মাদুরোকে হত্যায় সিআইএ’র চক্রান্তের অভিযোগ ভেনিজুয়েলার, প্রত্যাখ্যান যুক্তরাষ্ট্রের

ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোকে হত্যায় মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ’র ষড়যন্ত্রের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ভেনিজুয়েলার সরকারের অভিযোগ ছিল যে সিআইএ এই চক্রান্তে নেতৃত্ব দিচ্ছে। তবে ওয়াশিংটন এই অভিযোগকে ‘সম্পূর্ণ মিথ্যা’ বলে নাকচ করেছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।

ভেনিজুয়েলার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ডিওসদাদো ক্যাবেলো জানান, তিন জন মার্কিন নাগরিক, দুজন স্প্যানিশ ও একজন চেক নাগরিককে আটক করা হয়েছে। তারা দেশকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। ক্যাবেলো এই আটককৃতদের ‘ভাড়াটে সেনা’ হিসেবে অভিহিত করে দাবি করেন, ‘সিআইএ এই অভিযানের নেতৃত্ব দিচ্ছে’ এবং ৪০০-এর বেশি অস্ত্র বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।

মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর এই অভিযোগকে ভিত্তিহীন আখ্যা দিয়ে দাবি করেছে, একজন মার্কিন সামরিক সদস্যকে আটক করা হয়েছে এবং আরও দুজন মার্কিন নাগরিককে আটকের খবর রয়েছে। ক্যাবেলো পাল্টা অভিযোগ করে বলেছেন, আটক ব্যক্তিরা পূর্ব ইউরোপের ‘ফরাসি ভাড়াটে সেনাদের’ সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল এবং ভেনিজুয়েলায় হামলার পরিকল্পনার সঙ্গে যুক্ত ছিল।

ক্যাবেলো আরও জানান, আটককৃতদের কাছ থেকে ৪০০ রাইফেল বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে এবং তাদের বিরুদ্ধে ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের’ ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনা হয়েছে। তিনি আরও দাবি করেন, স্প্যানিশ নাগরিকরা স্পেনের জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা (সিএনআই)-এর সঙ্গে যুক্ত। তবে স্প্যানিশ সরকার এ ধরনের কোনও কাজে জড়িত থাকার দাবি অস্বীকার করেছে।

স্পেনের সরকারি সূত্র জানায়, আটককৃতদের কেউই জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য নয়। বার্তা সংস্থা এএফপিকে দেওয়া এক বিবৃতিতে স্পেন জানায়, ভেনিজুয়েলায় কোনও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতায় স্পেনের জড়িত থাকার কোনও প্রমাণ নেই এবং আমরা এ ধরনের অভিযোগ কঠোরভাবে প্রত্যাখ্যান করছি।’

চেক প্রজাতন্ত্র এখনও এই অভিযোগের বিষয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া জানায়নি।

বিরোধী দলীয় নেত্রী মারিয়া করিনা মাচাদো। ছবি: রয়টার্স

শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে ক্যাবেলো বলেন, ‘সিআইএ এই অভিযানের নেতৃত্ব দিচ্ছে এবং এটি আমাদের জন্য বিস্ময়ের কিছু নয়। সিআইএ এই অঞ্চলে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে জেনে স্পেনের গোয়েন্দা সংস্থা বরাবরই নীরব থেকেছে। আটককৃত দুই ব্যক্তি আমাদের জানিয়েছে, তারা ভেনিজুয়েলায় ভাড়াটে সেনা আনতে চেষ্টা করছিল, যাদের লক্ষ্য ছিল প্রেসিডেন্ট মাদুরো, ভাইস প্রেসিডেন্ট ডেলসি রদ্রিগেজ ও অপর নেতাদের হত্যা করা।‘

মাদুরো সরকারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও স্পেনের সম্পর্কের তিক্ততার পটভূমিতে এই অভিযোগ উঠে এসেছে। বিশেষ করে জুলাই মাসের নির্বাচনে মাদুরোর বিতর্কিত বিজয়কে কেন্দ্র করে এই উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। ভেনিজুয়েলার জাতীয় নির্বাচন পরিষদ (সিএনই) মাদুরোকে বিজয়ী ঘোষণা করেছে, তবে তারা কোনও বিস্তারিত ভোটের তথ্য প্রকাশ করেনি। বিরোধী দল প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, তাদের প্রার্থী এডমুন্ডো গঞ্জালেজ প্রকৃত বিজয়ী ছিলেন।

বৃহস্পতিবার, যুক্তরাষ্ট্র মাদুরোর বিজয়ের দাবি ও বিরোধী মত প্রকাশের ওপর কঠোর দমন-পীড়নের সঙ্গে জড়িত ১৬ জন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। ওয়াশিংটনের এক কর্মকর্তা জানান, যুক্তরাষ্ট্র ভেনিজুয়েলার রাজনৈতিক সংকটের একটি গণতান্ত্রিক সমাধানের পক্ষে।

এদিকে, ভেনিজুয়েলার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইভান গিল স্পেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মার্গারিটা রবলেসের মন্তব্যের পর সে দেশের রাষ্ট্রদূতকে তলব করেন। রবলেস ভেনিজুয়েলার সরকারকে ‘স্বৈরাচার’ বলে অভিহিত করেছিলেন, যা ভেনিজুয়েলার সঙ্গে স্পেনের সম্পর্কের অবনতির ইঙ্গিত দেয়। গিল এই মন্তব্যকে ‘অভদ্র, অন্যায় ও হস্তক্ষেপমূলক’ বলে আখ্যা দেন।

এর কয়েক দিন আগেই বিরোধী প্রার্থী এডমুন্ডো গঞ্জালেজ রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্য স্পেনে পৌঁছান। বিরোধীদলীয় নেত্রী মারিয়া করিনা মাচাদো জানান, গঞ্জালেজ তার স্বাধীনতা, সুরক্ষা ও জীবন রক্ষার জন্য এই পদক্ষেপ নিয়েছেন।

স্পেন এখন ভেনিজুয়েলার কাছ থেকে এই আটককৃতদের বিষয়ে আরও তথ্য চেয়েছে এবং স্প্যানিশ দূতাবাস তাদের সঙ্গে যোগাযোগের আবেদন জানিয়েছে।