খারকিভে রাশিয়ার স্থল হামলার পর সীমান্ত শহর ছাড়ছেন ইউক্রেনীয়রা

ইউক্রেনের খারকিভ অঞ্চলের একটি সীমান্ত শহর ছাড়ছেন ইউক্রেনীয়রা। শহরটিতে রাশিয়ার স্থল হামলার পর হতাশ ও ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা শুক্রবার (১০ মে) নিজেদের বাড়ি ছাড়তে শুরু করেছেন। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।

শুক্রবার লড়াইয়ে বিরতির সময় ভভচানস্ক ও আশেপাশের গ্রামের কয়েক ডজন মানুষকে অজ্ঞাত স্থানে জড়ো করেছে। সেখান থেকে বাসে করে তাদের নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়া হবে।

ভ্যালেরি ডুবস্কি নামের ৬০ বছর বয়সী ইউক্রেনীয় বলেন, রাশিয়া সীমান্ত ছাড়িয়ে নিজেদের প্রভাব বিস্তার করতে চাইছে, এই কারণে আমাদের মরতে হচ্ছে। ফলে আমরা চলে যাচ্ছি। পুতিন (রুশ প্রেসিডেন্ট) ও রুশ কর্তৃপক্ষ নরকে যাক। তারা আমাদের শত্রু। পারমাণবিক বোমা ছাড়া সব ধরনের অস্ত্র আমাদের ওপর পরীক্ষা করেছে তারা।

২৪ ঘণ্টা ধরে কিছু খাননি ডুবস্কি। টানা গোলাবর্ষণের মধ্যে পানি সংগ্রহ করাও কঠিন। তিনি বলেন, বোমাবর্ষণের সময় হয় বাড়ির নিচ তলায় অথবা নিচ তলার বাইরে থাকতে হয়।

নিজেদের স্বল্প সরঞ্জাম নিয়ে একদল মানুষ মাটিতে বসে ছিলেন। স্বেচ্ছাসেবীরা শহরত্যাগীদের তালিকা করছেন। প্লাস্টিকের বক্সে তাদের খাবার সরবরাহ করা হয়।

বাসের অপেক্ষায় থাকা হালিনা ইউক্রেনিক বলেছেন, শুক্রবার ভোর ৩টায় গোলাবর্ষণ শুরু হয়েছে। তিনি ও অন্যরা একটি  ভূগর্ভস্থ কুটুরিতে ছিলেন। একটি রাস্তা পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। এখানে বসবাস করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে।

বুহাইভকা গ্রামের আন্তোনিনা করনুতা বলেছেন, বেশিরভাগ নিজেদের কম বয়সী স্বজনদের নিয়ে চিন্তিত। খুব ভীতিজনক। আমার নাতি ও সন্তান রয়েছে। আমি চলে যেতে চাই না। কিন্তু এটি তাদের জীবন রক্ষার জন্য।

ভভচানস্কের টহল পুলিশের প্রধান কর্মকর্তা ওলেক্সি খারকিভস্কি বলেছেন, রুশ সেনাদের লক্ষ্য পুরো শহর ধ্বংস করা। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তারা কয়েক শ’ কামানের গোলা, মাইন ও ক্লাস্টার বোমা দিয়ে হামলা করেছে। তারা শহর ধ্বংস করছে। তারা ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করছে। কিন্তু শহরে শত্রুদের কোনও সেনা নেই।

গভর্নর ওলেগ সিনেগুবভ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, এ অঞ্চলে রাশিয়ার হামলার পর মোট ১ হাজার ৭৭৫ জনকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। রুশ বাহিনী গত ২৪ ঘণ্টায় এ অঞ্চলের ৩০টি বসতিতে কামান ও মর্টার হামলা চালিয়েছে এবং তারা এ সীমান্ত এলাকায় সামান্য অগ্রসর হয়েছে।

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে হামলার পর খারকিভ দখল করেছিল রুশ সেনারা। কিন্তু ওই বছর ইউক্রেনের পাল্টা আক্রমণে শহরটি থেকে পিছু হটে মস্কো। গত বছর ইউক্রেনের পাল্টা আক্রমণ ব্যর্থ হওয়ার পর রুশ সেনারা ধীরে ধীরে পুনরায় আক্রমণে যাচ্ছে। পূর্বাঞ্চলীয় ডনেস্ক অঞ্চলে ধীরে ধীরে অগ্রসর হচ্ছে তারা।

মার্চ মাসে ইউক্রেনীয় ভূখণ্ডে বাফার জোন প্রতিষ্ঠায় রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের আহ্বানের পর খারকিভ নিয়ে কিয়েভের উদ্বেগ শুরু হয়। পুতিনের দাবি, গোলাবর্ষণ ও সীমান্তে অনুপ্রবেশ থেকে রাশিয়াকে রক্ষায় এই বাফার জোন প্রয়োজন।

পুতিনের এমন আহ্বানের পর থেকেই খারকিভে বিমান হামলা শুরু করে। রুশ হামলায় অঞ্চলটির বিদ্যুৎ অবকাঠামোতে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।