রুশ গুপ্তচরদের স্লিপার সেল সক্রিয় করছে মস্কো

স্লোভেনিয়ায় বসবাসকারী এক আর্জেন্টিনীয় দম্পতি, একজন মেক্সিকান-গ্রিক ফটোগ্রাফার যিনি এথেন্সে একটি সুতার দোকান চালাতেন এবং ব্রিটেনে তিনজন বুলগেরিয়ানকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গত এক বছরে বিশ্বব্যাপী পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো রাশিয়ার র বা এজেন্ট সন্দেহে দৃশ্যত সাধারণ ও নিরীহ জীবনযাপনকারী অসংখ্য ব্যক্তিকে অভিযুক্ত করেছে।

১৩ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত বার্লিনে ব্রিটিশ দূতাবাসের একজন নিরাপত্তা রক্ষী এবং রাশিয়ার গোয়েন্দা সংস্থার হয়ে বিভিন্ন কাজের অভিযোগে পোল্যান্ডে এক ডজনের বেশি লোককে গ্রেফতার  করা হয়েছে।

যুক্তরাজ্যে ফেব্রুয়ারিতে আটক পাঁচ জনের মধ্যে তিনজন বুলগেরিয়ান সম্পর্কে অনেক কিছুই স্পষ্টভাবে জানা যায়নি। তাদের অভিযুক্ত করা হয়েছে কিন্তু তাদের বিচার জানুয়ারির আগে শুরু হচ্ছে না। ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিস্তারিত প্রকাশ করেনি।

কিন্তু অন্যান্য  ক্ষেত্রে একটি বিষয় স্পষ্ট: গত বছর ফেব্রুয়ারিতে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনে সর্বাত্মক আক্রমণ শুরুর করার পর মস্কো গুপ্তচরবৃত্তির কম প্রচলিত ও ঝুঁকিপূর্ণ পদ্ধতি অনুসরণ করছে। এর প্রধান কারণ হলো কূটনৈতিক পরিচয়ের আড়ালে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে যেসব গুপ্তচরদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল তাদেরকে বহিষ্কার করা  হয়েছে।

মস্কোতে জিআরইউ-এর সদর দফতর। ছবি: রয়টার্স

সাধারণভাবে, রাশিয়ার তিনটি প্রধান গোয়েন্দা সংস্থা এফএসবি, এসভিআর ও জিআরইউ তাদের এজেন্টদের কূটনৈতিক পরিচয়ে বিদেশে নিয়োগ দেয়। এর বাইরে রুশ ব্যবসায়ী, পর্যটক  বা সাংবাদিক হিসেবে চর পাঠিয়ে আসছে সংস্থাগুলো।

যুদ্ধ এই পন্থায় গুপ্তচরবৃত্তি চালিয়ে যাওয়া কঠিন করে তুলেছে মস্কোর জন্য। সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের ধারণা, যুদ্ধের প্রথম তিন মাসেই রুশ দূতাবাসগুলোর ৪৫০ জনের বেশি কূটনীতিককে বহিষ্কার  করা হয়েছে বেশিরভাগ ইউরোপীয় দেশ থেকে।

এক ইউরোপীয় গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেছিলেন, যুদ্ধের পর এসব বহিষ্কারের কারণে রাশিয়া গোয়েন্দা ব্যবস্থার জন্য কঠিন সময় ছিল। এর ফলে তারা ভিন্নভাবে কাজ করার চেষ্টা করেছে। এর আগে ব্যবহৃত বিভিন্ন পন্থা বন্ধ হয়ে যায়।

এছাড়া যুদ্ধের কারণে ব্রিটেন বা সেনজেন অঞ্চলের ভিস পাওয়া রুশ নাগরিকদের জন্য কঠিন হয়ে পড়ে। এর ফলে রাশিয়া বাধ্য হয় নিজেদের স্লিপার সেল বা অঘোষিত এজেন্ট বা চরদের কাজে লাগাতে। এরা হয়ত তৃতীয় কোনও দেশের নাগরিক অথবা তারা রুশ নাগরিক হয়েও অবৈধভাবে ভিন্ন দেশের নাগরিক হিসেবে নিজেদের পরিচয় দিচ্ছে। নিজেদের পরিচয় তৈরিতে তাদের কয়েক বছর অতিবাহিত করতে হয়েছে।

গত বছর সাতজন কথিত অবৈধের পরিচয় উন্মোচিত হয়েছে  নরওয়ে, ব্রাজিল, নেদারল্যান্ডস, স্লোভেনিযা ও গ্রিসে। কেউ কেউ পালাতে পেরেছেন। ধারনা করার  হচ্ছে তারা রাশিয়া ফিরেছেন। স্লোভেনিয়াতে দুজন গ্রেফতারের কয়েক মাস পর ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাজ্যে গুপ্তচর সন্দেহে তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়। স্লোভেনিয়াতে যাদের গ্রেফতার  করা হয়েছে  তারা আর্জেন্টাইন পরিচয়ে রুশ নাগরিক বলে মনে করছে কর্তৃপক্ষ।

সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান