মধ্য ইউরোপের স্থলবেষ্টিত দেশ হাঙ্গেরি। দেশটির সীমান্তবর্তী রাষ্ট্রগুলো হলো ইউক্রেন, রোমানিয়া, সার্বিয়া, ক্রোয়েশিয়া, স্লোভানিয়া, অস্ট্রিয়া ও স্লোভাকিয়া।
নবম শতকে রাশিয়ার দক্ষিণাঞ্চল ও কৃষ্ণসাগরের তীরবর্তী ‘মজর’ জাতিগোষ্ঠী অঞ্চলটিতে আসে। মজর জাতিগোষ্ঠীর বংশধর হিসেবে নিজেদের পরিচয় দেয় হাঙ্গেরীয়রা।
কয়েক শতাব্দী ধরে ক্ষমতাধর রাজ্য হিসেবে বিরাজ করে হাঙ্গেরি। এরপর ষোড়শ শতাব্দীতে প্রথমে অটোমান ও পরে হাবসবার্গ সাম্রাজ্যের অধীনে চলে যায় দেশটি। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর আবার স্বাধীন দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে হাঙ্গেরি।
কয়েক দশক সামাজতান্ত্রিক ব্যবস্থায় থাকার পর উদারনৈতিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য হাঙ্গেরি। তবে দেশটির ডানপন্থী প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর ওরবানের স্বৈরচারী কর্মকাণ্ডে দেশটির গণতন্ত্র প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।
মধ্য ইউরোপের বৃহত্তম হ্রদ বালাটন অবস্থিত হাঙ্গেরিতে। এছাড়া বিপুল সংখ্যক স্পা টাউন রয়েছে দেশটিতে।
হাঙ্গেরির গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য
- রাষ্ট্রীয় নাম: রিপাবলিক অব হাঙ্গেরি
- রাজধানী: বুদাপেস্ট
- আয়তন: ৯৩ হাজার ৩০ বর্গ কিলোমিটার
- জনসংখ্যা: ৯৭ লাখ ৮০ হাজার
- ভাষা: হাঙ্গেরীয়
- গড় আয়ু: পুরুষ ৭২, নারী ৭৯
নেতৃত্ব
প্রেসিডেন্ট কাতালিন নোভাক
২০২২ সালের মে মাসে ক্ষমতাসীন ফিদেজ পার্টি থেকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন তিনি। দেশটির সাবেক মন্ত্রী ও পার্লামেন্টের সংসদ সদস্য ছিলেন তিনি।
হাঙ্গেরির ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ প্রেসিডেন্ট ৪৪ বছরের নোভাক। দেশটির প্রথম নারী প্রেসিডেন্টও তিনি। তবে দেশটিতে প্রেসিডেন্টের পদটি মূলত আনুষ্ঠানিক।
প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর ওরবান
দেশটির সর্বময় ক্ষমতা নিজের হাতে কেন্দ্রীভূত করে রাখেন এই নেতা। তার জাতীয়তাবাদী কর্মকাণ্ডে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের অপর নেতারা।
হাঙ্গেরিতে ‘অনুদারনৈতিক ব্যবস্থা’ চালু করার লক্ষ্য ঘোষণা করেন তিনি। এছাড়া পশ্চিমা উদার গণতন্ত্রের চেয়ে তুরস্ক, চীন ও রাশিয়ার মতো কর্তৃত্ববাদী ব্যবস্থাকে বেশি উপযুক্ত বলে বর্ণনা করেছেন তিনি।
২০২২ সালে চতুর্থ মেয়াদে ক্ষমতায় আসেন তিনি।
গণমাধ্যমে প্রভাব বৃদ্ধির প্রকল্প হাতে নিয়েছে দেশটির ক্ষমতাসীন ফিদেজ পার্টি। ছবি: রয়টার্স
সংবাদমাধ্যম
গণমাধ্যমে প্রভাব বৃদ্ধির প্রকল্প হাতে নিয়েছে দেশটির ক্ষমতাসীন ফিদেজ পার্টি।
সরকারপন্থী শতাধিক মিডিয়া আউটলেটের মালিকেরা বর্তমানে বিশাল ব্যবসা প্রসারিত করেছে।
এতকিছুর পরেও, দেশটির মিডিয়াকে বৈচিত্রময় বলে আখ্যায়িত করেছে ফ্রান্সভিত্তিক সংস্থা রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স। দেশটির অনলাইন সংবাদমাধ্যমগুলোতে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার বেশ ভালো চর্চা রয়েছে।
হাঙ্গেরির ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ কিছু ঘটনা
১৮৮৭: অস্ট্রো-হাঙ্গেরীয় সাম্রাজ্যের সমান অংশীদার হয়ে ওঠে হাঙ্গেরি।
১৯১৮: প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর অস্ট্রো-হাঙ্গেরীয় সাম্রাজ্য ভেঙে যায়।
১৯২০: ট্রায়ানন চুক্তির কারণে, আঁতাতের মাধ্যমে হাঙ্গেরীয় অঞ্চলের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ চেকোস্লোভাকিয়া, রোমানিয়া এবং যুগোস্লাভিয়ার অধীনে চলে যায়। হাঙ্গেরীয় ভাষাভাষীদের এক-তৃতীয়াংশকে দেশ থেকে বিতাড়িত করা হয়।
১৯২০ থেকে ১৯৩০ এর দশক: অ্যাডমিরাল হোর্থির শাসনামলে বিপুল পরিমাণ ভূখণ্ড হারায় হাঙ্গেরি। সে সময়ে নাৎসি জার্মানির সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠ হয় দেশটি।
১৯৪১-৪৫: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নাৎসি জার্মানির পক্ষে যুদ্ধ করে রাশিয়ায় তার সেনাবাহিনীর একটি বড় অংশ হারায় হাঙ্গেরি। ১৯৪৪ সালে হাঙ্গেরি যুদ্ধবিরতি চাইলে দেশটিকে দখল করে জার্মানি। তখন হাজার হাজার ইহুদির মৃতদেহ জলে ভাসিয়ে দেওয়া হয়।
১৯৪৭-৪৯: সোভিয়েত কমিউনিস্টদের অধীনে চলে যায় হাঙ্গেরি। নতুন সংবিধান, শিল্প জাতীয়করণ, সমষ্টিগত কৃষি এবং গণসন্ত্রাসের চল শুরু হয় তখন।
১৯৫৬: সোভিয়েত আধিপত্যের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ সৃষ্টি হয়। সরকার প্রধান হন জানোস কাদের।
১৯৮৯-৯১: পূর্ব জার্মানির হাজার হাজার জনগোষ্ঠীকে পশ্চিমে পাড়ি জমাতে সাহায্য করতে অস্ট্রিয়ার সঙ্গে সীমান্ত খুলে দেওয়া হয়। গণতান্ত্রিক নির্বাচনের পর হাঙ্গেরি থেকে সেনা প্রত্যাহার করে সোভিয়েত ইউনিয়ন।
১৯৯৯: ন্যাটোতে যোগ দেয় হাঙ্গেরি।
২০০৪: ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগ দেয় হাঙ্গেরি।
২০১০: জনতোষণবাদী ডানপন্থী প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর ওরবান ক্রমবর্ধমান কর্তৃত্ববাদী পদক্ষেপের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করেন।
২০২২: লিঙ্গ নিয়ে আলোচনায় নিষেধাজ্ঞা জারি করে হাঙ্গেরি। ওরবান সরকারের অধীনে স্বৈরাচারি হাইব্রিড শাসনের অধীনে চলে যায় দেশটি।