গাজায় ইসরায়েলের একের পর এক বিমান হামলায় নিহত হয়েছেন অন্তত ৩৭ জন। হামাস-নিয়ন্ত্রিত গাজার সিভিল ডিফেন্স কর্মকর্তারা বলছেন, বেশিরভাগ হামলাই হয়েছে বাস্তুচ্যুত বেসামরিক নাগরিকদের তাঁবু শিবিরের ওপর। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে এসব হামলা হয়। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
আল-মাওয়াসি এলাকার বাসিন্দারা বিবিসিকে জানান, বুধবার রাতে একটি শক্তিশালী বিস্ফোরণের পর তাঁবুগুলোতে আগুন ধরে যায়। এতে শিশুসহ বহু ফিলিস্তিনি নিহত হন। এক ব্যক্তি বলেন, তিনি চিৎকার ও আতঙ্কের শব্দে জেগে ওঠেন এবং দেখেন কীভাবে আগুন দ্রুত এক তাঁবু থেকে আরেক তাঁবুতে ছড়িয়ে পড়ছে।
সিভিল ডিফেন্সের মুখপাত্র মাহমুদ বাসসাল বলেন, খান ইউনিসের কাছে উপকূলীয় আল-মাওয়াসি এলাকায় বুধবার রাতে দুটি ক্ষেপণাস্ত্র তাঁবুতে আঘাত করে। এতে অন্তত ১৬ জন নিহত হন, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। আহত হন আরও ২৩ জন।
বিবিসির যাচাই করা ভিডিওতে দেখা গেছে, পুড়ে যাওয়া শিবিরের ধ্বংসাবশেষ আর মাটিতে ছড়িয়ে থাকা জিনিসপত্র দেখছেন বেঁচে যাওয়া মানুষগুলো।
এক বাস্তুচ্যুত ব্যক্তি বিবিসির গাজা লাইফলাইন প্রোগ্রামে বলেন, আমি বাইরে ছুটে গিয়ে দেখি আমার পাশের তাঁবুটি আগুনে জ্বলছে। নারীরা বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছিলেন, সবার চোখে আতঙ্ক। আমরা অনেককে বাঁচাতে পারিনি। আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় তাঁবুগুলোতে আটকে যাওয়া মানুষদের মরতে দেখেছি—এটা হৃদয়বিদারক ছিল।
খান ইউনিসের এক বাস্তুচ্যুত নারী বলেন, হামলায় ঘুমন্ত অবস্থায় একই পরিবারের ১০ জন সদস্য নিহত হয়েছেন, আরও পাঁচজন আহত হয়েছেন।
জাতিসংঘের শিশু সংস্থা ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক ক্যাথরিন রাসেল বলেছেন, অস্থায়ী তাঁবুতে আশ্রয় নেওয়া শিশুদের জ্বলতে দেখার ছবি আমাদের সবার হৃদয়কে নাড়া দেওয়ার কথা।
শুক্রবার ইসরায়েলি সেনাবাহিনী (আইডিএফ) বিবিসিকে জানায়, তারা খান ইউনিস এলাকায় একজন হামাস ‘সন্ত্রাসী’কে লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে এবং বেসামরিক নাগরিকদের ক্ষতি কমানোর জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আইডিএফ বলেছে, হামলার ফলে কিছু নিরীহ বেসামরিক নাগরিক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার দাবি সম্পর্কে আমরা জানি। ঘটনাটি পর্যালোচনা করা হচ্ছে।
গাজার সিভিল ডিফেন্স এজেন্সি আরও জানায়, উত্তরের বেইত লাহিয়ায় বিমান হামলায় সাতজন, আল-মাওয়াসির কাছে দুজন এবং জাবালিয়ায় ১০ জন নিহত হয়েছেন। জাবালিয়ায় এক হামলায় একটি পরিবারের সাত সদস্য এবং আরেকটি হামলায় স্কুল ভবনে আশ্রয় নেওয়া তিন জন নিহত হন। আইডিএফ বলেছে, বেইত লাহিয়ায় হামলার খবর তাদের জানা নেই।
এদিকে, হামাস ইসরায়েলের সর্বশেষ যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব আনুষ্ঠানিকভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে। সংগঠনটি বলেছে, তারা আলোচনার জন্য প্রস্তুত, তবে শর্ত হচ্ছে—যুদ্ধবিরতির বিনিময়ে সব ৫৯ জন জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হবে (যাদের মধ্যে ২৪ জন জীবিত বলে ধারণা করা হচ্ছে)। ইসরায়েল ১০ জন জিম্মির বিনিময়ে ৪৫ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছিল।
হামাসের আলোচক দলের প্রধান খলিল আল-হাইয়া একটি ভিডিও বিবৃতিতে বলেন, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক এজেন্ডা সেবা করে এমন আংশিক চুক্তি মানবে না তারা।
জবাবে ইসরায়েলের চরম ডানপন্থি জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী বেজালেল স্মোত্রিচ বলেছেন, হামাসের বিরুদ্ধে জাহান্নামের দরজা খুলে দেওয়ার সময় এসেছে।
১২টি প্রধান ত্রাণ সংস্থার প্রধানরা বলেছেন, গাজায় মানবিক সহায়তা ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ধ্বংসের মুখে। অক্সফাম ও সেভ দ্য চিলড্রেনের মতো সংস্থাগুলো এক বিবৃতিতে লিখেছে, এটি আমাদের প্রজন্মের সবচেয়ে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়গুলোর একটি।
ইসরায়েল বলছে, হামাসকে চাপে রাখতে এবং জিম্মিদের মুক্ত করতে তারা অবরোধ বজায় রাখবে। তাদের দাবি, যুদ্ধবিরতি চলাকালে ২৫ হাজার ট্রাক সহায়তা প্রবেশ করায় গাজায় কোনও সংকট নেই।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর ইসরায়েল গাজায় সামরিক অভিযান শুরু করে। ইসরায়েলের হিসাবে, ওই হামলায় ১ হাজার ২০০ জন নিহত ও ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়। হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, জবাবে শুরু হওয়া ইসরায়েলি অভিযানে এখন পর্যন্ত ৫১ হাজার ৬৫ জন নিহত হয়েছেন।