কৌশল পাল্টে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীকে মোকাবিলা করছে হামাস

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় আট মাসের যুদ্ধে নিজেদের প্রায় অর্ধেক যোদ্ধাকে হারিয়েছে সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। অঞ্চলটির নিয়ন্ত্রণ নিতে ইসরায়েলি প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করতে এখন হিট অ্যান্ড রান যুদ্ধ কৌশল অবলম্বন করছে তারা। মার্কিন ও ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের বরাতে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এই তথ্য জানিয়েছে।

যুদ্ধক্ষেত্রের পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত তিন ঊর্ধ্বতন মার্কিন কর্মকর্তার মতে, গাজার শাসক গোষ্ঠীটির বর্তমান যোদ্ধার সংখ্যা কমে ৯ থেকে ১২ হাজার হয়েছে। এই সংখ্যা যুদ্ধ শুরুর আগে মার্কিন অনুমানের চেয়ে কম। মার্কিন প্রশাসনের মতে, যুদ্ধের পূর্বে হামাসের ২০ থেকে ২৫ হাজার যোদ্ধা রয়েছে।

এদিকে, ইসরায়েল বলছে, গাজা অভিযানে এখন পর্যন্ত প্রায় ৩০০ সেনা হারিয়েছে তারা।

ওই কর্মকর্তাদের একজন বলেছেন, হামাস যোদ্ধারা এখন দক্ষিণাঞ্চলীয় রাফাহ শহরে ইসরায়েলি বাহিনীর সঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী সংঘর্ষ এড়িয়ে চলছে। এর পরিবর্তে ইসরায়েল নিয়ন্ত্রিত এলাকায় লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করার জন্য ঘাপটি মেরে থাকা ও হাত বোমা দিয়ে হামলার কৌশল ব্যবহার করছে।

উইসাম ইব্রাহিমসহ গাজার বেশ কয়েকজন বাসিন্দা বলেছেন, তারাও হামাসের যুদ্ধ কৌশলে পরিবর্তন লক্ষ্য করেছেন।

ইব্রাহিম ফোনে রয়টার্সকে বলেন, ‘গত মাসগুলোতেও হামাস যোদ্ধারা গাজায় ইসরায়েলি সেনা প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গেই বাধা দিত ও গুলি চালাত। তবে এখন তাদের যুদ্ধ কৌশলে একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এসেছে। এখন তারা ইসরায়েলি সেনাদের জড়ো হওয়ার অপেক্ষায় থাকে এবং সুযোগ বুঝে আকস্মিক হামলা চালায়।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন মার্কিন কর্মকর্তা বলেছেন, এই ধরনের কৌশলগুলো হামাসের এই প্রতিরোধকে আরও কয়েক মাস ধরে টিকিয়ে রাখতে পারে। সুড়ঙ্গ দিয়ে গাজায় পাচার করে নিয়ে আসা অস্ত্র এবং অবিস্ফোরিত বিস্ফোরক বা ইসরায়েলি সেনাদের কাছে থেকে জব্দ করা অস্ত্রের ব্যবহার এই কাজে সহযোগিতা করবে।

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাও এই ধরনের দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধের সময়সীমা নিয়ে কথা বলেছিলেন। গত সপ্তাহে তিনি বলেছিলেন, এই যুদ্ধ কমপক্ষে ২০২৪ সালের শেষ পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।

যুদ্ধক্ষেত্রের কৌশল সম্পর্কে হামাসের এক মুখপাত্রকে মন্তব্যের অনুরোধ করা হলে কোনও জবাব দেননি তিনি।

ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্সেস (আইডিএফ)-এর এক মুখপাত্র পিটার লার্নার রয়টার্সকে বলেছেন, এখনও হামাসকে ধ্বংস করার কিছু উপায় আছে। কেননা, ইতোমধ্যে যুদ্ধ চালানোর যে শক্তি ছিল তাদের, তার প্রায় অর্ধেক হারিয়েছে গোষ্ঠীটি।

লার্নার বলেন, হামাসের কৌশলগত পরিবর্তনের সঙ্গে সামরিক বাহিনী খাপ খাইয়ে নিচ্ছে। তবে তিনি এ কথাও স্বীকার করেছেন যে, ইসরায়েল হামাসের প্রত্যেক যোদ্ধাকে নির্মূল করতে বা হামাসের প্রতিটি টানেল ধ্বংস করতে পারবে না।

তিনি বলেন, ‘ভূমিতে থাকা প্রত্যেকটি সন্ত্রাসীকেই হত্যা করতে হবে এমন কোনও লক্ষ্য নেই। আর তা বাস্তবসম্মতও নয়। তবে শাসক হিসেবে হামাসকে ধ্বংস করা একটি অর্জনযোগ্য সামরিক উদ্দেশ্য।’