ইরানে হামলার পরিকল্পনা ছিল ইসরায়েলের, আলোচনার স্বার্থে ঠেকান ট্রাম্প

ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলা চালানোর পরিকল্পনা করছিল ইসরায়েল। আগামী মাসেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্য ছিল তাদের। কিন্তু সম্প্রতি মার্কিন প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনার পর প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইসরায়েলকে এই হামলা থেকে বিরত থাকতে বলেছেন। এর বদলে তিনি ইরানের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি সীমিত করার চেষ্টা করছেন।  মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউ ইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

প্রশাসনের একাধিক কর্মকর্তা ও এই আলোচনায় অংশগ্রহণকারী সূত্রে জানা গেছে, ইরানের সামরিক ও অর্থনৈতিক দুর্বলতার এই সময়ে কূটনীতির পথ নেওয়া নাকি ইসরায়েলকে সমর্থন দিয়ে ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির সক্ষমতা ধ্বংস করা—এই প্রশ্নে ট্রাম্প প্রশাসনের ভেতরে মাসব্যাপী বিতর্কের পর এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। 

এই বিতর্কে প্রশাসনের মধ্যে বিভেদ স্পষ্ট হয়েছে। ঐতিহাসিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের মন্ত্রিসভার সদস্যরা ইরানের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়ার পক্ষে ছিলেন। অন্যদিকে, কিছু সহকারী সন্দেহ প্রকাশ করেছেন যে ইরানের ওপর সামরিক হামলা তাদের পারমাণবিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা ধ্বংস করতে পারবে কি না অথবা এর ফলে বড় কোনও যুদ্ধ শুরু হতে পারে কি না। বর্তমানে সামরিক পদক্ষেপের বিরুদ্ধে একটি সাধারণ ঐক্য তৈরি হয়েছে, কারণ ইরান আলোচনায় আগ্রহ প্রকাশ করেছে। 

ইসরায়েলি কর্মকর্তারা সম্প্রতি মে মাসে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলা চালানোর পরিকল্পনা করেছিলেন। তারা এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্যও প্রস্তুত ছিলেন এবং কখনও কখনও আশাবাদী ছিলেন যে, যুক্তরাষ্ট্র এতে সম্মতি দেবে। এই পরিকল্পনার লক্ষ্য ছিল, ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির সক্ষমতা অন্তত এক বছর বা তার বেশি সময় পিছিয়ে দেওয়া। 

এই পরিকল্পনার অধিকাংশই কেবল ইরানের পাল্টা হামলা থেকে ইসরায়েলকে রক্ষা করার জন্যই নয়, বরং ইসরায়েলি হামলা সফল করার জন্যও যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তার ওপর নির্ভরশীল ছিল। অর্থাৎ, হামলার কেন্দ্রে থাকত যুক্তরাষ্ট্রই। 

বর্তমানে ট্রাম্প সামরিক পদক্ষেপের বদলে কূটনীতিকে বেছে নিয়েছেন। তার প্রথম মেয়াদে তিনি ওবামা প্রশাসনের করা ইরান পারমাণবিক চুক্তি বাতিল করেছিলেন। কিন্তু দ্বিতীয় মেয়াদে মধ্যপ্রাচ্যে আরেকটি যুদ্ধে জড়াতে অনিচ্ছুক ট্রাম্প ইরানের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছেন এবং তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে চুক্তি করতে কয়েক মাসের সময়সীমা দিয়েছেন। 

এই মাসের শুরুতে ট্রাম্প ইসরায়েলকে জানিয়েছেন যে, যুক্তরাষ্ট্র তাদের হামলাকে সমর্থন করবে না। গত সপ্তাহে ওয়াশিংটন সফরকালে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে ওভাল অফিসে বৈঠক করে তিনি এই সিদ্ধান্তের কথা জানান এবং ইরানের সঙ্গে আলোচনা শুরু করার ঘোষণা দেন। 

বৈঠকের পর হিব্রু ভাষায় দেওয়া এক বিবৃতিতে নেতানিয়াহু বলেছিলেন, ইরানের সঙ্গে কোনও চুক্তি তখনই কার্যকর হবে যখন তা স্বাক্ষরকারীদের ভেতরে ঢুকে সুবিধাগুলো উড়িয়ে দিতে, সব সরঞ্জাম ভেঙে ফেলতে এবং আমেরিকান তত্ত্বাবধানে বাস্তবায়নের অনুমতি দেবে

এই প্রতিবেদনটি ইসরায়েলের গোপন সামরিক পরিকল্পনা এবং ট্রাম্প প্রশাসনের অভ্যন্তরীণ আলোচনা সম্পর্কে অবহিত একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথোপকথনের ভিত্তিতে তৈরি করা হয়েছে। বেশিরভাগ সূত্রই সামরিক পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলার শর্তে নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করেছেন। 

ইসরায়েল দীর্ঘদিন ধরে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলার পরিকল্পনা করে আসছে, বোমা হামলার অনুশীলন করছে এবং আমেরিকার সাহায্য ছাড়া বা সহায়তায় তারা কতটা ক্ষতি করতে পারবে তা হিসাব করছে। 

কিন্তু গত বছর ইরান একের পর এক বিপর্যয়ের মুখোমুখি হওয়ার পর ইসরায়েলি সরকারের ভেতরে হামলার প্রতি সমর্থন বেড়েছে। 

এপ্রিল মাসে ইসরায়েলে হামলার সময় ইরানের বেশিরভাগ ব্যালিস্টিক মিসাইল আমেরিকা ও ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করতে ব্যর্থ হয়। ইরানের মূল মিত্র হিজবুল্লাহ গত বছর ইসরায়েলের সামরিক অভিযানে বিধ্বস্ত হয়েছে। এরপর সিরিয়ায় প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের সরকারের পতন হিজবুল্লাহ ও তেহরান আরেকটি মিত্রকে হারিয়েছে এবং ইরান থেকে অস্ত্র পাচারের প্রধান পথ বন্ধ হয়ে গেছে।

ইরান ও সিরিয়ার বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাও ধ্বংস হয়েছে, পাশাপাশি মিসাইলের জ্বালানি তৈরির স্থাপনাগুলোও ধ্বংস হয়েছে, যা কিছু সময়ের জন্য ইরানের নতুন মিসাইল তৈরির সক্ষমতা অকার্যকর করে দিয়েছে। 

প্রাথমিকভাবে নেতানিয়াহুর অনুরোধে ইসরায়েলি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা মার্কিন কর্মকর্তাদের একটি পরিকল্পনা সম্পর্কে আপডেট দিয়েছিলেন। যেখানে ইসরায়েলি কমান্ডোরা ভূগর্ভস্থ পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে অভিযান চালাবে এবং বোমা হামলা করবে। ইসরায়েল আশা করেছিল যে এই অভিযানে আমেরিকার বিমানবাহিনীও অংশ নেবে। 

কিন্তু ইসরায়েলি সামরিক কর্মকর্তারা বলেছেন যে, কমান্ডো অভিযান অক্টোবরের আগে প্রস্তুত হবে না। নেতানিয়াহু এটি দ্রুত বাস্তবায়ন করতে চেয়েছিলেন। পরিকল্পনা সম্পর্কে অবহিত কর্মকর্তাদের মতে, ইসরায়েলি কর্মকর্তারা একটি দীর্ঘমেয়াদি বোমা হামলার প্রস্তাবনায় স্থানান্তরিত হতে শুরু করেছিলেন, যার জন্যও আমেরিকার সহায়তা প্রয়োজন হতো। 

কিছু আমেরিকান কর্মকর্তা অন্তত প্রাথমিকভাবে ইসরায়েলি পরিকল্পনা বিবেচনা করতে বেশি উন্মুখ ছিলেন। আলোচনায় অংশগ্রহণকারী সূত্রে জানা গেছে, সেন্ট্রাল কমান্ডের প্রধান জেনারেল মাইকেল ই. কুরিলা এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইকেল ওয়াল্টজ উভয়েই আলোচনা করেছিলেন যে, যদি ট্রাম্প এই পরিকল্পনাকে সমর্থন দেন, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে ইসরায়েলি হামলাকে সহায়তা করতে পারে। 

ইয়েমেনে ইরান-সমর্থিত হুথি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ তীব্র করার সাথে সাথে হোয়াইট হাউজের অনুমোদন নিয়ে জেনারেল কুরিলা মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক সরঞ্জাম স্থানান্তর করতে শুরু করেছিলেন। দ্বিতীয় একটি বিমানবাহী জাহাজ, কার্ল ভিনসন, এখন আরব সাগরে রয়েছে, যা লোহিত সাগরে হ্যারি এস. ট্রুম্যান জাহাজের সাথে যোগ দিয়েছে। 

যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যে দুটি প্যাট্রিয়ট মিসাইল ব্যাটারি এবং একটি টার্মিনাল হাই অল্টিটিউড এরিয়া ডিফেন্স (থাড) সিস্টেমও স্থানান্তর করেছে। 

ইরানের ভূগর্ভস্থ পারমাণবিক কর্মসূচি ধ্বংস করার জন্য অপরিহার্য ৩০ হাজার পাউন্ড ওজনের বোমা বহন করতে সক্ষম প্রায় অর্ধ ডজন বি-২ বোমারু বিমান ভারত মহাসাগরের দ্বীপ ঘাঁটি ডিয়েগো গার্সিয়ায় প্রেরণ করা হয়েছে। 

অতিরিক্ত ফাইটার এয়ারক্রাফট মধ্যপ্রাচ্যে, সম্ভবত ইসরায়েলের একটি ঘাঁটিতে স্থানান্তর করার কথাও বিবেচনা করা হয়েছিল। 

এই সব সরঞ্জাম হুথিদের বিরুদ্ধে হামলার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে—১৫ মার্চ থেকে যুক্তরাষ্ট্র তাদের বিরুদ্ধে হামলা চালাচ্ছে, যাতে তারা লোহিত সাগরে জাহাজে হামলা বন্ধ করে। কিন্তু আমেরিকান কর্মকর্তারা গোপনে বলেছেন যে, এই অস্ত্রগুলো ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলকে সহায়তা করার পরিকল্পনারও অংশ ছিল। 

এমনকি যদি যুক্তরাষ্ট্র ইরানের ওপর হামলায় বিমান ব্যবহারের অনুমোদন না-ও দিত, তবু ইসরায়েল জানত যে ইরানের মিত্রদের হামলা প্রতিহত করার জন্য আমেরিকান ফাইটারগুলো প্রস্তুত রয়েছে। 

এমন কিছু লক্ষণ ছিল যে, ট্রাম্প ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের সামরিক অভিযানে আমেরিকার সমর্থনের ব্যাপারে উন্মুক্ত ছিলেন। যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে ইরানের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে আসছে যে তারা হুথিদের অস্ত্র ও গোয়েন্দা সহায়তা দিচ্ছে এবং এই গ্রুপের ওপর অন্তত কিছুটা নিয়ন্ত্রণ বজায় রেখেছে। ১৭ মার্চ, ট্রাম্প হুথিদের তাদের হামলা বন্ধ করতে সতর্ক করার পাশাপাশি ইরানকেও সতর্ক করে বলেছিলেন যে হুথিদের ওপর ইরানের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। 

ট্রাম্প একটি সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে লিখেছিলেন, এই মুহূর্ত থেকে হুথিদের গুলিকে ইরানের অস্ত্র ও নেতৃত্ব থেকে ছোড়া গুলি হিসেবে দেখা হবে। ইরানকে দায়ী করা হবে এবং এর পরিণতি ভোগ করতে হবে—এবং সেই পরিণতি হবে ভয়াবহ! 

ইসরায়েলি কর্মকর্তারা ট্রাম্পের ইরানের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়ার অনেক কারণ দেখতে পেয়েছিলেন। ২০২০ সালে তিনি ইরানের সবচেয়ে অভিজাত সামরিক ইউনিটের কমান্ডার জেনারেল কাসেম সোলাইমানিকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন। গত বছরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনি প্রচারণার সময় ইরান ট্রাম্পকে হত্যার জন্য গুপ্তঘাতক নিযুক্ত করার চেষ্টা করেছিল বলে অভিযোগ রয়েছে।

কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসনের ভেতরে কিছু কর্মকর্তা ইসরায়েলি পরিকল্পনা সম্পর্কে সন্দিহান হয়ে উঠছিলেন। 

চলতি মাসের এক বৈঠকে—যেখানে ইসরায়েলি পরিকল্পনা নিয়ে একাধিক আলোচনা হয়েছিল—ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্সের ডিরেক্টর তুলসি গ্যাবার্ড একটি নতুন গোয়েন্দা মূল্যায়ন উপস্থাপন করেছিলেন, যেখানে বলা হয়েছিল যে আমেরিকার অস্ত্রের জমায়েত ইরানের সঙ্গে একটি বড় যুদ্ধের সূত্রপাত করতে পারে, যা যুক্তরাষ্ট্র চায় না। 

বিভিন্ন বৈঠকে একাধিক কর্মকর্তা গ্যাবার্ডের উদ্বেগের প্রতিধ্বনি করেছিলেন। হোয়াইট হাউজের চিফ অব স্টাফ সুজি উইলস, প্রতিরক্ষা সচিব পিট হেগসেথ এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট জেড ভ্যান্স সবাই এই হামলা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন। 

এমনকি ওয়াল্টজ, যিনি প্রায়শই ইরান নিয়ে সবচেয়ে কঠোর বক্তব্য রাখেন, তিনিও সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন যে আমেরিকার ব্যাপক সহায়তা ছাড়া ইসরায়েলের পরিকল্পনা সফল হতে পারবে কি না। 

এই সাম্প্রতিক বৈঠকগুলো হয়েছিল ইরানিরা পরোক্ষ আলোচনার জন্য সম্মতি দেওয়ার পর। মধ্যস্থতাকারীর মাধ্যমে মার্চ মাসে ট্রাম্প ইরানের সঙ্গে সরাসরি আলোচনার প্রস্তাব দিয়ে একটি চিঠি পাঠিয়েছিলেন। যা ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন বলে মনে হয়েছিল। কিন্তু ২৮ মার্চ, একজন ইরানি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা একটি চিঠি পাঠিয়ে পরোক্ষ আলোচনায় আগ্রহের ইঙ্গিত দেন। 

ট্রাম্পের প্রশাসনে এখনও বিতর্ক চলছে, ইরানের সঙ্গে কী ধরনের চুক্তি গ্রহণযোগ্য হবে। ট্রাম্প প্রশাসন মিশ্র সংকেত দিয়েছে যে তারা কী ধরনের চুক্তি চায় এবং ইরান যদি সম্মত না হয় তাহলে তার কী পরিণতি হবে।  এক আলোচনায়, ভ্যান্স যুক্তি দিয়েছিলেন যে ট্রাম্পের কাছে চুক্তি করার একটি অনন্য সুযোগ রয়েছে। প্রশাসনের কর্মকর্তাদের মতে, ভ্যান্স বলেছিলেন যে আলোচনা ব্যর্থ হলে ট্রাম্প ইসরায়েলি হামলাকে সমর্থন করতে পারেন। 

এই মাসের শুরুতে ইসরায়েল সফরকালে জেনারেল কুরিলা সেখানকার কর্মকর্তাদের বলেছিলেন যে হোয়াইট হাউজ পারমাণবিক স্থাপনা হামলার পরিকল্পনাটি স্থগিত রাখতে চায়। নেতানিয়াহু ৩ এপ্রিল ট্রাম্পকে ফোন করেন। ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের মতে, ট্রাম্প নেতানিয়াহুকে বলেছিলেন যে তিনি ফোনে ইরান পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করতে চান না। কিন্তু তিনি নেতানিয়াহুকে হোয়াইট হাউজে আসার আমন্ত্রণ জানান। 

নেতানিয়াহু ৭ এপ্রিল ওয়াশিংটনে পৌঁছান। যদিও এই সফরকে ট্রাম্পের শুল্কের বিরুদ্ধে যুক্তি দেওয়ার সুযোগ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছিল, তবে ইসরায়েলিদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা ছিল ইরানে তাদের পরিকল্পিত হামলা নিয়ে। কিন্তু নেতানিয়াহু হোয়াইট হাউজে থাকাকালীন ট্রাম্প ইরানের সঙ্গে আলোচনার ঘোষণা দেন। 

আলোচনায় অংশগ্রহণকারী সূত্রে জানা গেছে, গোপনে ট্রাম্প নেতানিয়াহুকে স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন যে আলোচনা চলাকালীন মে মাসে ইসরায়েলি হামলার জন্য তিনি আমেরিকার সমর্থন দেবেন না। 

পরের দিন ট্রাম্প ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি সামরিক হামলা এখনও একটি বিকল্প রয়ে গেছে। তিনি বলেন, যদি সামরিক পদক্ষেপের প্রয়োজন হয়, আমরা সামরিক পদক্ষেপ নেব। ইসরায়েল অবশ্যই এর নেতৃত্ব দেবে। 

নেতানিয়াহুর সফরের পর ট্রাম্প সিআইএ ডিরেক্টর জন র‍্যাটক্লিফকে জেরুজালেমে পাঠান। বুধবার র‍্যাটক্লিফ নেতানিয়াহু এবং মোসাদ গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান ডেভিড বার্নিয়ার সঙ্গে বৈঠক করে ইরান ইস্যুতে বিভিন্ন বিকল্প নিয়ে আলোচনা করেন। 

র‍্যাটক্লিফের সফর সম্পর্কে অবহিত এক ব্যক্তির মতে, আলোচনা ও হামলা ছাড়াও অন্যান্য বিকল্প নিয়ে আলোচনা করা হয়েছিল, যার মধ্যে রয়েছে আমেরিকার সমর্থনে ইসরায়েলের গোপন অপারেশন এবং আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগ। 

মার্কিন ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের মুখপাত্র ব্রায়ান হিউজ বলেছেন, যে প্রশাসনের সমগ্র জাতীয় নিরাপত্তা নেতৃত্ব দল ট্রাম্পের ইরান নীতি এবং মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার প্রচেষ্টায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। 

হিউজ বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প স্পষ্ট করেছেন: ইরানের কাছে পারমাণবিক অস্ত্র থাকতে পারবে না এবং সব বিকল্প বিবেচনাধীন রয়েছে। প্রেসিডেন্ট ইরানের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ আলোচনা করার অনুমোদন দিয়েছেন এই বিষয়টি স্পষ্ট করার জন্য। কিন্তু তিনি এটাও স্পষ্ট করেছেন যে এটি অনির্দিষ্টকালের জন্য চলতে পারবে না।

হোয়াইট হাউজ ও সিআইএ মন্তব্যের অনুরোধের জবাব দেয়নি। ডিরেক্টর অব ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্সের অফিস প্রশ্নগুলোর জন্য ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের দিকে ইঙ্গিত করেছে। প্রতিরক্ষা দফতর মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। নেতানিয়াহুর অফিস এবং ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্সও মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। 

হামলায় যুক্ত হতে ট্রাম্পকে চাপ দেওয়ার ক্ষেত্রে নেতানিয়াহু প্রায় দুই দশক ধরে আমেরিকান প্রেসিডেন্টদের সঙ্গে যে বিতর্ক করেছেন, তা-ই পুনরাবৃত্তি করছিলেন। মার্কিন কর্মকর্তাদের বিরোধিতার পর নেতানিয়াহু ইরানের নির্দিষ্ট স্থাপনাগুলোর বিরুদ্ধে গোপন তৎপরতা এবং ইরানি পারমাণবিক বিজ্ঞানীদের হত্যার দিকে মনোনিবেশ করেছেন। যদিও এই প্রচেষ্টাগুলো ইরানের কর্মসূচিকে ধীরগতির করতে পারে, এটি এখন কয়েক মাস বা এক বছরের মধ্যে ছয় বা তার বেশি পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির সক্ষমতার সবচেয়ে কাছাকাছি রয়েছে।