ইরানের বিক্ষোভ: তারকা ফুটবলার আলী করিমির ওপর ‘ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা’

ইরানে নারীর পোশাকের স্বাধীনতার দাবিতে সাম্প্রতিক বিক্ষোভের জেরে দেশটি ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা পেয়েছেন তারকা ইরানি ফুটবলার আলী করিমি ও তার পরিবার। ফাঁস হওয়া এক নথিতে বিষয়টি ওঠে আসে।  

করিমি সেই সেলিব্রিটিদের একজন যারা বিক্ষোভে চালানো মারাত্মক ক্র্যাকডাউনের তীব্র সমালোচনা করেছিলেন। এশিয়ার ম্যারাডোনা নামে পরিচিত এই ফুটবলার তখন সংযুক্ত আরব আমিরাতে থাকতেন।

মাহসা আমিনি নামের ২২ বছরের এক কুর্দি তরুণীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ইরানে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। সঠিকভাবে হিজাব না করার অভিযোগে গত সেপ্টেম্বরে তেহরানে গ্রেফতার হন মাহসা। পরে পুলিশ হেফাজতে তার মৃত্যু হয়।

মাহসার পরিবারের দাবি, পুলিশি নির্যাতনে মারা গেছে তাদের মেয়ে। অন্যদিকে পুলিশ বলছে, পুরনো শারীরিক অসুস্থতাই মাহসার মৃত্যুর কারণ।

বিক্ষোভ দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়লেও সহিংসভাবে তা দমন করা হয়েছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, বিক্ষোভ শুরু হওয়ার পর থেকে নিরাপত্তা বাহিনী ৭০ শিশুসহ কমপক্ষে ৫৩০ বিক্ষোভকারীকে হত্যা করেছে।

ফাঁস হওয়া নথিতে বলা হয়েছে, ‘করিমিকে আমাদের এজেন্ট নয়বার ইরানে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। তিনি গুরুতর সতর্কতা পেয়েছেন’।

টপ সিক্রেট চিহ্নিত ২০২২ সালের ২৪ অক্টোবরের চিঠিতে ইরানের বিপ্লবী গার্ডের গোয়েন্দা ইউনিট তেহরানের প্রসিকিউটরকে জানায়, ‘করিমির তার স্ত্রী সাহার দাভারি এবং তার পরিবার দ্বারা প্ররোচিত হয়েছিল’।

১৯৮০-এর দশকের শেষের দিকে ইরান কমিউনিস্ট তুদেহ পার্টির সদস্য হওয়ার অভিযোগে কারিমির স্ত্রী দাভারির বাবা গোলামালী দাভারিকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। সে সময় তিনি ইরানের বিমান বাহিনীর একজন কর্মকর্তা ছিলেন।

নথিতে দাবি করা হয়েছে, করিমির শ্বশুরবাড়ির লোকেরা স্থায়ীভাবে দেশত্যাগ করার জন্য রাজধানী তেহরানের একটি সমৃদ্ধ এলাকায় তাদের প্রাসাদটি ২০ মিলিয়ন ডলারে বিক্রি করতে চেয়েছিল।

নথিতে কারিমি, দাভারি, তার মা, সৎ বাবা, ভাই এবং বোনের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা চেয়েছিল বিপ্লবী গার্ড।

ফাঁস হওয়া চিঠিটি বিবিসি ফার্সিকে দিয়েছে এদালাত-ই আলী (আলির জাস্টিস) নামে একটি হ্যাকিং গ্রুপ।

করিমি বিবিসি ফার্সিকে একটি ফোন সাক্ষাত্কারে বলেছেন, তার বড় ভাইকেও বেশ কয়েকবার ডাকা হয়েছিল। তাকে দেশ ছেড়ে যেতে নিষেধ করা হয়েছিল।

তিনি বলেন, ‘আমার এক বন্ধুকে কুখ্যাত এভিন কারাগারে তিন বা চারবার জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল’।

ইরান ইনস্টাগ্রামে তাদের অনুসরণ করে নিবিড় নজরদারিতে রাখে বলেও জানান কারিমি।

অক্টোবরের গোড়ার দিকে ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমও দাবি করে যে করিমি লাভাসনে তার প্রাসাদ বিক্রি করেছেন। তবে করিমি বিবিসি ফার্সিকে বলেছেন, এটি সত্য নয়।

তিনি বলেন,‘নিরাপত্তা বাহিনী সেখানে অভিযান চালায়। দারোয়ানকে নির্মমভাবে মারধর করে। তখন থেকেই প্রাসাদটি খালি। প্রতিবেশীরা জানিয়েছে যে মাঝেমধ্যে রাতে বাড়িতে লাইট জ্বলে ওঠে। সাদা পোশাকের এজেন্টদের তখন ভেতরে ও বাইরে যেতে দেখেছে তারা’।

কারিমি বলেন, ‘যে কোনও গাড়ি সেখানে যদি পাঁচ মিনিটের জন্যও থামে, নিরাপত্তা বাহিনী তাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে’।

করিমি এবং তার পরিবার এরপর থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে অজ্ঞাত স্থানে চলে যান।

সূত্র: বিবিসি