গাজায় যুদ্ধবিরতির আলোচনায় অগ্রগতি নেই

গাজায় যুদ্ধবিরতি পুনর্বহাল ও ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তির লক্ষ্যে কায়রোতে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ আলোচনা কোনও অগ্রগতি ছাড়াই শেষ হয়েছে।  সোমবার ফিলিস্তিনি ও মিসরীয় সূত্রগুলো ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে একথা জানিয়েছে। সূত্রমতে, হামাস তাদের অবস্থানে অনড়,তারা যে কোনও চুক্তিকে গাজায় যুদ্ধের সমাপ্তির নিশ্চিয়তা চায়।

জানুয়ারিতে স্বাক্ষরিত যুদ্ধবিরতি ভেস্তে যাওয়ার পর গত মাসে ইসরায়েল গাজায় নতুন করে সামরিক অভিযান শুরু করেছে। তারা বলেছে, হামাসকে নির্মূল না করা পর্যন্ত যুদ্ধ বন্ধ করবে না। অন্যদিকে, হামাস অস্ত্র ত্যাগের শর্তযুক্ত প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। যেখানে তাদের অস্ত্র ত্যাগের শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। 

তবে এই মৌলিক বিরোধ সত্ত্বেও, সূত্রগুলো জানিয়েছে যে হামাসের গাজা শাখার প্রধান খলিল আল-হাইয়্যার নেতৃত্বাধীন একটি প্রতিনিধিদল কিছুটা নমনীয়তা দেখিয়েছে। যুদ্ধবিরতি বাড়ানো হলে তারা ইসরায়েলের হাতে আটক ফিলিস্তিনি বন্দিদের বিনিময়ে কতজন জিম্মি মুক্তি দেবে, তা নিয়ে আলোচনা করতে প্রস্তুত।

মিসরের এক সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, সর্বশেষ প্রস্তাবে হামাসকে আরও বেশি সংখ্যক জিম্মি মুক্তি দিতে বলা হয়েছে। ইসরায়েলের মন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর নিরাপত্তা ক্যাবিনেটের সদস্য জিভ এলকিন সোমবার আর্মি রেডিওকে বলেছেন, হামাস পাঁচজন জিম্মি মুক্তির যে প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু ইসরায়েল এখন ১০ জনের মুক্তি চাইছে। 

মিসরীয় সূত্র জানিয়েছে, হামাস সর্বশেষ প্রস্তাব নিয়ে বিবেচনার জন্য আরও সময় চেয়েছে। সূত্র মতে, হামাসের কোনও সমস্যা নেই, তবে তারা নিশ্চয়তা চায় যে ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি চুক্তির দ্বিতীয় ধাপে যুদ্ধের সম্পূর্ণ অবসানের আলোচনা শুরু করতে রাজি হবে।

জানুয়ারিতে শুরু হওয়া যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপে হামাস ৩৩ জন ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছিল, বিনিময়ে ইসরায়েল শত শত ফিলিস্তিনি বন্দিকে ছেড়েছিল। কিন্তু মার্চের শুরুতে দ্বিতীয় ধাপ শুরু হওয়ার কথা ছিল, যা যুদ্ধের সমাপ্তির দিকে নিয়ে যেত—সেটি আর কখনোই শুরু হয়নি। 

গত মাসে সামরিক অভিযান পুনরায় শুরু করার পর থেকে ইসরায়েলি বাহিনী দেড় হাজারের বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক। এছাড়া তারা হাজার হাজার মানুষকে বাস্তুচ্যুত করেছে, গাজার বিস্তীর্ণ এলাকা দখল করে নিয়েছে এবং পুরো গাজায় সম্পূর্ণ অবরোধ জারি করেছে। 

অন্যদিকে, হামাসের হাতে এখনও ৫৯ জন ইসরায়েলি জিম্মি আটক রয়েছে। ইসরায়েলের ধারণা, এর মধ্যে ২৪ জন এখনও বেঁচে থাকতে পারেন। 

ফিলিস্তিনিরা বলছে, যুদ্ধবিরতি ভেস্তে যাওয়ার পর ইসরায়েলের এই সামরিক অভিযান যুদ্ধের সবচেয়ে ভয়াবহ ও ধ্বংসাত্মক পর্যায়ে পৌঁছেছে। গাজার ধ্বংসস্তূপে টিকে থাকা অবসন্ন জনগণের ওপর এই হামলা চলছে। 

গাজার উত্তর প্রান্তে জাবালিয়ায় উদ্ধারকর্মীরা একটি ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়া লাশ উদ্ধারের চেষ্টা করছিলেন। ইসরায়েলি হামলায় ধসে পড়া একটি ভবনের নিচে কংক্রিট ভেঙে তারা লাশ খুঁজছিলেন। একটি স্ল্যাবের নিচে এক ব্যক্তির পা ও হাত দেখা যাচ্ছিল। কম্বলে মোড়া একটি লাশ কয়েকজন লোক বহন করে নিয়ে যাচ্ছিল। ঘটনাস্থলের কর্মীরা বলেছেন, এখানে ২৫ জন পর্যন্ত নিহত হতে পারেন। 

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, তারা সেখানে হামাসের একটি অ্যামবুশ পরিকল্পনা নস্যাৎ করতে হামলা চালিয়েছে। 

দক্ষিণের খান ইউনিসে একটি অস্থায়ী তাঁবু শিবির বিমান হামলায় ধ্বংস হয়ে গেছে। পরিবারগুলো তাদের জিনিসপত্র খুঁজতে ধ্বংসস্তূপে ফিরে এসেছে। 

এদিকে, যুদ্ধবিরতি আলোচনায় মধ্যস্থতা করা দুই আরব দেশ—মিসর ও কাতারের নেতারা রবিবার দোহায় মিলিত হয়েছেন। মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি ও কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল-থানি এই বৈঠকে আলোচনা করেছেন। মিসরীয় সূত্র জানিয়েছে, সিসি মিসর ও কাতার ছাড়াও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে যুদ্ধবিরতি চুক্তির জন্য অতিরিক্ত নিশ্চয়তা চেয়েছেন। 

ইসরায়েলের সামরিক অভিযান পুনরায় শুরু করার সিদ্ধান্তকে সমর্থন করা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত সপ্তাহে বলেছেন, জিম্মি মুক্তির ক্ষেত্রে অগ্রগতি হচ্ছে। 

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের দক্ষিণ ইসরায়েলে হামলার পর এই যুদ্ধ শুরু হয়। ইসরায়েলি হিসাবে, ওই হামলায় ১ হাজার ২০০ মানুষ নিহত হয় এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যাওয়া হয়।  জবাবে গাজায় ইসরায়েলের হামলায় এখন পর্যন্ত ৫০ হাজার ৯০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ।