নতুন মাত্রায় ইরান-ইসরায়েল ছায়াযুদ্ধ

ইসরায়েলে হামলার পরিকল্পনা করছে ইরান। সেই লক্ষ্যে ইরান সমর্থিত ‘জঙ্গি’ গোষ্ঠীগুলোকে আরও পাশে টানছে তেহরান। আর হামলা সমন্বয়ের জন্য কুদস ফোর্সের কমান্ডার ইসমাইল কানি সম্প্রতি হামাস এবং হিজবুল্লাহসহ মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে মিত্র সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোরর নেতাদের সঙ্গে দেখা করেছেন। এর মাধ্যমে  ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলমান ছায়াযুদ্ধ এখন অপ্রত্যাশিত নতুন পর্যায়ে চলে গেছে।

এসব সফরের আলোচনা সম্পর্কে অবগত ব্যক্তিরা মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে বলেছে, ইসলামিক বিপ্লবী গার্ড কর্পসের (আইআরজিসি) অভিজাত কুদস ফোর্সের প্রধান ইসমাইল কানি সম্প্রতি সিরিয়া এবং ইরাকের কিছু অঞ্চলে জঙ্গি নেতাদের সঙ্গে একাধিক গোপন বৈঠক করেছেন।

তারা আরও বলেছেন, কুদস ফোর্সের প্রধান গত সপ্তাহে লেবাননে ছিলেন। বৈরুতের ইরানের দূতাবাসে হামাস, হিজবুল্লাহ এবং ফিলিস্তিনি ইসলামিক জিহাদের নেতাদের সঙ্গে দেখা করেছিলেন তিনি।

ইসমাইল কানি যখন লেবানন সফর করছিলেন তখনই দক্ষিণ লেবানন থেকে ইসরায়েলে রকেট হামলা চালানো হয়। ২০০৬ সালের হিজবুল্লাহ এবং ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধের পর এটি ছিল সবচেয়ে বড় হামলা।

অভিযোগ রয়েছে, হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়াহ এবং তার ডেপুটি সালেহ আল-আরৌরি এবং হিজবুল্লাহ প্রধান হাসান নাসরুল্লাহসহ বৈরুতে জেনারেল কানির বৈঠকে রকেট হামলার বিশদ বিবরণ চূড়ান্ত করেছিলেন।

গাজা এবং সিরিয়া থেকেও ইসরায়েলে রকেট ছোড়া হয়েছিল। জবাবে সেসব অঞ্চলে জঙ্গি ঘাঁটি আছে দাবি করে বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল। আরও হামলার আশঙ্কায় এখন প্রস্তুতিও নিয়ে রেখেছে তেল আবিব।

তেহরানের মিত্রদের একত্রিত করার জন্য জেনারেল কানির প্রচেষ্টা ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যকার অঘোষিত যুদ্ধের একটি স্পষ্ট বার্তা হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ইসরায়েলবিরোধী ইরানের এমন কঠোর মনোভাবের আরেকটি সাম্প্রতিক কারণ রয়েছে। কুদস ফোর্সের নেতা কাসেম সোলাইমানিকে ২০২০ সালে বাগদাদে বিমান হামলা চালিয়ে হত্যা করে যুক্তরাষ্ট্র। ইরান প্রতিজ্ঞা করছিল যেকোন মূল্যে এই হত্যার প্রতিশোধ নেওয়া হবে।

ইরানি কর্মকর্তারা বলছেন, সিরিয়ায় সাম্প্রতিক ইসরায়েলি হামলায় আইআরজিসির বেশ কয়েকজন সামরিক উপদেষ্টা নিহত হয়েছেন।

৬৫ বছরের জেনারেল কানি একজন অভিজ্ঞ কমান্ডার। ইরান-ইরাক যুদ্ধে লড়াই করার পাশাপাশি  সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন তিনি। সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে সমর্থন করার জন্য শিয়া মিলিশিয়াদের নিয়োগ দিয়েছিলেন এই জেনারেল কানি।

২০২০ সালে কুদস ফোর্সের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে জেনারেল কানি তার আঞ্চলিক উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছেন। তিনি মিত্রদের নেটওয়ার্ককে শক্তিশালী করছেন যারা মূলত তেহরানের সমর্থনের ওপর নির্ভর করে।

জেনারেল সোলাইমানি এর আগে মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের সামরিক প্রভাব বিস্তারের জন্য একটি সফল অভিযানের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তিনি সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে হস্তক্ষেপ করেছিলেন এবং দীর্ঘস্থায়ী ইয়েমেন সংঘাতে হুথি বিদ্রোহীদের সমর্থন দিতেন।

ইসরায়েলের অবসরপ্রাপ্ত জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ইয়াকভ আমিদ্রর বলেন, হিজবুল্লাহ এবং হামাসের মতো মিত্রদের ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ দুর্বলতার সময়ে আরও আগ্রাসী করে তুলতে চাইছে ইরান।  

জেনারেল কানির বৈঠকগুলোর পর মার্কিন কর্মকর্তারাও সতর্ক ছিলেন। তারা গোয়েন্দা তথ্য পেয়েছিল মধ্যপ্রাচ্যে একটি বাণিজ্যিক জাহাজে ড্রোন হামলার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।

ইসরায়েলি ও মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, ইসরায়েলবিরোধী কর্মকাণ্ড হিসেবে ইরান গত দুই বছরে পারস্য উপসাগর ও আরব সাগরে বাণিজ্যিক জাহাজে অন্তত চারটি ড্রোন হামলা চালিয়েছে। ড্রোন হামলাগুলোতে ইসরায়েলের সঙ্গে যুক্ত জাহাজগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করার চেষ্টা করেছে।

মার্কিন নৌবাহিনী ইরানে আঘাত হানতে সক্ষম ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র বহনকারী একটি সাবমেরিনের লোহিত সাগরে পাঠানোর ঘোষণা দিয়ে অস্বাভাবিক পদক্ষেপ নিয়েছে। মার্কিন কর্মকর্তারা বলেছেন, এর মাধ্যমে একটি সম্ভাব্য হামলার আশঙ্কা দূর হয়েছে।

সূত্র: ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল