যুদ্ধ জেলেনস্কিকে বদলে দিয়েছিল, আবার তার পাল্টানোর সময় হয়েছে?

‘ইতিহাসের সেরা বিক্রেতা’—ডোনাল্ড ট্রাম্প একসময় ভলোদিমির জেলেনস্কিকে এভাবেই আখ্যায়িত করেছিলেন, ইউক্রেনকে সহায়তা দিতে মার্কিন কংগ্রেসকে রাজি করানোর অসাধারণ দক্ষতার জন্য। কৌতুকাভিনেতা থেকে যুদ্ধকালীন রাষ্ট্রনায়কে রূপান্তরিত হওয়া জেলেনস্কির এই পরিচিত গল্প এখন নতুন অধ্যায়ের মুখোমুখি। ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে তার কৌশল কি বদলাবে? 

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি। রুশ সেনারা কিয়েভের দিকে এগিয়ে আসছে। জেলেনস্কি বিদেশে পালানোর পরিবর্তে প্রেসিডেন্ট অফিসে থাকার সিদ্ধান্ত নেন। সেই সিদ্ধান্তই ইউক্রেনের প্রতিরোধ যুদ্ধের প্রতীক হয়ে দাঁড়ায়। 

রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউটের এড আর্নল্ড বলেছেন, মিউনিখ সিকিউরিটি কনফারেন্সে যাওয়ার সিদ্ধান্ত ছিল যুগান্তকারী। সেখানে উপস্থিত নীতিনির্ধারকদের মনে ইউক্রেনের জন্য সমর্থন গেঁথে দিয়েছিলেন তিনি।

প্রতিদিনের ভিডিও বার্তা, পশ্চিমা নেতাদের সঙ্গে লবিং—জেলেনস্কির এই কৌশল ২০২২ সালে কাজ করেছিল। কিয়েভের যুদ্ধে বিজয় এবং খেরসন মুক্তির পর পশ্চিমা সহায়তা বাড়ে। কিন্তু ২০২৩ সালে ব্যর্থ পাল্টা-আক্রমণের পর অবস্থা বদলায়। 

২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর। নিউ ইয়র্কের ট্রাম্প টাওয়ারে জেলেনস্কি-ট্রাম্প বৈঠক। ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, এক দিনে যুদ্ধ থামাতে পারবেন। জেলেনস্কি জবাব দিয়েছিলেন, তিনি আসলে জানেন না কীভাবে যুদ্ধ শেষ করতে হয়। 

ওভাল অফিসে তাদের পরবর্তী সাক্ষাৎ হয়েছিল কূটনৈতিক ধসের মধ্যে। খনিজসম্পদ বিনিময় প্রস্তাব নিয়ে উত্তপ্ত আলোচনা, কৃতজ্ঞতা দেখাতে ব্যর্থতার অভিযোগ—জেলেনস্কির শরীরী ভাষায় দেখা গিয়েছিল অস্বস্তি। 

ইউক্রেনের সাবেক রাষ্ট্রদূত ভাদিম প্রিস্টা বলেন, ‘জেলেনস্কি কখনোই কূটনীতিক ছিলেন না। তিনি শিশুদের গাল টেপা বা হ্যান্ডশেক করার প্রচলিত রাজনীতিবিদ নন। 

ওভাল অফিস সংঘাতের পর জেলেনস্কির জনপ্রিয়তা ৭০ শতাংশে পৌঁছেছে। ইউক্রেনীয়রা এই সংঘাতকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদার ওপর আঘাত হিসেবে দেখেছে। 

কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে কাজ করতে গেলে জেলেনস্কিকে কি নমনীয় হতে হবে? প্রেসিডেন্ট অফিসের উপপ্রধান ইহর ব্রুসিলো বলেন, তাকে বাঁকানো খুব কঠিন। স্প্রিংয়ের মতো—যত চাপ দেবেন, ততই জোরালো প্রতিক্রিয়া দেখাবেন।

ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ওলগা ওনুচ বলেছেন, জেলেনস্কি তার রেড লাইনগুলোতে অনড়। এটাই তার শক্তি, আবার দুর্বলতাও। 

যুদ্ধ শেষ হলেও চ্যালেঞ্জ কমবে না। ক্লান্ত জেলেনস্কি কি দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হতে চাইবেন? ব্রুসিলোর বলছেন, তিনি দ্রুত শেখেন। গফ খেলার প্রয়োজন পড়লে নিশ্চয়ই শিখে নেবেন।

সূত্র: বিবিসি