ইসরায়েলি সম্ভাব্য পাল্টা হামলা মোকাবিলার প্রস্তুতি নিচ্ছে ইরান। বিশেষ করে দেশটির পারমাণবিক ও তেলের স্থাপনাগুলোকে নিশানা বানানোর আশঙ্কা করা হচ্ছে। এমন উত্তেজনার মধ্যে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি পশ্চিমাদের মধ্যপ্রাচ্য ছেড়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। বুধবার (২ অক্টোবর) শিক্ষার্থী ও বিজ্ঞানীদের সঙ্গে এক বৈঠকে খামেনি এই বার্তা দেন। এটি ছিল ইসরায়েলে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর পর তার প্রথম প্রকাশ্য বক্তব্য। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান এ খবর জানিয়েছে।
খামেনি বলেন, ইরান এখনও নাসরাল্লাহর হত্যার শোকে আচ্ছন্ন। তবে শোকের মানে এই নয় যে আমরা হতাশ হয়ে বসে আছি। ইসরায়েলে হামলা ছিল সঠিক ও বৈধ। ইরানের সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং প্রতিরোধ ক্ষমতা পুনরুদ্ধারের জন্য এটি অনিবার্য ছিল।
খামেনি আরও বলেছেন, পশ্চিম এশিয়ায় যুদ্ধ অবসানের একমাত্র উপায় হলো এই অঞ্চল থেকে আমেরিকাকে বিতাড়িত করা। আমাদের এই অঞ্চলের সমস্যা অর্থাৎ যুদ্ধ-সংঘাতের মূলে রয়েছে শান্তি ও স্থিতিশীলতার বুলি আওড়ানো দেশগুলো অর্থাৎ আমেরিকা এবং কিছু ইউরোপীয় দেশ। যুক্তরাষ্ট্র এবং কিছু ইউরোপীয় দেশ পশ্চিম এশিয়া থেকে নিজেদের গুটিয়ে নিলে নিঃসন্দেহে যুদ্ধ-সংঘাতের অবসান ঘটবে। এর ফলে এই অঞ্চলের দেশগুলো একসঙ্গে সুখ-শান্তি ও নিরাপত্তার মধ্যে বসবাস করতে পারবে।
ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি বিভিন্ন কূটনৈতিক আলাপের মাধ্যমে ইউরোপীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের জানান, ইরান উত্তেজনা বাড়াতে চায় না। তার দাবি, ইরানের হামলা ছিল কেবল সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে, বেসামরিক এলাকায় নয়। যা ইসরায়েলি হামলার বিপরীতমুখী।
আরাকচি বলেন, আমরা যুক্তরাষ্ট্রকে সরাসরি কোনও সতর্কবার্তা পাঠাইনি। তবে সুইজারল্যান্ডের মাধ্যমে বার্তা বিনিময় করেছি। যা হামলার পর যুক্তরাষ্ট্রকে জানানো হয়। সুইজারল্যান্ড দীর্ঘদিন ধরে তেহরানে মার্কিন কূটনৈতিক মাধ্যম হিসেবে কাজ করছে।
ইরানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী আজিজ নাসিরজাদেহ ইউরোপকে সতর্ক করে বলেছেন, ইসরায়েলকে নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। তা না হলে ইরানের প্রতিক্রিয়া দেখা যাবে এবং অঞ্চলটি একটি বড় যুদ্ধে প্রবেশ করবে।
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে ইরান নিজেকে জাতিসংঘ সনদের অধীনে প্রতিরক্ষা হিসেবে উপস্থাপন করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ইরানের সামরিক প্রধান মেজর জেনারেল মোহাম্মদ বাগেরি বলেন, ইসরায়েলের নেভাতিমসহ একাধিক বিমানঘাঁটি লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়েছিল। ওই ঘাঁটিগুলোতে এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান রয়েছে। হামলার সময় ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কাউন্সিলের (আইআরজিসি) নেতৃত্বের উচ্ছ্বাসের ছবি প্রচারিত হয়েছে। যেখানে তাদের ‘চমৎকার!’ বলে চিৎকার করতে দেখা গেছে।
ইসরায়েলি পাল্টা হামলার আশঙ্কা সম্পর্কে পার্লামেন্টের স্পিকার মোহাম্মদ বাকির ক্যালিবাফ বলেন, আমরা ইসরায়েলের সম্ভাব্য পাগলামির জন্য প্রস্তুতি নিয়েছি এবং আমাদের পরবর্তী প্রতিক্রিয়া অনেক বড় হবে।
তবে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, ইরান জানে যে, তাদের রাশিয়ার সরবরাহকৃত আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা খুব শক্তিশালী নয়। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু মধ্যপ্রাচ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য পাল্টাতে চান। যা ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে দুর্বল করার ইঙ্গিত বহন করে।
ইরান দেশটির জনগণের প্রতিক্রিয়া নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। সরকার ঘোষণা করেছে যে, জ্বালানির দাম বাড়ানোর কোনও পরিকল্পনা নেই, কারণ এটি দেশের ভেতরে খুব সংবেদনশীল বিষয়।
আইআরজিসি জনগণকে ইসরায়েলপন্থি বক্তব্য সম্পর্কে সোশ্যাল মিডিয়ায় নজরদারি করার আহ্বান জানিয়েছে। সব বাণিজ্যিক বিমান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
ইরানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনা হলো ফোর্দো। যা কোম শহরের কাছে একটি ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র। এই স্থাপনার ওপর ইসরায়েলের হামলা হলে ইরানের ভেতরে পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের বিষয়ে নতুন করে বিতর্ক শুরু হতে পারে।
সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ পশ্চিমা দেশগুলোর পক্ষপাতিত্বের তীব্র সমালোচনা করে বলেছেন, পশ্চিমা দেশগুলো ইসরায়েলের গণহত্যাকে সহযোগিতা করেছে এবং ইরান, ফিলিস্তিন, লেবানন, সিরিয়া ও ইয়েমেনের ওপর ইসরায়েলি আক্রমণকে প্রশ্রয় দিয়েছে। ইরানের আত্মরক্ষার অধিকার আছে। ইসরায়েলের উসকানি ও উত্তেজনার জন্য তারা ও তাদের মিত্ররা দায়ী।