ইউক্রেন যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে রাশিয়ার পারমাণবিক বাহিনীর একটি নতুন মহড়া শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এই মহড়া উদ্বোধন করেছেন। গত দুই সপ্তাহে এটি মস্কোর দ্বিতীয় মহড়া। ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে রাশিয়ান বাহিনীর অগ্রযাত্রা এবং পশ্চিমা দেশগুলোর ইউক্রেনকে সমর্থনের উত্তেজনার মধ্যে শুরু হলো। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
রাশিয়া বেশ কিছুদিন ধরেই পশ্চিমা বিশ্বকে ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা যদি ইউক্রেনকে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করে এবং রাশিয়ার অভ্যন্তরে আঘাত হানার প্রচেষ্টা চালায়, তবে মস্কো কঠোর প্রতিক্রিয়া জানাবে। এমন পরিস্থিতিতে ন্যাটো জানিয়েছে, উত্তর কোরিয়া রাশিয়ার পশ্চিমাঞ্চলে সামরিক বাহিনী পাঠিয়েছে।
পুতিন মহড়ার ঘোষণা দিয়ে একটি ভিডিওতে বলেছেন, আমরা পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে কর্মকর্তাদের প্রস্তুতিমূলক মহড়া পরিচালনা করব এবং এই প্রক্রিয়ায় ব্যালিস্টিক ও ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ করা হবে।
ভিডিওতে পুতিন আরও বলেন, পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে অত্যন্ত জরুরি পরিস্থিতিতে। তবে অস্ত্রগুলোকে সর্বদা প্রস্তুত রাখা প্রয়োজন।
পুতিন বলেন, আমরা সব উপাদানই উন্নত করব। এই লক্ষ্য অর্জনে প্রয়োজনীয় সব সম্পদ আমাদের কাছে রয়েছে। তবে আমরা নতুন কোনও অস্ত্র প্রতিযোগিতায় জড়াতে চাই না, বরং প্রয়োজনীয় সক্ষমতা বজায় রেখে চলব।
এই মহড়াটি গত ১৮ অক্টোবর টেভার অঞ্চলে অনুষ্ঠিত একটি মহড়ার পর শুরু হলো। এতে যুক্তরাষ্ট্রের শহরগুলোকে আঘাত হানার ক্ষমতাসম্পন্ন আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে প্রশিক্ষণ হয়। এছাড়া গত মাসে পুতিন পারমাণবিক নীতিতে পরিবর্তন এনেছেন। এর ফলে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যেকোনও পারমাণবিক ক্ষমতাসম্পন্ন দেশ দ্বারা পরিচালিত আক্রমণকে যৌথ আক্রমণ হিসেবে বিবেচনা করার সতর্কতা রয়েছে। এটি ইউক্রেনকে রাশিয়ার অভ্যন্তরে আঘাত করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি হুঁশিয়ারি।
রাশিয়া বিশ্বের বৃহত্তম পারমাণবিক শক্তিধর দেশ। রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র যৌথভাবে বিশ্বব্যাপী ৮৮ শতাংশ পারমাণবিক ওয়ারহেড নিয়ন্ত্রণ করে। ইউক্রেন যুদ্ধের সময় রাশিয়ার পারমাণবিক অবস্থানে কোনও পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়নি বলে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
তবে ২০২২ সালে সিআইএ পরিচালক বিল বার্নস জানান যে, রাশিয়ার সম্ভাব্য পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের ঝুঁকি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র এতটাই উদ্বিগ্ন ছিল যে পুতিনকে কূটনৈতিকভাবে সতর্ক করা হয়েছিল।
পশ্চিমকে আক্রমণাত্মক ও দুর্নীতিগ্রস্ত হিসেবে তুলে ধরে পুতিন সতর্ক করে বলেছেন, রাশিয়া-ন্যাটো সরাসরি সংঘর্ষ বিশ্বযুদ্ধের ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। একই ধরনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পও।
পুতিন আরও জানান, বিশ্বে উদীয়মান ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা ও নতুন নতুন বাহ্যিক হুমকির প্রেক্ষাপটে অত্যাধুনিক এবং সর্বদা প্রস্তুত কৌশলগত বাহিনীর গুরুত্ব অপরিসীম।
তিনি জানান, রাশিয়া নতুন স্থির এবং ভ্রাম্যমাণ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা প্রবর্তন করছে। যা দ্রুততার সঙ্গে সজ্জিত হতে পারে এবং প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করার সক্ষমতা রাখে।
উত্তর কোরিয়া রাশিয়ার যুদ্ধে যোগ দিলে যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের মার্কিন অস্ত্র ব্যবহারের ওপর নতুন কোনও বিধিনিষেধ আরোপ করবে না বলে সোমবার জানিয়েছে পেন্টাগন। ন্যাটো আরও জানিয়েছে, উত্তর কোরিয়ার সেনারা রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলে মোতায়েন।