যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গাজা উপত্যকা থেকে ফিলিস্তিনিদের মিসর ও জর্ডানে স্থানান্তরের বিতর্কিত প্রস্তাবটি আবারও সামনে এনেছেন। তিনি দাবি করেছেন, মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাতাহ আল-সিসি এবং জর্ডানের রাজা দ্বিতীয় আবদুল্লাহ এই পরিকল্পনায় সম্মত হবেন। তবে এই প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে মিসর ও জর্ডানসহ বেশ কয়েকটি আরব দেশ কঠোর অবস্থান নিয়েছে। ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েল এ খবর জানিয়েছে।
গত শনিবার ট্রাম্প গাজা উপত্যকা থেকে ফিলিস্তিনিদের সরিয়ে নেওয়ার কথা উল্লেখ করে বলেন, গাজায় শুদ্ধি অভিযান চালাতে হবে। ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে ১৫ মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধে গাজা উপত্যকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। সোমবার এয়ার ফোর্স ওয়ানে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলোচনায় ট্রাম্প বলেন, আমি চাই তারা এমন একটি এলাকায় বসবাস করুক, যেখানে তারা শান্তিপূর্ণভাবে থাকতে পারবে। গাজা উপত্যকা বহু বছর ধরে একটি নরকের মতো। সেখানে সব সময়ই সহিংসতা লেগে থাকত।
তিনি আরও বলেছেন, গাজাবাসীদের এমন জায়গায় সরিয়ে নেওয়া উচিত, যেখানে তারা নিরাপদে এবং আরও ভালোভাবে বসবাস করতে পারবে।
মিসর ও জর্ডানের কঠোর প্রতিক্রিয়া
ট্রাম্পের এই প্রস্তাবের বিরুদ্ধে মিসর ও জর্ডান কঠোর অবস্থান নিয়েছে। মিসরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এক বিবৃতিতে বলেছেন, ফিলিস্তিনিদের সাময়িক বা স্থায়ীভাবে স্থানান্তরের প্রস্তাব এই অঞ্চলে সংঘাত আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। জর্ডানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আইমান সাফাদিও বলেছেন, ট্রাম্পের প্রস্তাবের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান দৃঢ় ও অটল।
মিসর ও জর্ডান উভয় দেশই আশঙ্কা প্রকাশ করেছে যে, গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের সরিয়ে নেওয়া হলে তাদের ফিরে আসার অধিকার হরণ করা হতে পারে। ইসরায়েলের ডানপন্থি রাজনীতিবিদদের একটি অংশ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বসতি পুনঃস্থাপনের দাবি জানিয়েছে এবং ফিলিস্তিনিদের ‘স্বেচ্ছায় স্থানান্তর’-এর কথা বলেছে।
আলবেনিয়ার অবস্থান
আলবেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী এডি রামা সোমবার ইসরায়েলি টেলিভিশনের একটি প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করেছেন, যেখানে বলা হয়েছিল আলবেনিয়া গাজা থেকে ১ লাখ ফিলিস্তিনিকে আশ্রয় দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা করছে। রামা টুইটারে লিখেছেন, আলবেনিয়াকে কেউ এমন কোনও প্রস্তাব দেয়নি এবং আমরা এমন দায়িত্ব নেওয়ার কথা ভাবতেও পারি না। আলবেনিয়া মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থিত নয়, তাই আমরা ইউরোপের অন্যান্য দেশের চেয়ে বেশি কিছু করতে পারব না।
নেতানিয়াহুর সঙ্গে আলোচনার ইঙ্গিত
ট্রাম্প সোমবার জানান, তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে এই বিষয়ে আলোচনা করবেন। নেতানিয়াহু শিগগিরই ওয়াশিংটন সফরে আসবেন বলে তিনি জানান। দুই সূত্রের বরাতে দ্য টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, নেতানিয়াহু রবিবার ওয়াশিংটনে চার দিনের সফরে যেতে পারেন এবং ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করবেন। তবে তার প্রোস্টেট সার্জারির পর স্বাস্থ্যের অবস্থা বিবেচনায় এই সফর চূড়ান্ত হয়নি।
ইসরায়েলের ডানপন্থি রাজনীতিবিদদের একটি অংশ গাজা উপত্যকায় ফিলিস্তিনিদের পুনর্বাসনের প্রস্তাবকে সমর্থন জানিয়েছে। ইসরায়েলের অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোত্রিচ এবং ওটজমা ইয়েহুদিত দলের নেতা ইতামার বেন গভির ট্রাম্পের প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়া
ট্রাম্পের এই প্রস্তাব নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ মহলেও বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে। ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ মিত্র সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম সিএনএনের এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ফিলিস্তিনিদের অন্য কোথাও সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তাবটি বাস্তবসম্মত নয়। তিনি ট্রাম্পকে মধ্যপ্রাচ্যের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্বেগ
মানবাধিকার সংগঠনগুলো ট্রাম্পের এই প্রস্তাবকে আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থি বলে উল্লেখ করেছে। তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেছে যে, গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের স্থানান্তর করা হলে তা স্থায়ী বাস্তুচ্যুতির দিকে নিয়ে যেতে পারে। ফিলিস্তিনি ও আরব রাষ্ট্রগুলো এই প্রস্তাবকে কঠোর ভাষায় নাকচ করে দিয়েছে।
গত বছর ইসরায়েলে ৬৬ হাজার ৩১৭ জন অভিবাসী পৌঁছেছে, যা আগের বছরের তুলনায় ৫৮ শতাংশ কম। তবে চলতি বছরে ইতোমধ্যে ৩ হাজার ৭০৪ জন অভিবাসী ইসরায়েলে প্রবেশ করেছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি।
ট্রাম্পের এই প্রস্তাব মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার পথে নতুন বাধা সৃষ্টি করতে পারে বলে বিশ্লেষকদের ধারণা। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে এই প্রস্তাবের ব্যাপক সমালোচনা আসছে এবং ফিলিস্তিনিদের ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।