সিরিয়ার নতুন নেতৃত্বের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনে পশ্চিমা দেশগুলো ধীরে ধীরে তাদের কূটনৈতিক যোগাযোগ বাড়াচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে জার্মানি ও ফ্রান্সের কর্মকর্তারা মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) দামেস্কে সিরিয়ার নতুন প্রশাসনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে। এর আগে, সোমবার রাতে ব্রিটিশ কূটনীতিকরা নতুন প্রশাসনের নেতা আহমেদ আল-শারারার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
৯ দিন আগে বাশার আল-আসাদ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর শারারার নেতৃত্বাধীন ইসলামপন্থি সংগঠন হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) নতুন প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ আল-বশিরকে নিয়োগ দেয়। বশির জানিয়েছেন, দেশটির অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সংকটাপন্ন এবং আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার অত্যন্ত জরুরি।
সোমবার ব্রিটিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিনিধি দল শারারার সঙ্গে বৈঠক করে। বৈঠকে শারারা আন্তর্জাতিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপন এবং সিরিয়ায় শরণার্থীদের ফিরে আসার জন্য নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আহ্বান জানান।
সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সানা জানিয়েছে, শারারা আইন ও প্রাতিষ্ঠানিক শাসন প্রতিষ্ঠার ওপর জোর দিয়েছেন এবং ব্রিটেনের আন্তর্জাতিক ভূমিকার কথা উল্লেখ করেছেন।
সানা প্রকাশিত ছবিতে শারারাকে স্যুট ও খোলা কলারের পোশাকে দেখা গেছে। যা এইচটিএসের সাবেক আল-কায়েদা সংশ্লিষ্ট নেতার থেকে তার পরিবর্তনের প্রতীক হিসেবে দেখা হচ্ছে। এই বৈঠক পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে সিরিয়ার নতুন নেতৃত্বের সম্পর্কের একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
বাশার আল-আসাদের পতন ও এইচটিএসের ক্ষমতা দখলের ফলে সিরিয়ায় রাশিয়া ও ইরানের প্রভাব উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। তবে, এইচটিএসের সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে পূর্বের পরিচয় এবং দামেস্কের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা পশ্চিমা দেশগুলোর জন্য বড় বাধা হিসেবে রয়ে গেছে।
ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি জানিয়েছেন, তাদের একটি প্রতিনিধি দল সিরিয়ার অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসন ও সুশীল সমাজের সঙ্গে যোগাযোগ করতে দামেস্কে পাঠানো হয়েছে। একইভাবে, জার্মানির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা মঙ্গলবার এইচটিএস প্রতিনিধিদের সঙ্গে সিরিয়ার সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা এবং একটি অন্তর্বর্তীকালীন প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করবে।
সিরিয়ার নতুন প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ আল-বশির আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় পুনর্গঠন করা হবে। বিদ্রোহী গোষ্ঠী এবং আসাদের সেনাবাহিনী থেকে পলাতক কর্মকর্তাদের এতে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
তিনি বলেন, সিরিয়া সব সিরীয়দের জন্য। ভবিষ্যতের সিরিয়া গঠনে সবাই আমাদের অংশীদার। তবে, শঙ্কিতদের উদ্দেশে তিনি বলেছেন, ইসলামের ন্যায়বিচার এবং ক্ষমাশীলতার প্রতি যারা বিশ্বাস রাখে না, তারাই এই বিষয়ে আতঙ্কিত।
বশির আরও উল্লেখ করেন যে, তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে মার্চ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবেন।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান কাজা কালাস বলেছেন, যদি সিরিয়ার নতুন নেতৃত্ব একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার গঠনে ইতিবাচক পদক্ষেপ নেয় এবং নারীদের ও সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষা করে, তবে নিষেধাজ্ঞা শিথিল করার বিষয়ে প্রস্তুত থাকা উচিত।
২০১১ সালে আসাদের দমনমূলক শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন থেকে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ শুরু হয়েছিল। এতে লাখ লাখ সিরীয়কে দেশ ছাড়তে বাধ্য হতে হয়। এদের মধ্যে প্রায় ১০ লাখ শরণার্থী জার্মানিতে আশ্রয় নিয়েছে।
ফ্রান্সের কূটনীতিকদেরও মঙ্গলবার দামেস্কে এইচটিএস প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে। অন্যদিকে, মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর জানিয়েছে, গত এক সপ্তাহে এইচটিএসের সঙ্গে তাদের একাধিক যোগাযোগ হয়েছে।