বিতর্কিত পার্লামেন্ট নির্বাচনের পর রাজনৈতিক সংকটে জর্জিয়া

জর্জিয়ার পার্লামেন্ট নির্বাচনে রাশিয়াপন্থি ক্ষমতাসীন দল জর্জিয়ান ড্রিম বিজয়ী হওয়ার পর দেশটিতে রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। বিরোধী দলগুলো নির্বাচনি ফলাফলকে ‘জালিয়াতি’ আখ্যা দিয়ে ব্যালট বাক্স ভর্তির ও ভোটারদের ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগ করেছে। তবে নির্বাচন কমিশন বলছে, শাসক দল সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পেলেও সাংবিধানিক পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজনীয় নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারেনি। ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানিয়েছে।

শনিবার অনুষ্ঠিত ভোটকে ককেশাস অঞ্চলের দেশটির গণতন্ত্রের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা হিসেবে দেখা হচ্ছিলো। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) আগেই সতর্ক করেছিল যে, এ নির্বাচন দেশটির ইইউতে যোগদানের সম্ভাবনার ওপর প্রভাব ফেলবে। নির্বাচনি ফলাফল এখন রাজনৈতিক মুখোমুখি সংঘাতের পরিস্থিতি তৈরি করেছে। বিশ্লেষকদের মতে, জর্জিয়ার ইউরোপীয় আকাঙ্ক্ষাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।

কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের প্রধান গিওর্গি কালান্দারিশভিলি জানান, ৯৯ শতাংশ কেন্দ্রের ফলাফলে দেখা যাচ্ছে জর্জিয়ান ড্রিম ৫৪ শতাংশ ৮ শতাংশ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছে। অন্যদিকে জোটভুক্ত চারটি পশ্চিমাপন্থি বিরোধী দল মিলে ৩৭ দশমিক ৫৮ শতাংশ ভোট পেয়েছে। এতে ১৫০ সদস্যের পার্লামেন্টে শাসক দলের ৯১টি আসন নিশ্চিত হয়েছে। যা সরকার গঠনের জন্য যথেষ্ট হলেও প্রধান বিরোধী দলগুলো নিষিদ্ধ করার জন্য সাংবিধানিক পরিবর্তনের সুযোগ দেয়নি।

প্রধানমন্ত্রী ইরাকলি কোবাখিদজে এই বিজয়কে ‘অসাধারণ’ বলে বর্ণনা করেছেন এবং বিরোধীদের দেশের সাংবিধানিক শৃঙ্খলাকে ক্ষুণ্ন করার অভিযোগ তুলেছেন। তবে মার্কিন গবেষণা প্রতিষ্ঠান এডিসন রিসার্চের একটি বুথ ফেরত জরিপে বিরোধীদের জয়ের সম্ভাবনা দেখিয়েছিল।

বিরোধী দলগুলো নির্বাচনি জালিয়াতির অভিযোগ তোলে ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেছে। ইউনাইটেড ন্যাশনাল মুভমেন্ট (ইউএনএম) দলের নেত্রী টিনা বোকুচাভা বলেছেন, এই নির্বাচন চুরি করা হয়েছে। জর্জিয়ার ভবিষ্যৎ চুরির প্রচেষ্টা চলছে। তিনি ফলাফল মেনে নিতে অস্বীকার করেছেন। আরেক বিরোধী দল আখালি পার্টির নেতা নিকা গভারামিয়া নির্বাচনের প্রক্রিয়াকে সাংবিধানিক অভ্যুত্থান বলে উল্লেখ করেছেন।

দেশটির পশ্চিমাপন্থি প্রেসিডেন্ট সালোমে জুরাবিশভিলি বলেছেন, কিছু ভোটকেন্দ্রে সহিংসতার গভীর উদ্বেগজনক ঘটনা ঘটেছে।

জর্জিয়ান ড্রিম ২০১২ সালে ক্ষমতায় আসার পর প্রথমে পশ্চিমাপন্থি নীতি অনুসরণ করলেও গত দুই বছরে অবস্থান পাল্টেছে। তাদের প্রচারণা ছিল একটি ষড়যন্ত্র তত্ত্ব নিয়ে। ওই তত্ত্বে দাবি করা হয়েছিল, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে জর্জিয়াকে জড়ানো চেষ্টা চলছে।

২০০৮ সালের রুশ আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্ত দেশটির জনগণকে যুদ্ধের শঙ্কা তুলে ভয় দেখানোর চেষ্টা করেছে জর্জিয়ান ড্রিম। দলটি এমন দাবিও করেছে যে, কেবল তারাই আসন্ন যুদ্ধের হুমকি প্রতিহত করতে পারবে। তাদের বিতর্কিত বিদেশি প্রভাব আইন নিয়ে দেশব্যাপী প্রতিবাদ হয়েছিল। সমালোচকদের মতে ক্রেমলিনের কৌশল অনুসারে নাগরিক সমাজকে দমন করার প্রচেষ্টা ছিল আইনটি। এটি জারি হওয়ার পর ব্রাসেলস জর্জিয়ার ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগদানের প্রক্রিয়া স্থগিত করেছে। ওয়াশিংটন বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।