অগ্রগতি না হলে ইউক্রেনের শান্তি আলোচনা থেকে সরে দাঁড়াবে যুক্তরাষ্ট্র

কয়েক দিনের মধ্যে অগ্রগতি না হলে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে মধ্যস্থতা থেকে সরে দাঁড়াবে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এই হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) প্যারিসে ইউরোপীয় ও ইউক্রেনীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি এই হুঁশিয়ারি দেন। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।

রুবিও বলেন, সপ্তাহ বা মাসের পর মাস আমরা এই প্রচেষ্টা চালিয়ে যাব না। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে নিশ্চিত হতে হবে যে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে কোনও সমঝোতা সম্ভব কি না।

রুবিও সাংবাদিকদের বলেন, যদি দেখা যায় দুপক্ষের অবস্থান এতটাই দূরবর্তী যে সমঝোতা অসম্ভব, তাহলে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্ভবত সিদ্ধান্ত নেবেন—আমরা এখানেই থামছি।

তার এই মন্তব্যের সময়ে যুক্তরাষ্ট্র-ইউক্রেন আলোচনায় কিছু অগ্রগতির ইঙ্গিত মিলছে। তবে তিনটি ইউরোপীয় কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, রাশিয়ার অনমনীয়তায় শান্তি প্রক্রিয়া আটকে থাকায় হোয়াইট হাউজের হতাশা বাড়ছে। 

ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, শান্তি চুক্তির বিষয়ে কিছু অগ্রগতি হয়েছে, কিন্তু ওয়াশিংটনের সঙ্গে যোগাযোগ কঠিন হয়ে উঠেছে। তিনি দাবি করেন, রাশিয়া নিজস্ব স্বার্থ নিশ্চিত করেই সংঘাত সমাধানে কাজ করছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় তারা প্রস্তুত। 

বৃহস্পতিবার রোমে ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনির সঙ্গে বৈঠকে মার্কিন ভাইস-প্রেসিডেন্ট জে. ডি. ভ্যান্স বলেছেন, এই ভয়াবহ যুদ্ধ শেষ করতে যুক্তরাষ্ট্র সাহায্য করতে পারে বলে তিনি আশাবাদী।

প্যারিস বৈঠক ছিল ট্রাম্পের শান্তি উদ্যোগের প্রথম বড় ধরনের উচ্চপর্যায়ের সরাসরি আলোচনা, যেখানে ইউরোপীয় শক্তিগুলো অংশ নিয়েছে। রুবিও জানান, তার উপস্থাপিত শান্তি কাঠামোটি উৎসাহজনক সাড়া পেয়েছে। জেলেনস্কির অফিসও বৈঠককে গঠনমূলক ও ইতিবাচক বলে মন্তব্য করেছে। তবে রুবিওর এই হুঁশিয়ারির পর প্যারিস, লন্ডন, বার্লিন বা কিয়েভ থেকে এখনও কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

রুবিও বলেছেন, প্যারিস বৈঠকের পর রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভের সঙ্গেও তিনি কথা বলেছেন এবং শান্তি কাঠামোর বিষয়ে তাকে অবহিত করেছেন। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইতোমধ্যে শর্ত দিয়েছেন—ইউক্রেনকে ন্যাটোতে যোগদানের আকাঙ্ক্ষা ত্যাগ করতে হবে, রাশিয়ার দখলকৃত চার অঞ্চল স্থায়ীভাবে ছেড়ে দিতে হবে এবং সেনাবাহিনীর আকার সীমিত করতে হবে। কিয়েভ এই দাবিগুলোকে আত্মসমর্পণের শর্ত বলে আখ্যায়িত করেছে। 

রুবিও বলেছেন, শান্তি চুক্তিতে ইউরোপের কেন্দ্রীয় ভূমিকা রয়েছে, বিশেষত রাশিয়ার ওপর তাদের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার ছাড়া কোনও সমঝোতা সম্ভব নয়। প্যারিসে আলোচনায় ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়ও উঠে এসেছে। যা সবার জন্য গ্রহণযোগ্যভাবে সমাধান করা সম্ভব বলে তিনি মনে করেন। তবে সতর্ক করে দিয়ে তিনি বলেন, এর চেয়েও বড় চ্যালেঞ্জ আমাদের সামনে আছে।

যুক্তরাষ্ট্র সরে দাঁড়ালে শান্তি আলোচনা ভেস্তে যাওয়ার শঙ্কা তৈরি হবে, কারণ মস্কো ও কিয়েভের ওপর একই রকম চাপ প্রয়োগ করার সামর্থ্য অন্য কোনও দেশের নেই। তবে নীতিগতভাবে যুক্তরাষ্ট্র বর্তমান অবস্থান বজায় রাখতে পারে—রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা বহাল রেখে ইউক্রেনকে সাহায্য দেওয়া চালিয়ে যেতে পারে। অথবা ট্রাম্প ইউক্রেনে সাহায্য পাঠানো বন্ধ করার সিদ্ধান্তও নিতে পারেন। 

রুবিওর ভাষ্য, শান্তি চুক্তি করা কঠিন হবে—কিন্তু অসম্ভব নয়। তবে অগ্রগতির লক্ষণ এখনই দেখতে হবে।মাত্র কয়েক দিনের মধ্যে নিশ্চিত হতে হবে যে স্বল্পমেয়াদে এটি করা সম্ভব। না হলে আমরা এগিয়ে যাব অন্য দিকে।