ইসরায়েল ইউএনআরডব্লিউএকে নিষিদ্ধ করায় জাতিসংঘসহ বিশ্বজুড়ে নিন্দার ঝড়

জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থার (ইউএনআরডব্লিউএ) কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে ইসরায়েলি পার্লামেন্টে বিতর্কিত একটি বিল পাস হয়েছে। সোমবার (২৯ অক্টোবর) পাস হওয়া বিলে  ইউএনআরডব্লিউএকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে অভিহিত করে ইসরায়েলি ভূখণ্ডে এর কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়। এর ফলে গাজা ও অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইউএনআরডব্লিউএ’র মাধ্যমে ফিলিস্তিনিদের জন্য জীবন রক্ষাকারী সহায়তা প্রদান বন্ধ হয়ে যাবে। ১৯৪৯ সাল থেকে ইউএনআরডব্লিউএ গাজা, পশ্চিম তীর, লেবানন, জর্ডান এবং সিরিয়ায় লাখ লাখ ফিলিস্তিনি শরণার্থীকে সহায়তা দিয়ে আসছে। ইসরায়েলের এই পদক্ষেপে তীব্র নিন্দা জানিয়েছে জাতিসংঘসহ অন্য দেশগুলো। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এ খবর জানিয়েছে।

জাতিসংঘ

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস  ইউএনআরডব্লিউএ’র কাজকে ‘অপরিহার্য’ বলে অভিহিত করেছেন। বলেছেন, এর কোনও বিকল্প নেই।
তিনি বলেন, ‘এই আইন  বাস্তবায়িত হলে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে শরণার্থীদের জন্য ধ্বংসাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে যা অগ্রহণযোগ্য।’ ইসরায়েলকে ‘জাতিসংঘ সনদ ও আন্তর্জাতিক আইনের আওতাধীন বাধ্যবাধকতা অনুযায়ী আচরণ করার’ আহ্বান জানান গুতেরেস।

ইউএনআরডব্লিউএ

ইউএনআরডব্লিউএ প্রধান ফিলিপ লাজারিনি এই পদক্ষেপকে ‘বিপজ্জনক নজির’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। কারণ এটি ‘জাতিসংঘ সনদের বিরোধী এবং আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে ইসরায়েলের বাধ্যবাধকতার লঙ্ঘন।’ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে তিনি বলেন, ‘এই আইনগুলো শুধু ফিলিস্তিনিদের কষ্ট আরও বাড়াবে।’

ফিলিস্তিন

ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্সি ইসরায়েলের এই আইন প্রত্যাখ্যান করেছে ও নিন্দা জানিয়েছে। রামাল্লায় প্রেসিডেন্সির মুখপাত্র নাবিল আবু রুদাইনাহ বলেন, ‘নেসেটে বিপুল ভোটে এই সিদ্ধান্ত ইসরায়েলের ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রে রূপান্তরের প্রতিফলন।’

চীন

জাতিসংঘে চীনা দূত ফু কং ইসরায়েলের এই পদক্ষেপকে ‘অসহনীয়’ বলে উল্লেখ করেছেন। নিউইয়র্কে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আমরা এই সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করছি। আমর আ বিশ্বাস করি, ইউএনআরডব্লিউএ গাজায় ফিলিস্তিনি জনগণের জন্য জীবনরেখা বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।' 

রাশিয়া

জাতিসংঘে রাশিয়ার দূত ভাসিলি নেবেনজিয়া ইসরায়েলের ইউএনআরডব্লিউএ নিষিদ্ধকরণকে ‘ভয়াবহ’ বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্রকে ইউএনআরডব্লিউএ’তে অর্থ সহায়তা প্রদানের আহ্বান জানান, যাতে তারা সংস্থাটির প্রতি তাদের প্রতিশ্রুতি দেখাতে পারে।

যুক্তরাজ্য

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। বলেছেন, ইসরায়েলের এই আইন ইউএনআরডব্লিউএ’র গুরুত্বপূর্ণ কাজকে অসম্ভব করে তুলবে। তিনি গাজার মানবিক পরিস্থিতিকে ‘পুরোপুরি অগ্রহণযোগ্য’ বলে অভিহিত করেছেন। বলেছেন, ইসরায়েলকে অবশ্যই গাজার বেসামরিকদের কাছে পর্যাপ্ত সাহায্য পৌঁছানোর নিশ্চয়তা দিতে হবে।

জর্ডান

জর্ডানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইসরায়েলের এই পদক্ষেপকে ‘আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন এবং ফিলিস্তিনে দখলকারী শক্তি হিসেবে ইসরায়েলের বাধ্যবাধকতার লঙ্ঘন’ বলে উল্লেখ করেছে। ইউএনআরডব্লিউএকে রাজনৈতিকভাবে ‘হত্যার প্রচেষ্টা’ বিপর্যয়কর পরিণতির দিকে নিয়ে যাবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।

আয়ারল্যান্ড, নরওয়ে, স্লোভেনিয়া ও স্পেন

এই চারটি ইউরোপীয় দেশ-যাদের প্রত্যেকেই ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছে। এক যৌথ বিবৃতিতে এই চার দেশ গাজায় ইসরাইয়েলের ইউএনআরডব্লিউএ’র কার্যক্রম নিষিদ্ধের জানিয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ইউএনআরডব্লিউ’র জন্য জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের একটি ম্যান্ডেট রয়েছে। এই আইন জাতিসংঘ এবং বহুপাক্ষিক ব্যবস্থা সংস্থাগুলোর জন্য একটি গুরুতর নজির স্থাপন করে।’

অস্ট্রেলিয়া

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেনি ওং বলেছেন, ‘অস্ট্রেলিয়া আবারও ইসরায়েলকে  আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের বাধ্যতামূলক আদেশ মেনে চলার আহ্বান জানায় যাতে গাজায় বড় পরিসরে মৌলিক সেবা এবং মানবিক সহায়তা প্রদান করা যায়।

বেলজিয়াম

বেলজিয়ামের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাজা লাহবিব ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষকে ইউএনআরডব্লিউএকে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। লাহবিব বলেছেন, 'গাজা, পশ্চিম তীর, পূর্ব জেরুজালেম এবং লেবানন, সিরিয়া ও জর্ডান জুড়ে ইউএনআরডব্লিউএ জীবন রক্ষাকারী সেবা প্রদান করে।’

সুইজারল্যান্ড

সুইস পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে বলেছে, ইসরায়েলের এই আইনের কারণে সৃষ্ট মানবিক, রাজনৈতিক এবং আইনগত প্রভাবের বিষয়ে তারা উদ্বিগ্ন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা

ডব্লিউএইচও মহাপরিচালক টেড্রস অ্যাধানম গেব্রিয়াসিস বলেছেন, ইউএনআরডব্লিউএ গত সাত দশক ধরে ফিলিস্তিনি জনগণের জন্য ‘অপরিহার্য জীবনরেখা’ হয়ে আছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে তিনি বলেছেন, এই আইন ইসরায়েলের বাধ্যবাধকতা ও দায়িত্বের লঙ্ঘন করে এবং যারা ইউএনআরডব্লিউএ ওপর নির্ভর করে তাদের জীবন ও স্বাস্থ্যকে হুমকির মুখে ফেলে।