ইউক্রেনে নতুন প্রজন্মের লেজার অস্ত্র ব্যবহারের দাবি রাশিয়ার

ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধে নতুন প্রজন্মের শক্তিশালী একটি লেজার অস্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে বলে দাবি করেছে রাশিয়া। বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি করেছেন রাশিয়ার উপ-প্রধানমন্ত্রী। ইউক্রেনে পশ্চিমাদের পাঠানো অস্ত্র মোকাবিলায় নিজেদের গোপন অস্ত্র ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছে রাশিয়া। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এখবর জানিয়েছে।

২০১৮ সালে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বেশ কয়েকটি নতুন অস্ত্র অবমুক্ত করেছিলেন। এগুলোর মধ্যে ছিল একটি নতুন  আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র, পানির নিচে চলাচলে সক্ষম পারমাণবিক ড্রোন, একটি সুপারসিনক অস্ত্র ও এবং একটি নতুন লেজার অস্ত্র।

রাশিয়ার এই লেজার অস্ত্র সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানা যায়নি। পুতিন এই অস্ত্রকে 'পেরেসভেট' হিসেবে নামকরণ করেছেন।  

সামরিক মোতায়েনের দায়িত্বে থাকা রুশ উপ-প্রধানমন্ত্রী ইউরি বরিসভ বুধবার মস্কোতে এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, পেরেসভেট ইতোমধ্যে ব্যাপকভাবে মোতায়েন করা হচ্ছে এবং পৃথিবী থেকে দেড় হাজার কিলোমিটার উঁচুতে থাকা স্যাটেলাইটকে অন্ধ করে দিতে পারে এই অস্ত্র।

তিনি জানান, যদিও এই মুহূর্তে রাশিয়ার কাছে পেরেসভেটের তুলনায় আরও শক্তিশালী লেজার অস্ত্র রয়েছে। যেগুলো ড্রোন ও অন্যান্য সরঞ্জামকে পুড়িয়ে দিতে পারে।

মঙ্গলবার এমন একটি অস্ত্রের পরীক্ষা চালানোর কথা তুলে ধরে বরিসভ জানান, মাত্র ৫ সেকেন্ডের মধ্যে ৫ কিলোমিটার দূরে থাকা ড্রোন পুড়িয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে।

তিনি বলেন, পেরেসভেট যদি অন্ধ করে তাহলে নতুন প্রজন্মের লেজার অস্ত্র পুড়িয়ে দিতে পারে।

এমন অস্ত্র ইউক্রেনে ব্যবহার করা হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, হ্যাঁ, প্রথম  প্রটোটাইপ ইতোমধ্যে সেখানে ব্যবহার করা হয়েছে।

তিনি এই অস্ত্রকে ‘জাডিরা’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।

সামরিক মোতায়েনের দায়িত্বে থাকা রুশ উপ-প্রধানমন্ত্রী ইউরি বরিসভ

জাডিরা সম্পর্কে প্রকাশ্যে কিছুই জানা যায়নি। তবে ২০১৭ সালে রুশ সংবাদমাধ্যম জানিয়েছিল, রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পারমাণবিক করপোরেশন রোজাটম এই অস্ত্র তৈরিতে সহযোগিতা করেছে।  

২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে শুরু হওয়া রুশ আক্রমণে সোভিয়েত পরবর্তী রাশিয়ার সেনাবাহিনীর প্রচলিত কৌশলের সীমাবদ্ধতা সামনে এনেছে। যদিও পুতিন দাবি করে যাচ্ছেন, তাদের বিশেষ সামরিক অভিযান পরিকল্পনা মতোই চলছে এবং মস্কোর লক্ষ্য অর্জিত হবে।

যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো নিজেদের সেনাদের ইউক্রেনে পাঠাতে অস্বীকৃতি জানিয়ে আসছে। কিন্তু ওয়াশিংটন ও দেশটির মিত্ররা শত কোটি ডলারের অস্ত্র পাঠাচ্ছে ইউক্রেনে। এসবের মধ্যে ড্রোন, হউইটজার আর্টিলারি, বিমান-বিধ্বংসী স্টিনজার ও ট্যাংক-বিধ্বংসী জ্যাভেলিন ক্ষেপণাস্ত্র।

পশ্চিমাদের এসব অস্ত্র সরবরাহকে রাশিয়াকে ধ্বংসের বৃহত্তর পরিকল্পনার অংশ বলছেন এবং তার দাবি তারা কখনও সফল হবে না।

বরিসভের মন্তব্য ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, রাশিয়া লেজার অস্ত্র উদ্ভাবনে যথেষ্ট অগ্রগতি অর্জন করেছে। এই খাতে পারমাণবিক শক্তিধর ও রাশিয়া চীনের ব্যাপক আগ্রহ রয়েছে।

বরিসভ জানান, তিনি সম্প্রতি সারোভ থেকে ফিরেছেন। এটি নিজনি নভগোরোদ অঞ্চলের একটি শহর। এর আগে আরজামাস-১৬ বলে পরিচিত ছিল। শহরটি নিয়ে রাশিয়া চরম গোপনীয়তা অবলম্বন করে। এটি রাশিয়ার পারমাণবিক গবেষণার প্রাণকেন্দ্র।

তিনি জানান, নতুন প্রজন্মের লেজার অস্ত্র বিস্তৃত ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ব্যান্ড ব্যবহার করে। শেষ পর্যন্ত এগুলো প্রচলিত অস্ত্রকে স্থলাভিষিক্ত করবে।

তার কথায়, এটি কোনও কাল্পনিক ধারণা নয়, এটি বাস্তবতা।