রাশিয়ার ড্রোন হামলায় ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ ও ডনেস্ক অন্তত সাত জন নিহত হয়েছে। সৌদি আরবে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের মধ্যে আলোচনার প্রাক্কালে শনিবার দিবাগত রাতে এই হামলা চালালো রাশিয়া। রুশ হামলা বন্ধে পশ্চিমা মিত্রদের ওপর চাপ বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
কিয়েভের সামরিক প্রশাসন রবিবার জানায়, ড্রোন হামলায় তিন জন নিহত হয়েছেন। যাদের মধ্যে রয়েছে একটি পাঁচ বছর বয়সী শিশু। এছাড়া ১০ জন আহত হয়েছেন।
ইউক্রেনীয় প্রতিনিধিদলের এক সদস্য এএফপিকে জানান, তিন বছরের যুদ্ধ অবসানের লক্ষ্যে ওয়াশিংটনের প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে রবিবার সন্ধ্যায় সৌদি আরবে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের কর্মকর্তাদের বৈঠক হবে। তিনি বলেন, আমেরিকানদের সঙ্গে বৈঠক রিয়াদে আজ রাতেই হওয়ার কথা রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ রবিবার এই উচ্চ পর্যায়ের আলোচনা শুরুর আগে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। তিনি ফক্স নিউজকে বলেন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন শান্তি চান।
অন্যদিকে, ডনেস্ক অঞ্চলের গভর্নর ভাদিম ফিলাশকিন বলেন, রাশিয়ার হামলায় সেখানে চার জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে তিন জন নিহত হয়েছেন ফ্রন্টলাইন শহর ডোব্রোপিলিয়ায় হামলায়।
কিয়েভের মেয়র ভিতালি ক্লিচকো টেলিগ্রামে লিখেছেন, আগুন ও ক্ষয়ক্ষতির পর শহরের বিভিন্ন এলাকায় জরুরি সেবা পাঠানো হয়েছে।
এর আগে ইউক্রেনের বিমান বাহিনী জানায়, রাশিয়া রাতের বেলা বিভিন্ন অঞ্চলে ১৪৭টি ড্রোন হামলা চালিয়েছে। বিমান বাহিনী জানায়, ৯৭টি ড্রোন গুলি করে নামানো হয়েছে এবং ২৫টি ড্রোন লক্ষ্যে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়েছে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় এক বিবৃতিতে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেন, কিয়েভের মতো হামলা ইউক্রেনের জন্য দৈনন্দিন ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি বলেন, এই সপ্তাহেই আমাদের মানুষের বিরুদ্ধে ১ হাজার ৫৮০টির বেশি গাইডেড এয়ারিয়াল বোমা, প্রায় ১ হাজার ১০০টি ড্রোন এবং ১৫টি বিভিন্ন ধরনের মিসাইল ব্যবহার করা হয়েছে। নতুন সমাধান প্রয়োজন, মস্কোর ওপর নতুন চাপ প্রয়োগ করে এই হামলা ও যুদ্ধ বন্ধ করতে হবে।
এদিকে, রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, তাদের বাহিনী রাতের বেলা ৫৯টি ইউক্রেনীয় ড্রোন ধ্বংস ও আটক করেছে। রোস্তভ ও আস্ত্রাখান অঞ্চলে হামলা হয়।
শনিবার রাতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, যুদ্ধে উত্তেজনা আরও বাড়ানো থেকে বিরত রাখার চেষ্টা কিছুটা সফল হয়েছে। ট্রাম্প স্পোর্টস ওয়েবসাইট আউটকিকের প্রতিষ্ঠাতা ক্লে ট্র্যাভিসের সঙ্গে এয়ার ফোর্স ওয়ানে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, যুক্তিসঙ্গত আলোচনা এবং পুতিন ও জেলেনস্কির সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখাই যুদ্ধের সমাধানের চাবিকাঠি।
গত সপ্তাহে ট্রাম্প পুতিন ও জেলেনস্কির সঙ্গে পৃথক আলোচনা করেন। ২০২২ সালে শুরু হওয়া এই যুদ্ধ শেষ করতে তিনি আলোচনা করেন। এর কয়েক সপ্তাহ আগে ট্রাম্প ও তার ভাইস প্রেসিডেন্ট জেড ভ্যান্স হোয়াইট হাউজে জেলেনস্কিকে তিরস্কার করেছিলেন।
তবে ট্রাম্পের লক্ষ্য ছিল ৩০ দিনের সম্পূর্ণ যুদ্ধবিরতি অর্জন করা। যদিও তা পুরোপুরি সফল হয়নি, তবে পুতিন ৩০ দিনের জন্য ইউক্রেনের জ্বালানি অবকাঠামোতে হামলা বন্ধ করতে সম্মত হয়েছেন। জেলেনস্কিও এই বিরতিতে সম্মতি জানিয়েছেন। কিন্তু চুক্তি স্বাক্ষরের পর থেকে উভয় পক্ষই একে অপরকে জ্বালানি স্থাপনার লক্ষ্যবস্তু করার অভিযোগ করেছে।
এদিকে, ট্রাম্প প্রশাসনের চাপে শান্তি আলোচনার অংশ হিসেবে রাশিয়া ও ইউক্রেনের প্রতিনিধিদল সৌদি আরবে আলাদাভাবে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবে বলে আশা করা হচ্ছে। রবিবার রাতে রিয়াদে যুক্তরাষ্ট্র-ইউক্রেনের প্রাথমিক বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।
রবিবার ক্রেমলিন ইউক্রেন সংঘাতের দ্রুত সমাধানের সম্ভাবনা কমিয়ে দিয়ে বলেছে, আলোচনা এখন শুরু হয়েছে এবং কঠিন আলোচনা বাকি রয়েছে। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ রাশিয়ার স্টেট টিভিকে বলেন, আমরা এই পথের শুধু শুরুতে আছি।
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় রাশিয়ার প্রধান লক্ষ্য হবে ২০২২ সালের কৃষ্ণ সাগর চুক্তি পুনরায় চালু করার সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করা।