ইসরায়েলি কারাগার থেকে মুক্তির পর ‘অপমানজনক’ শার্ট পোড়ালেন ফিলিস্তিনিরা

ইসরায়েলের কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়া ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক এমন টি-শার্ট পরতে বাধ্য করা হতো যাতে তারকা আঁকা ছিল। আরবিতে লেখা ছিল ‘আমরা ভুলব না, ক্ষমাও করব না’। এই ঘটনা ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে এবং একে ‘বর্ণবাদী অপরাধ’ বলে সমালোচনাও করা হয়েছে। 

যুদ্ধবিরতি নিয়ে টানাপোড়েনের মধ্যেই শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) গাজায় তিনজন ইসরায়েলি বন্দির মুক্তির বিনিময়ে ৩৬৯ জন ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেওয়া হয়।

বন্দি বিনিময়ের আগে, ইসরায়েলি কারা কর্তৃপক্ষ কয়েকজন ফিলিস্তিনিকে ওই বার্তাযুক্ত পোশাক পরা অবস্থায় ছবি প্রকাশ করে। মুক্তি পাওয়ার সময়, অনেকেই ওই বার্তাগুলো লুকানোর জন্য টি-শার্টগুলো উল্টো করে পরেছিলেন।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার ধারণ করা ফুটেজে দেখা যায়, গাজার খান ইউনিসে অবস্থিত ইউরোপিয়ান গাজা হাসপাতালে পৌঁছানোর পর কয়েকজন ফিলিস্তিনি তাদের ওই টি-শার্টগুলো আগুনে পুড়িয়ে দেন।

এক বিবৃতিতে হামাস বলেছে, ‘আমাদের বীর বন্দিদের পিঠে বর্ণবাদী স্লোগান বসানোর এই অপরাধ এবং তাদের প্রতি নিষ্ঠুর ও সহিংস আচরণের আমরা নিন্দা জানাই। এটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন ও নীতির স্পষ্ট লঙ্ঘন।’

ইসরায়েলি কারাগারে ফিলিস্তিনি বন্দিদের পরানো টি শার্ট। ছবি: আল জাজিরা।

ফিলিস্তিনি ইসলামিক জিহাদ গোষ্ঠীও এই ঘটনাকে ‘বর্ণবাদী অপরাধ’ বলে আখ্যা দিয়েছে।

এমনকি ইসরায়েলি ব্রডকাস্টিং অথরিটির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, ইসরায়েলেও এই ইউনিফর্ম নিয়ে সমালোচনা হয়েছে। একটি সূত্র জানিয়েছে, ইসরায়েলের রাজনৈতিক মহল এই সিদ্ধান্ত সম্পর্কে আগে জানত না।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ইসরায়েলের কারা কমিশনার কোবি ইয়াকোবি নিজে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।

দোহা ইনস্টিটিউট ফর গ্র্যাজুয়েট স্টাডিজের মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক মোহামাদ এলমাসরি আল জাজিরাকে বলেন, এটি ফিলিস্তিনিদের ‘অমানবিকীকরণের’ আরেকটি কৌশল।

বন্দি বিনিময় প্রক্রিয়া পরিচালনাকারী আন্তর্জাতিক রেড ক্রস কমিটি সব পক্ষকে আরও ‘সম্মানজনক’ বন্দি মুক্তির আহ্বান জানিয়েছে। এক বিবৃতিতে সংস্থাটি বলেছে, ‘ভবিষ্যতে এই ধরনের বিনিময় আরও ভালোভাবে পরিচালনার জন্য সব পক্ষ, বিশেষ করে মধ্যস্থতাকারীদের আরও পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।’

রাজনৈতিক বিশ্লেষক জাভিয়ের আবু ঈদ আল জাজিরাকে বলেন, উত্তেজনাপূর্ণ টি-শার্টের বিতর্ক ইসরায়েলের অপমানের নীতিরই একটি অংশ। তিনি বলেন, আমরা গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ফিলিস্তিনি বন্দিদের অপমানের ঘটনাগুলো পর্যবেক্ষণ করছি। তিনি আরও জানান, এটি নতুন কিছু নয়, তবে এটি শুধু বন্দিদের জন্য নয়, তাদের পরিবারের জন্যও মানসিক ক্ষতির কারণ।

আইসিআরসির তথ্যানুযায়ী, জানুয়ারিতে যুদ্ধবিরতি শুরুর পর থেকে মোট ২৪ জন ইসরায়েলি বন্দি এবং ৯৮৫ জন ফিলিস্তিনি মুক্তি পেয়েছে।

সূত্র : আল জাজিরা