও এখন পর্যন্ত নতুন কোনও হামলা হয়নি।
এর আগে মার্চ মাসে দুই দিনের মার্কিন হামলায় ৫০ জনের বেশি নিহত হয়েছিল বলে জানিয়েছিল হুথি কর্তৃপক্ষ।