মধ্যপ্রাচ্যে তেলের ডিপোতে হামলার আশঙ্কা

তেল সরবরাহ বন্ধ হওয়ার ধাক্কা কি সামলাতে পারবে ওপেক প্লাস?

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের হামলার পর ইরান ও লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গেও সংঘাতে জড়িয়েছে ইসরায়েল। এরমধ্যে চলমান ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনা তুঙ্গে রয়েছে। তেল বিশ্লেষকরা বলছেন, এ অবস্থায় ইসরায়েল যদি ইরানি তেলের ডিপোগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করে এবং এতে যদি ইরানি সরবারাহ বন্ধ হয়ে যায়, তবে সে ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে পারবে ওপেক প্লাস। কিন্তু ইরান যদি প্রতিশোধমূলকভাবে প্রতিবেশি দেশগুলোর তেলের ডিপোকে লক্ষ্যবস্তু করে, তবে সে ধাক্কা ওপেক প্লাস কাটিয়ে উঠতে পারবে না। এক প্রতিবেদনে বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এই খবর জানিয়েছে।

ইসরায়েলি বিমান হামলার জবাবে মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) ইসরায়েলে কয়েকশ ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে ইরান। এই হামলা চালিয়ে ইরান একটি বড় ভুল করেছে এবং দেশটিকে এর খেসারত দিতে হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। জবাবে পাল্টা হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইরান। এই হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েল যদি পাল্টা জবাব দেয় তবে ইরানও ছাড় দেওয়ার পাত্র নয়।

মার্কিন সংবাদ অ্যাক্সিওস বুধবার ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, ইসরায়েলের কাছে থাকা বিকল্পগেুলোর মধ্যে অন্যতম হলো, অন্যান্য কৌশলগত স্থাপনার মধ্যে ইরানের তেল উৎপাদনকারী কেন্দ্রগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করা। ইরান ওপেক জোটের একটি অন্যতম সদস্য। দেশটি প্রতিদিন প্রায় ৩২ লাখ ব্যারেল তেল উৎপাদন করে যা বৈশ্বিক উৎপাদনের ৩ শতাংশ।

মার্কিন নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও চলতি বছর ইরানের তেল রফতানি বিগত বহু বছরের তুলনায় দৈনিক সর্বোচ্চ ১ দশমিক ৭ মিলিয়ন ব্যারেলের কাছাকাছি পৌঁছেছে। এর অধিকাংশ সরবরাহ কিনে নেয় তেল পরিশোধনকারী চাইনিজ কোম্পানিগুলো। ইরানের ওপর একতরফা মার্কিন নিষেধাজ্ঞাকে স্বীকৃতি দেয় না বেইজিং।

এনার্জি অ্যাসপেক্টস-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা অমৃতা সেন বলেছেন, ‘তাত্ত্বিকভাবে, আমরা যদি ইরানে উৎপাদিত তেলের সব সরবরাহ হারিয়ে ফেলি—ওপেক প্লাসের সে ধাক্কা সামলানোর যথেষ্ট অতিরিক্ত সক্ষমতা আছে।’

ওপেক প্লাসে ওপেক এবং রাশিয়া ও কাজাখস্তানের মতো মিত্ররা রয়েছে। এই সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বৈশ্বিক চাহিদা কম থাকায় তেলের মূল্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে উৎপাদন কমিয়েছে জোটটি। ফলে এর মজুদে লাখ লাখ ব্যারেল অতিরিক্ত তেলে রয়েছে।

ওপেক প্লাসের তেল উৎপাদনকারীরা বর্তমানে উৎপাদন দৈনিক মোট ৫৮ লাখ ৬০ হাজার ব্যারেল কমিয়েছে। বিশ্লেষকরা অনুমান করেছেন, সৌদি আরব দৈনিক ৩০ লাখ ব্যারেল এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত ১৪ লাখ ব্যারেল উৎপাদন বাড়াতে সক্ষম।

ওপেক প্লাসের বৈঠক নিয়ে অবগত একটি সূত্র জানিয়েছে, বুধবারের বৈঠকে তেল উৎপাদন কমানো বিষয়ে সম্মতি নিয়ে আলোচনা করেছে ওপেক প্লাস। তবে এসময় ইসরায়েল-ইরান দ্বন্দ্ব নিয়ে আলোচনা করেনি জোটটি। তিনি জানান, ‘ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং চলমান সংঘাত নিয়ে উল্লিখিত একমাত্র কথা ছিল, এটি যাতে বর্ধিত না হয় সেই প্রত্যাশা।’

ইউবিএস-এর বিশ্লেষক জিওভান্নি স্টাউনোভো বলেছেন, যদিও ওপেকের কাছে ইরানি সরবরাহের ক্ষতি পূরণের জন্য যথেষ্ট অতিরিক্ত সক্ষমতা রয়েছে, তবে সেই ক্ষমতার অধিকাশই মধ্যপ্রাচ্যের উপসাগরীয় অঞ্চলের ওপর নির্ভরশীল। তাই এই সংঘাত আরও বাড়লে এটি জোটের জন্য সম্ভাব্য একটি ঝুঁকি হবে।’

তিনি বলেন, যদি মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর জ্বালানি অবকাঠামোর ওপর পুনরায় আক্রমণ হয়, তবে ঘাটতি পূরণের প্রকৃত সক্ষমতা অনেক কম হতে পারে। যদি বড় ধরনের বিঘ্ন ঘটে তবে পশ্চিমা দেশগুলোকে নিজেদর কৌশলগত মজুদ ব্যবহার করা লাগতে পারে।

এখন পর্যন্ত ইরানের তেল স্থাপনায় হামলা করা থেকে নিজেদের বিরত রেখেছে ইসরায়েল। তেল বিশ্লেষক ও নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, ইরানের তেল পরিশোধন স্থাপনা ও খার্গ আইল্যান্ড অয়েল পোর্টকে লক্ষ্যবস্তু করতে পারে ইসরায়েল, যেটি দেশের অপরিশোধিত তেল রফতানির প্রায় ৯০ শতাংশই পরিচালনা করে।