ইসরায়েল একে একে হামাসের শীর্ষ নেতাদের হত্যা করার পর, সংগঠনটি নতুন কমান্ডারদের নিয়োগ দিয়েছে। তবে এবার তাদের পরিচয় গোপন রাখা হয়েছে যাতে তারা গুপ্তহত্যার শিকার না হন।
৭ অক্টোবরের হামলার প্রতিশোধ নিতে ইসরায়েল হামাসকে ধ্বংস করার অঙ্গীকার করে গাজায় ব্যাপক হামলা শুরু করে। এই হামলা হামাসকে উল্লেখযোগ্যভাবে দুর্বল করে ফেলে এবং অঞ্চলটির বহু অংশ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়।
হামাসের রাজনৈতিক প্রধান ইসমাইল হানিয়া, সশস্ত্র শাখার প্রধান মোহাম্মদ দেইফ এবং ৭ অক্টোবরের হামলার মূল পরিকল্পনাকারী ইয়াহিয়া সিনওয়ার সবাই নিহত হয়েছেন। তাদের সঙ্গে আরও অনেক কমান্ডার ও রাজনৈতিক নেতা প্রাণ হারিয়েছেন।
তবে লেবাননের মিত্র সংগঠন হিজবুল্লাহর যেমন তাদের নিহত নেতা হাসান নাসরাল্লাহকে ঘিরে ‘ব্যক্তি পূজার' সংস্কৃতি গড়ে তুলেছিল; হামাস তাদের শীর্ষ নেতৃত্বকে কেন্দ্র করে এমন কোনও সংস্কৃতি গড়ে তোলেনি। বিশেষ করে ইজ্জেদিন আল-কাসসাম ব্রিগেডের নেতাদের পরিচয় নিয়ে হামাস মুখে কুলুপ এঁটেছে।
হামাসের সশস্ত্র শাখার ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানিয়েছে, ‘ইজ্জেদিন আল-কাসসাম ব্রিগেডের প্রধানের নাম গোপন রাখা হবে।‘
গাজাভিত্তিক সাফা নিউজ এজেন্সির প্রতিষ্ঠাতা ইয়াসের আবু হিন বলেন, এত নেতার মৃত্যু হামাসকে প্রভাবিত করেছে, তবে সেটা শুধুই অস্থায়ী। এই হামলা হামাসের অস্তিত্ব সংকট তৈরি করছে না, হামাসের নিজস্ব পদ্ধতিতে প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালিত হয়। তিনি বলেন, ইসরায়েল এটিকে নির্মূল করতে পারবে না।
এএফপিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর এক সদস্য জানান, এই ব্যুরোই মূলত আন্দোলনের নির্বাহী বাহিনী হিসেবে কাজ করে।
তিনি আরও বলেন, রাজনৈতিক ব্যুরোর সদস্য নির্বাচন করে বৃহত্তর শূরা কাউন্সিল, যা মূলত পার্লামেন্টের মতো কাজ করে।
প্যারিসের আরব সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড পলিটিক্যাল স্টাডিজ-এর লেইলা সিউরাত বলেন, আমরা নতুন নেতাদের নাম জানব না। তাদের পরিচয় গোপন রাখা এবং একধরনের সম্মিলিত নেতৃত্বের ভাব বজায় রাখার জন্য জোর দেওয়া হচ্ছে।
যদিও হামাস এখন পর্যন্ত টিকে আছে, তবে গাজার ভবিষ্যৎ এবং ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা আন্দোলনে এর ভূমিকা নিয়ে সবচেয়ে কঠিন সিদ্ধান্ত এখনও নেওয়া বাকি।
প্রতিদিনের বোমা হামলায় জর্জরিত অবস্থায়, হামাস কেবল ইসরায়েলের কাছ থেকেই নয়, বিশ্বের বিভিন্ন শক্তির কাছ থেকেও এবং এমনকি কিছু ফিলিস্তিনির পক্ষ থেকেও ক্ষমতা ছাড়ার দাবির মুখোমুখি হচ্ছে।
নিউ ইয়র্কের সোফান সেন্টারের উদ্ধৃত সূত্র অনুযায়ী, ‘আভ্যন্তরীণ বিতর্ক এতটাই তীব্র হয়েছে যে কিছু হামাস রাজনৈতিক নেতা গাজায় সংগঠনের সামরিক শাখার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার কথা বিবেচনা করছেন।’
হামাস বিভাজনের সঙ্গে অপরিচিত নয়। লেইলা সিউরাত বলেন, এর আগেও আরব বসন্ত থেকে শুরু করে ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে দলে বিভক্তি দেখা গেছে।
তবে ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধ সাধারণ গাজাবাসীদের মধ্যে গভীর হতাশা তৈরি করেছে। তারা এমন এক সংঘাতে ক্লান্ত, যা হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করেছে এবং তাদের ভূখণ্ডকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে।
হামাসের এক শীর্ষ নেতা মুসা আবু মারজুক, যিনি ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির আলোচনায় জড়িত ছিলেন, তিনি ফেব্রুয়ারির শেষদিকে নিউ ইয়র্ক টাইমসকে বলেন, যদি অনুমান করা যেত যে এমন কিছু হবে, তাহলে ৭ অক্টোবরের ঘটনা ঘটত না।
টেলিগ্রামের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি বিরল প্রতিবাদ কর্মসূচির পরিপ্রেক্ষিতে মার্চে গাজার রাস্তায় শত শত মানুষ ‘হামাস বের হয়ে যাও’ বলে স্লোগান দেন।
সিউরাত বলেন, কিছু ফিলিস্তিনি চায় হামাস চলে যাক। কিছু বরাবরই বিরোধিতা করেছে, আর অন্যরা এখন কেবল বিরক্ত হয়ে পড়েছে।
তবে শুধু চাপ দিয়েই কিছু হবে না। কারণ হামাসের কোনও কার্যকর প্রতিদ্বন্দ্বী নেই এবং গাজার সাধারণ মানুষের কাছে তাদের মোকাবিলা করার উপায়ও নেই। বিশ্লেষকরা বলছেন, তারা এখনও নিয়ন্ত্রণে আছে। হামাস দুর্বল হলেও, এখন পর্যন্ত কেউ তাদের সামনে দাঁড়াতে পারছে না।
সূত্র: ইয়াহু নিউজ