ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির আব্দোল্লাহিয়ান এবং অন্যান্য কয়েকজন সিনিয়র কর্মকর্তাকে বহনকারী একটি হেলিকপ্টার দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে। ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, পূর্ব আজারবাইজান, আরদাবিল এবং জাঞ্জান প্রদেশ থেকে অন্তত ২০টি উদ্ধারকর্মী দলকে ঘটনাস্থলের উদ্দেশে পাঠানো হয়েছে এবং তারা বর্তমানে উদ্ধারকাজে নিয়োজিত রয়েছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত, হেলিকপ্টারটির সন্ধান এখনও পাননি উদ্ধারকর্মীরা। তবে এতে থাকা একজন যাত্রী ও একজন ক্রু সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে উদ্ধারকর্মীদের। রাইসি ও তার সঙ্গীদের অবস্থা সম্পর্কে নিশ্চিতভাবে কিছু জানা যায়নি।
ইরানি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পাহাড়ি এলাকা এবং ঘন কুয়াশার কারণে অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযানে কয়েক ঘণ্টা সময় লাগতে পারে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আহমেদ ওয়াহিদি রাষ্ট্রীয় টিভিকে বলেছেন, রাইসির নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলটি আজারবাইজান-ইরান সীমান্তে একটি বাঁধ উদ্বোধন শেষে ফেরার পথে কপ্টারটি দুর্ঘটনায় পড়েছে।
তিনি আরও বলেছেন, ইরানের প্রেসিডেন্টের বহরের একটি হেলিকপ্টারকে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে একটি ‘হার্ড ল্যান্ডিং’ করতে হয়েছিল।
ইরানের রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির প্রধান পীর হোসেন কোলিভান্দ রাষ্ট্রীয় টিভিকে বলেছেন, অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযানে সহায়তার জন্য ৪০টি টিমকে ওই এলাকায় পাঠানো হয়েছে। দলগুলো তেহরান, আলবোর্জ, আরদাবিল, জাঞ্জান এবং পূর্ব ও পশ্চিম আজারবাইজানের শহরগুলো থেকে ঘটনাস্থলে যাচ্ছে।
তিনি বলেছেন, এছাড়া ১৫টি রেড ক্রিসেন্ট এএনএসটি টিম (সার্চ ডগ) এবং দুটি রেড ক্রিসেন্ট ড্রোনকে রাইসি এবং তার সঙ্গীদের বহনকারী হেলিকপ্টারটির সন্ধানের জন্য পাঠানো হয়েছে। প্রতিকূল আবহাওয়া এবং এই অঞ্চলে ঘন কুয়াশার কারণে বর্তমানে রেড ক্রিসেন্টের উদ্ধারকারী হেলিকপ্টার ওড়ানো সম্ভব হচ্ছে না এবং উদ্ধারকারী দলগুলো সরেজমিনে তল্লাশি চালাচ্ছে।
সরকারের মুখপাত্র আলী বাহাদোরি জাহরোমি, এক্স-এ একটি পোস্টে বলেছেন, রবিবার মন্ত্রিসভার একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে দুর্ঘটনা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন, প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মোখবার বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের নিয়ে তিনি উত্তরাঞ্চলীয় শহর তাবরিজের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন।
রাষ্ট্রীয় টিভিতে রাইসির নিজ শহর মাশহাদে ইমাম রেজার মাজারে হেলিকপ্টারে থাকা প্রেসিডেন্ট ও তার সফরসঙ্গীদের জন্য প্রার্থনার ছবি সম্প্রচার করা হয়েছে।
দুর্ঘটনাস্থল থেকে সংকেত পেয়েছে সশস্ত্রবাহিনী
হেলিকপ্টার ও ফ্লাইট ক্রুদের একজন সদস্যের মোবাইল ফোন থেকে সংকেত শনাক্ত করেছে সশস্ত্র বাহিনী। পূর্ব আজারবাইজানের ইসলামিক বিপ্লবী গার্ড কর্পসের (আইআরজিসি) কমান্ডার আসগর আব্বাসগোলিজাদেহকে উদ্ধৃত করে ইরানি বার্তা সংস্থা তাসনিমের খবরে এই দাবি করা হয়েছে। তিনি বলেছেন, আমরা এখন পুরো সামরিক বাহিনী নিয়ে এলাকাটির দিকে অগ্রসর হচ্ছি। আশা করছি, জনগণকে সুসংবাদ দিতে পারবো। অঞ্চলটিতে এর বেশি সেনা মোতায়েনের সুযোগ নেই।
অনিশ্চয়তা ছড়াচ্ছে ইরানে
ইরানের টেলিভিশনে হেলিকপ্টারটি খুঁজে পাওয়ার দাবি করা হয়েছিল। কিন্তু পরে রেড ক্রিসেন্টের পক্ষ থেকে তা অস্বীকার করা হয়েছে। সংস্থাটি বলেছে, স্থানীয় সংবাদমাধ্যম এমন খবর ছড়িয়েছে।
দুর্ঘটনার কবলে পড়া রাইসি ও অন্যদের কী ঘটেছে তা জানতে ইরানের সবাই উদ্বেগের সঙ্গে অপেক্ষা করছেন বলে মনে করেন বিশ্লেষক আবাস আসলানি। তিনি বলেছেন, কেউ জানেন না আসলে কী ঘটেছে, হেলিকপ্টারে থাকা প্রেসিডেন্ট ও অন্যরা কী করছেন? কারণ পরিস্থিতি খুব জটিল।
সেন্টার ফর মিডল ইস্ট স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের একজন সিনিয়র রিসার্চ ফেলো আসলানি বলেছেন, সময় যত গড়াচ্ছে আশাবাদ কমছে। কারণ পরিস্থিতি খারাপের দিকে এগোচ্ছে ও রাত গভীর হচ্ছে।
তিনি বলেন, রাজধানী তেহরানে মোটাদাগে এখন অনিশ্চয়তার অনুভুতি বিরাজ করছে।
লেভান্ত ইনস্টিটিউটের সামি নাদের বলেছেন, দুর্ঘটনাটি লেবাননের জন্য আঘাত হিসেবে এসেছে। গাজায় চলমান পরিস্থিতির কারণে লেবাননসহ অঞ্চলটি যখন গুরুত্বপূর্ণ সময় অতিক্রম করছে তখন এটি ঘটলো। এছাড়া ইরানের সঙ্গে বিশ্বের পরাশক্তিগুলোর পারমাণবিক চুক্তির বিষয়ে আলোচনা অচলাবস্থায় পৌঁছাচ্ছে। সেইসঙ্গে এটাও মনে রাখতে হবে, এটি এমন এক মুহূর্তে ঘটলো, যেখানে পারমাণবিক চুক্তি সংক্রান্ত আলোচনা শেষের দিকে।
সূত্র: আল জাজিরা, টিআরটি ওয়ার্ল্ড, সিএনএন
আরও পড়ুন:
রাইসির হেলিকপ্টারের অবস্থান ‘শনাক্ত’, সুসংবাদের প্রত্যাশা
রাইসির হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত: মধ্যপ্রাচ্যসহ আঞ্চলিক নেতাদের প্রতিক্রিয়া
যদি প্রেসিডেন্ট রাইসি না ফেরেন, কী হবে ইরানে
ইরানে হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত: উদ্ধারে বাধা প্রতিকূল আবহাওয়া
বিধ্বস্ত হেলিকপ্টারের সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে: ইরানি টেলিভিশন
ইরানি প্রেসিডেন্ট রাইসির বিষয়ে নরেন্দ্র মোদির উদ্বেগ
ইরানি প্রেসিডেন্টকে বহনকারী হেলিকপ্টারে ‘দুর্ঘটনা’, মেলেনি সন্ধান