উইটকফ বনাম আরাঘচি: ইরান-মার্কিন আলোচনায় মুখোমুখি দুই কূটনীতিক 

ওমানে ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে ঐতিহাসিক আলোচনায় আগামী সপ্তাহে বসছেন যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ ও ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি। কূটনীতির এই দুজনের পেছনের গল্পই আলাদা—একজন রিয়েল এস্টেট টাইকুন থেকে ট্রাম্পের বিশ্বস্ত সহযোগী, অন্যজন ইরানের পারমাণবিক চুক্তির স্থপতি। 

স্টিভ উইটকফ: রিয়েল এস্টেট থেকে বৈশ্বিক রাজনীতির মঞ্চে

৬৮ বছর বয়সী এই ধনকুবেরের কূটনৈতিক অভিজ্ঞতা বলতে শূন্য। তবু ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব তাকে নিয়ে গেছে মধ্যপ্রাচ্যের জটিল সংকট সমাধানের মাঠে। গাজায় যুদ্ধবিরতি থেকে ইউক্রেন সংকট—সবখানেই তার ভূমিকা। 

২০২৩ সালে হামাসের হামলার পর গাজায় প্রবেশ করা প্রথম মার্কিন কর্মকর্তা ছিলেন উইটকফ। ট্রাম্পের বিতর্কিত ‘গাজা দখল’ মন্তব্যকে তিনি এভাবে ব্যাখ্যা করেন: ‘এলাকাটিকে বসবাসযোগ্য করাই লক্ষ্য’। গাজায় ২৫ জন জিম্মি মুক্তিতে তার ভূমিকা ছিল, যদিও যুদ্ধবিরতি টেকেনি। 

ইউক্রেন ইস্যুতেও তিনি ট্রাম্পের নীতিতে পরিবর্তন এনেছেন। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে তার বৈঠক বিতর্ক তৈরি করেছিল। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি তাকে অভিযুক্ত করেছেন পুতিনের প্রতি ‘নরম মনোভাব’ দেখানোর জন্য। 

১৯৫৭ সালে নিউ ইয়র্কের ব্রংক্সে জন্ম নেওয়া উইটকফ রিয়েল এস্টেট ব্যবসায় সাফল্য পেয়েছেন। ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠা করেন ‘উইটকফ গ্রুপ’। তার স্ত্রী ও ছেলেও এই কোম্পানিতে কাজ করেন। 

আব্বাস আরাঘচি: ইরানের পারমাণবিক চুক্তির স্থপতি

৬২ বছরের এই কূটনীতিক ২০১৫ সালের ঐতিহাসিক পরমাণু চুক্তি (জেসিপিওএ) বাস্তবায়নের মূল কারিগর। ইরানের কার্পেট ব্যবসায়ী পরিবারে জন্ম নেওয়া আরাঘচি ইংরেজিতে সাবলীল। 

১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের পর তিনি ইসলামিক রেভুলিউশনারি গার্ড কর্পসে যোগ দেন। পরে ইরান-ইরাক যুদ্ধেও অংশ নেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণায় যোগ দিয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ হয়ে ওঠেন। 

গোঁফ-দাড়ি সংযত, ম্যান্ডারিন কলারের শার্ট পরা এই কূটনীতিক শান্ত-স্থির স্বভাবের জন্য পরিচিত। সম্প্রতি ইরানের নতুন প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান তাকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিযুক্ত করেছেন। 

২০১৫ সালের চুক্তি ভেঙে ট্রাম্পের সময়ে যুক্তরাষ্ট্র যখন নতুন করে নিষেধাজ্ঞা দেয়, আরাঘচিই ছিলেন ইরানের মুখ্য প্রতিনিধি। সম্প্রতি তিনি বলেছেন, জেসিপিওএ পুরোনো রূপে ফিরবে না, তবে এটি আলোচনার ভিত্তি হতে পারে।

আলোচনার চ্যালেঞ্জ

বাইডেন যেসব যুদ্ধ থামাতে পারেননি, সেগুলো সমাপ্তির যে লক্ষ্য ট্রাম্পের রয়েছে, সেগুলো অর্জন করার চ্যালেঞ্জ রয়েছে উইটকফের সামনে।  আর আরাঘচির লক্ষ্য হলো নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার ও ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির স্বীকৃতি। 

বিশ্লেষকদের মতে, উইটকফের ‘বেসামরিক’ দৃষ্টিভঙ্গি আরাঘচির কূটনৈতিক অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হবে। ওমানের আলোচনা শুরুর আগেই দুই পক্ষের অবস্থান স্পষ্ট—যুক্তরাষ্ট্র চায় ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির কর্মসূচি বন্ধ করুক, ইরান চায় নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হোক। 

সূত্র: এএফপি