সিরিয়ার নতুন নেতার সঙ্গে ফরাসি ও জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠক

সিরিয়ার নতুন ডি ফ্যাক্টো শাসকের সঙ্গে বৈঠক করেছেন ফ্রান্স ও জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। সাবেক প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের পতনের পর শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) রাজধানী দামেস্কে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। আসাদের পতনের এটিই সিরিয়ায় ইউরোপের শীর্ষ কর্মকর্তাদের প্রথম সফর। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এ খবর জানিয়েছে।

জার্মানির আনালেনা বেয়ারবক এবং ফ্রান্সের জ্যাঁ-নোয়েল ব্যারোত দামেস্কে সিরিয়ার শাসক আহমেদ আল-শারার সঙ্গে আলোচনা করেন। আল-শারার নেতৃত্বাধীন হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) সংগঠন বাশার আল-আসাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের নেতৃত্ব দেয়। পশ্চিমা সরকারগুলো এখন এইচটিএস-এর সন্ত্রাসী সংগঠনের তকমা সরানোর বিষয়ে বিতর্ক করছে।

ব্যারোত শুক্রবার সকালে দামেস্কে পৌঁছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ সিরিয়ার জনগণের প্রতি ফ্রান্স ও জার্মানির সংহতির বার্তা দেন। তিনি লিখেছিলেন, সিরিয়ার জনগণের সেবায় একটি শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক রূপান্তর প্রয়োজন, যা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতাও নিশ্চিত করবে।

দামেস্কে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকের পর ব্যারোত বলেন, কুর্দিদের অন্তর্ভুক্ত করে একটি রাজনৈতিক সমাধানে পৌঁছাতে হবে, যা আজ শুরু হওয়া এই রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার অংশ।

বৈঠকের পর এক সংবাদ সম্মেলনে বেয়ারবক বলেন, ইউরোপ সিরিয়াকে সমর্থন করবে, তবে ইসলামপন্থি কাঠামোর জন্য অর্থায়ন করবে না।

তিনি আরও বলেন, জাতিগত ও ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলোর পাশাপাশি নারীদেরও সংবিধান প্রণয়ন প্রক্রিয়া ও ভবিষ্যৎ সরকারে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা সিরিয়ার সেডনায়া কারাগার পরিদর্শন করেন। এখানে আসাদের শাসনামলে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, নির্যাতন ও জোরপূর্বক গুমের ঘটনা ঘটেছে।

বেয়ারবক বলেন, আসাদ শাসনের অর্থ কী ছিল তা আমরা সেডনায়ায় দেখেছি। এটি শুধু সেই অমানবিক মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের একটি ক্ষুদ্র ধারণা দেয়।

তিনি আরও বলেন, একটি জবাবদিহি কাঠামো সিরিয়ার জনগণকে ধীরে ধীরে তাদের গভীর ক্ষত থেকে সেরে উঠতে সাহায্য করতে পারে।

সিরিয়া সফরের আগে বেয়ারবক নতুন সরকারের প্রতি প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ পরিহারের আহ্বান জানান। এছাড়া তিনি নির্বাচন দেরি না করার এবং বিচার ও শিক্ষা ব্যবস্থায় ধর্মীয় উপাদান অন্তর্ভুক্তি বন্ধের অনুরোধ করেন।

নতুন সিরীয় কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে শিক্ষাক্রম পরিবর্তনের ঘোষণা দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে নারীদের প্রেম ও ভালোবাসা সম্পর্কিত কবিতা এবং প্রাচীন ইতিহাসের দেবতা সম্পর্কিত রচনা বাদ দেওয়া।

শাসন ব্যবস্থার বিষয়ে আল-শারা জানান, একটি নতুন খসড়া সংবিধান উপস্থাপন করতে তিন বছর সময় লাগতে পারে এবং নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে আরও এক বছর লাগবে।

বেয়ারবক বলেন, এইচটিএস সম্পর্কে যে সন্দেহ রয়েছে তা দূর করতে এবং সিরিয়াকে একটি কার্যকর রাষ্ট্র হিসেবে পুরো ভূখণ্ডের নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধার করতে সহায়তা করতে চায় জার্মানি।