ন্যাটোতে ইউক্রেনের যোগদানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র, সন্তুষ্ট রাশিয়া

রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের কার্যালয় ক্রেমলিন সোমবার জানিয়েছে, ইউক্রেনের ন্যাটো সদস্যপদ নাকচ করে দেওয়ার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান মস্কোকে সন্তুষ্ট করেছে। তবে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই সপ্তাহে শান্তি চুক্তির আশার বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে তারা অস্বীকৃতি জানিয়েছে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।

শান্তি স্থাপনকারী হিসেবে স্মরণীয় হতে চাওয়া ট্রাম্প বারবার বলেছেন, তিনি ইউক্রেনের তিন বছরের রক্তক্ষয়ী সংঘাত বন্ধ করতে চান। এই সংঘাতকে তার প্রশাসন যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে ছায়াযুদ্ধ হিসেবে বর্ণনা করে আসছে। 

যুক্তরাষ্ট্রের দূত জেনারেল কেইথ কেলগ রবিবার বলেছেন, ইউক্রেনের ন্যাটো সদস্যপদ এখন বিবেচনায় নেই। ট্রাম্প বলেছেন, অতীতে যুক্তরাষ্ট্রের এই সমর্থনই যুদ্ধের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। 

ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ সাংবাদিকদের বলেন,  আমরা ওয়াশিংটনের বিভিন্ন পর্যায় থেকে শুনেছি যে ইউক্রেনের ন্যাটো সদস্যপদের বিষয়টি বাদ দেওয়া হয়েছে। এটি অবশ্যই আমাদের জন্য সন্তুষ্টির বিষয় এবং আমাদের অবস্থানের সঙ্গেও সামঞ্জস্যপূর্ণ। 

তিনি আরও বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন এই জোটে ইউক্রেনের সদস্যপদ রাশিয়ার স্বার্থকে হুমকির মুখে ফেলবে এবং বাস্তবে এটি এই সংঘাতের মূল কারণগুলোর একটি।

২০২২ সালে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনে সেনা পাঠানোর নির্দেশ দেন, যা স্নায়ুযুদ্ধের পর মস্কো ও পশ্চিমের মধ্যে সবচেয়ে বড় সংঘাতের সূত্রপাত করে। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, পশ্চিম ইউরোপের নেতা ও ইউক্রেন এই আক্রমণকে সাম্রাজ্যবাদী ঘরানার ভূমি দখল হিসেবে বর্ণনা করেছেন এবং রাশিয়াকে পরাজিত করার অঙ্গীকার করেছিলেন।

পুতিন এই যুদ্ধকে পশ্চিমের সঙ্গে মস্কোর সম্পর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হিসেবে দেখেন। তার মতে, ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর ন্যাটো সম্প্রসারণ ও মস্কোর প্রভাব বলয়ে হস্তক্ষেপের মাধ্যমে রাশিয়াকে অপমান করা হয়েছে। 

২০০৮ সালের বুখারেস্ট শীর্ষ সম্মেলনে ন্যাটো নেতারা একমত হন যে ইউক্রেন ও জর্জিয়া একদিন ন্যাটো সদস্য হবে। ২০১৯ সালে ইউক্রেন তার সংবিধান সংশোধন করে ন্যাটো ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের পূর্ণ সদস্যপদের পথে অগ্রসর হওয়ার অঙ্গীকার করে। 

পুতিন বারবার বলেছেন, ইউক্রেন যদি ন্যাটোতে যোগদানের আকাঙ্ক্ষা ত্যাগ করে এবং রাশিয়ার দাবি করা  চার ইউক্রেনীয় অঞ্চল থেকে সেনা প্রত্যাহার করে, তাহলে রাশিয়া যুদ্ধ বন্ধ করতে প্রস্তুত। 

রয়টার্স নভেম্বরে জানিয়েছিল, পুতিন ট্রাম্পের সঙ্গে একটি চুক্তি আলোচনা করতে প্রস্তুত, তবে বড় ভূখণ্ডগত ছাড় দিতে রাজি হবেন না এবং কিয়েভকে ন্যাটোতে যোগদানের আকাঙ্ক্ষা ত্যাগ করতে বলবেন। 

ট্রাম্প রবিবার বলেছেন, তিনি আশা করেন রাশিয়া ও ইউক্রেন এই সপ্তাহে সংঘাত শেষ করতে একটি চুক্তি করবে। তিনি ট্রুথ সোশ্যালে একটি পোস্টে লিখেছেন, এরপর উভয়েই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বড় ব্যবসা শুরু করবে, যা সমৃদ্ধিশালী এবং ভাগ্য বদলে দেবে!

সোমবার রাশিয়ার রুবল মার্কিন ডলারের বিপরীতে ৮০-এর কাছাকাছি লেনদেন হয়েছে, যা ২০২৪ সালের জুনের পর সর্বোচ্চ। শান্তির প্রত্যাশায় বছরের শুরু থেকে রুবলের দাম ডলারের বিপরীতে ৪০ শতাংশ  বেড়েছে। 

ট্রাম্পের মন্তব্য সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে পেসকভ বলেন, আমি এখন কোনও মন্তব্য করতে চাই না, বিশেষ করে সময়সীমা নিয়ে। প্রেসিডেন্ট পুতিন ও রাশিয়ার পক্ষ শান্তিপূর্ণ সমাধান খোঁজার জন্য পথ খোলা আছে। আমরা মার্কিন পক্ষের সঙ্গে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি এবং আশা করি, এই প্রচেষ্টা ফলপ্রসূ হবে। 

ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৃহত্তর শান্তিচুক্তির অংশ হিসেবে ক্রিমিয়ায় রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণকে স্বীকৃতি দিতে প্রস্তুত যুক্তরাষ্ট্র। এই বিষয়ে পেসকভ বলেন, শান্তিপূর্ণ সমাধান খোঁজার কাজ প্রকাশ্যে করা যায় না এবং উচিতও নয়। এটি সম্পূর্ণ গোপনীয়তায় হওয়া উচিত।