মার্কিন মজুতে চাপ ও শঙ্কা, ইউক্রেনে সামরিক সহায়তা কমছে

ইউক্রেনে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সহায়তার প্যাকেজগুলো ক্রমশ ছোট হয়ে আসছে। মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মজুতের অস্ত্র ও সরঞ্জাম থেকে ইউক্রেনকে সরবরাহ করার সামর্থ্য কমে যাওয়ায় এই পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে, ইউক্রেনের জন্য অপরিহার্য সরঞ্জাম পাঠাতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক প্রস্তুতি ব্যাহত হতে পারে, কারণ অস্ত্র প্রস্তুতকারীরা এই বিশাল চাহিদা পূরণে পিছিয়ে পড়ছে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন এ খবর জানিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে এখনও ৬ বিলিয়ন ডলারের তহবিল রয়েছে ইউক্রেনকে অস্ত্র ও সরঞ্জাম সরবরাহের জন্য। তবে প্রায় দুই বছর ধরে চলমান যুদ্ধের কারণে তাদের মজুদ প্রায় শেষ হতে চলেছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।

সিএনএন-এর একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, পেন্টাগনের কাছে যে অস্ত্র ও সরঞ্জাম মজুত আছে, তা ইউক্রেনের চাহিদা মেটাতে যথেষ্ট নয়, আর সামরিক প্রস্তুতিতে কোনও প্রভাব না ফেলে তা সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না।

পেন্টাগনের মুখপাত্র মেজর জেনারেল প্যাট রাইডার জানিয়েছেন, পেন্টাগন কংগ্রেসের কাছে আরও সময় চেয়েছে এই অর্থ ব্যয় করতে, কারণ সেপ্টেম্বরের শেষে তা শেষ হওয়ার কথা। এটি একটি স্পষ্ট পরিবর্তন, কারণ গত শীতকালে বাইডেন প্রশাসন কংগ্রেসের কাছে ইউক্রেনের সমর্থনে আরও তহবিল চেয়ে আবেদন জানিয়েছিল।

এক মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, সংস্থানের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে পুনঃসংস্থান।

ইউক্রেনকে সরবরাহ ও মার্কিন মজুত পূরণের জন্য এখন ১৫৫ মিমি গোলাবারুদ ও প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা তৈরির গতি বাড়ানো হচ্ছে। তবে এটি দীর্ঘমেয়াদি একটি প্রক্রিয়া, যা তাৎক্ষণিকভাবে চাহিদা পূরণে সক্ষম হবে না।

ইউক্রেনের ওপর এই ঘাটতির প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি সম্প্রতি জার্মানিতে ইউক্রেন ডিফেন্স কন্টাক্ট গ্রুপের এক বৈঠকে উল্লেখ করেন যে, প্রতিশ্রুতি মোতাবেক আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সরবরাহের গতি খুবই ধীর, যার ফলে গুরুত্বপূর্ণ সহায়তায় বড় ঘাটতি তৈরি হচ্ছে।

এপ্রিল মাসে, কংগ্রেস বাইডেন প্রশাসনকে ইউক্রেনের জন্য ১৩.৪ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ করে। কিন্তু মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগ সেই অর্থ পুরোপুরি ব্যবহার করতে পারেনি, কারণ প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের মজুতে ঘাটতি তৈরি হয়েছে। কর্মকর্তারা বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক প্রস্তুতি ক্ষতিগ্রস্ত না করেই যতটা সম্ভব সরঞ্জাম পাঠানোর চেষ্টা চলছে।

এপ্রিলের শেষ দিকে, কংগ্রেস ইউক্রেনের জন্য অতিরিক্ত তহবিল অনুমোদন করার পর প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, তারা কিয়েভকে প্রায় ১ বিলিয়ন ডলারের সরঞ্জাম সরাসরি সরবরাহ করবে। তবে এর পর থেকে, ইউক্রেনের জন্য ঘোষিত প্রতিটি সামরিক সহায়তা প্যাকেজের আকার উল্লেখযোগ্যভাবে ছোট হয়ে গেছে। ২০২২ ও ২০২৩ সালে যেখানে পেন্টাগন প্রতি প্যাকেজে ৬০০ থেকে ৮০০ মিলিয়ন ডলারের সহায়তা দিত, সেখানে বর্তমানে এই পরিমাণ কমে ১২৫ থেকে ২৫০ মিলিয়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ।

আরেকজন মার্কিন কর্মকর্তা জানান, বছরের প্রথম চার মাসে প্রতিরক্ষা মজুত থেকে সরঞ্জাম পাঠানো সম্ভব হয়নি, কারণ কংগ্রেস থেকে তহবিল অনুমোদনে বিলম্ব হয়েছিল। এছাড়া ইউক্রেনকে একসঙ্গে অনেক সরঞ্জাম পাঠানো নিয়েও সীমাবদ্ধতা রয়েছে, কারণ তা মার্কিন সামরিক প্রস্তুতিকে প্রভাবিত করতে পারে।

কর্মকর্তারা আরও বলেছেন, ইউক্রেনের পক্ষে একসঙ্গে এত পরিমাণ সরঞ্জাম গ্রহণ ও তা কার্যকরভাবে বিতরণ করাও সম্ভব নয়।

দুই সপ্তাহ পর পর একটি নতুন সামরিক সহায়তা প্যাকেজ ঘোষণার প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। এমন ধারাবাহিক সহায়তা ইউক্রেনের মনোবল বাড়াতে সহায়ক হবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।

জার্মানির বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা সচিব লয়েড অস্টিন আরও ২৫০ মিলিয়ন ডলারের সামরিক সহায়তা প্যাকেজ ঘোষণা করেন। তিনি স্বীকার করেন যে, যুক্তরাষ্ট্র সরঞ্জাম উৎপাদনের গতি বাড়ানোর চেষ্টা করছে ও দ্রুত সরবরাহের জন্য কাজ করছে।

অস্টিন বলেন, সময় খুবই গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে শীত আসছে। আমাদের সবাইকে একসঙ্গে দ্রুত সহায়তা বাড়াতে হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র উৎপাদন প্রক্রিয়া ধীরে হলেও, ইউক্রেনকে সহায়তা চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে বাইডেন প্রশাসন। তবে অস্ত্রের ঘাটতি ও পুনরুদ্ধারের চ্যালেঞ্জগুলো ভবিষ্যতে মার্কিন সামরিক প্রস্তুতিকে কতটা প্রভাবিত করবে, তা নিয়ে উদ্বেগ রয়ে গেছে।