হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান প্রয়োজন, মার্কিন দূতকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট বলেছেন, শুধু সামরিক অভিযানই উত্তর সীমান্তের হাজার হাজার ইসরায়েলি বাসিন্দাকে বাড়িতে ফেরাতে সক্ষম হবে। কারণ হিজবুল্লাহর রকেট ও ড্রোন হামলা উত্তরাঞ্চলে অব্যাহত রয়েছে। সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) মার্কিন রাষ্ট্রদূত আমোস হকস্টেইনের সঙ্গে সাক্ষাতে গ্যালান্ট এই মন্তব্য করেন। বৈঠকে হিজবুল্লাহর সঙ্গে যুদ্ধের বিকল্প কোনও সমঝোতার সম্ভাবনাকে প্রায় শেষ বলে তিনি উল্লেখ করেন। টাইমস অব ইসরায়েল এ খবর জানিয়েছে।

গ্যালান্টের কার্যালয় থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মার্কিন দূতকে তিনি বলেছেন, হিজবুল্লাহ হামাসের সঙ্গে যোগসাজশ বজায় রেখে চলেছে এবং সংঘাত বন্ধ করতে রাজি নয়। ফলে উত্তরের ইসরায়েলি বাসিন্দাদের নিরাপদে বাড়ি ফেরানোর একমাত্র উপায় সামরিক অভিযান।

হকস্টেইন মাসের পর মাস ধরে ইসরায়েল-লেবানন সীমান্তের উত্তেজনা নিয়ে কূটনৈতিক সমাধানের চেষ্টা করে আসছেন। তবে গ্যালান্টকে তিনি সতর্ক করে দেন যে, হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে বড় আকারের ইসরায়েলি সামরিক অভিযান উত্তরাঞ্চলের বাসিন্দাদের বাড়িতে ফেরাবে না, বরং আঞ্চলিক যুদ্ধের ঝুঁকি বাড়াবে।

হকস্টেইন জানান, যুক্তরাষ্ট্র হিজবুল্লাহর সঙ্গে উত্তেজনা নিরসনে কূটনৈতিক সমাধানকে সমর্থন করে, তা গাজার যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে হোক বা অন্য কোনও উপায়ে।

গ্যালান্ট ও ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে হকস্টেইনের বৈঠকের পর সোমবার সন্ধ্যায় তেল আবিবে ইসরায়েলি নিরাপত্তা মন্ত্রিসভার বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এই বৈঠকে উত্তরের হিজবুল্লাহ সম্পর্কিত উত্তেজনা এবং বাসিন্দাদের বাড়ি ফেরানোর সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা হবে।

এর আগে, গ্যালান্ট যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনকে জানান, উত্তর সীমান্তে হিজবুল্লাহর সঙ্গে সংঘাতের কূটনৈতিক সমাধানের সময় শেষ হয়ে আসছে। তিনি বলেন, হিজবুল্লাহ হামাসের সঙ্গে যোগসাজশ করছে—পরিস্থিতির দিক নির্দেশনা স্পষ্ট।

যদিও গ্যালান্ট লেবাননে বড় আকারের সামরিক অভিযানের বিরোধিতা করছেন বলে হিব্রু ভাষার সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, বড় অভিযানের পক্ষে নেতানিয়াহু পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।

এদিকে, লেবানন থেকে সোমবার দিনভর রকেট ও ড্রোন হামলায় ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলের খোলা স্থানে আগুন লাগার ঘটনা ঘটলেও কোনও হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। এর জবাবে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) দক্ষিণ লেবাননে হিজবুল্লাহর অবস্থানে বোমাবর্ষণ করে, যেখানে অন্তত এক হিজবুল্লাহ যোদ্ধার মৃত্যু হয়েছে।

গাজার সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হামাসের ৭ অক্টোবরের হামলার পরদিন থেকেই হিজবুল্লাহ ইসরায়েলে হামলা শুরু করে। হিজবুল্লাহ বলেছে, গাজার যুদ্ধ শেষ না হওয়া পর্যন্ত তারা হামলা চালিয়ে যাবে। অনেক ইসরায়েলি আশঙ্কা করছে, হিজবুল্লাহ সীমান্তে সক্রিয় থাকলে উত্তরের অঞ্চল নিরাপদ থাকবে না।

সোমবার দুপুরে ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান দক্ষিণ লেবাননের তায়ার হারফা, ওডাইসেহ, ব্লিদা, কাফর শুবা, ও হুলায় হিজবুল্লাহর অস্ত্রাগার ও ভবনে হামলা চালায়। লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, হুলার হামলায় এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। পরে জানা গেছে তিনি হিজবুল্লাহ সদস্য। এছাড়া এই হামলায় আরও দুই জন আহত হন।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানায়, লেবানন থেকে গ্যালিলি অঞ্চলে কয়েকটি রকেট ছোড়া হয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি প্রতিরোধ করা হয় এবং বাকিগুলো খোলা এলাকায় আঘাত হানে। এছাড়া দিনব্যাপী ড্রোন হামলা ও রকেট হামলার সাইরেন বেজেছে কিরিয়াত শমোনা, মেতুলা ও উত্তর সীমান্তের কয়েকটি বসতিতে।

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, উত্তরাঞ্চলের ৯৭টি সম্প্রদায়ে ৯ হাজার নতুন অস্ত্র সরবরাহ করা হয়েছে, যা উত্তরাঞ্চলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা শক্তিশালী করবে।

৭ অক্টোবর হামাস গাজা থেকে ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে আক্রমণ চালিয়ে প্রায় ১ হাজার ২০০ জন বেসামরিক নাগরিককে হত্যা করে। এরপর থেকেই ইসরায়েল হামাসকে নির্মূল করার উদ্দেশ্যে গাজায় সামরিক অভিযান শুরু করে। ইসরায়েলি আগ্রাসনে গাজায় নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা ৪১ হাজার ছাড়িয়ে গেছে।

৮ অক্টোবর থেকে হিজবুল্লাহ সীমান্তের ইসরায়েলি সামরিক অবস্থান ও বসতিতে হামলা চালিয়ে আসছে। এখন পর্যন্ত এই সংঘর্ষে ইসরায়েলের ২৬ জন বেসামরিক নাগরিক ও ২০ জন আইডিএফ সেনা নিহত হয়েছে। পাশাপাশি, সিরিয়ার দিক থেকেও বেশ কিছু হামলার ঘটনা ঘটেছে।