পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ বলেছেন, চলতি সপ্তাহে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে ঘটে যাওয়া হামলার বিষয়ে পাকিস্তান যে কোনও ‘নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ’ তদন্তের জন্য প্রস্তুত আছে। শনিবার (২৬ এপ্রিল) কাকুলে পাকিস্তান মিলিটারি অ্যাকাডেমির নবীন সেনাদের প্রশিক্ষণ শেষে আনুষ্ঠানিকভাবে বাহিনীতে যোগদানের অনুষ্ঠানে ভাষণ দিতে গিয়ে এমন মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ডন এ খবর জানিয়েছে।
অনুষ্ঠানে শাহবাজ বলেন, পেহেলগামে সাম্প্রতিক মর্মান্তিক ঘটনাটি ‘দায় চাপানো’ খেলার আরেকটি জ্বলন্ত উদাহরণ। এটা অবিলম্বে বন্ধ হওয়া দরকার। একটি দায়িত্বশীল রাষ্ট্র হিসেবে পাকিস্তান নিরপেক্ষ, স্বচ্ছ এবং বিশ্বাসযোগ্য যেকোনও তদন্তে অংশ নিতে প্রস্তুত।’
পেহেলগামে হামলাকারীদের সঙ্গে আন্তঃসীমান্ত সংযোগ রয়েছে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে ভারত। তবে পাকিস্তান এ ধরনের বিষয়ে জড়িত থাকার কথা দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করেছে।
ভারতের ইঙ্গিতের জবাবে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশটি ধারাবাহিকভাবে বিভ্রান্তিকর ও ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলছে এবং বাস্তব প্রমাণহীন অপপ্রচারের পথ বেছে নিয়েছে।
এ সময় শাহবাজ শরিফ আরও বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই কাশ্মীরের গুরুত্ব তুলে ধরা প্রয়োজন। আমাদের জাতির পিতা কায়েদে আজম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঠিকই বলতেন, ‘কাশ্মীর হলো পাকিস্তানের ঘাড়ের শিরার মতো।’ দুর্ভাগ্য হলো, জাতিসংঘের বহু প্রস্তাবনা থাকা সত্ত্বেও এই আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বিরোধ আজও মীমাংসা করা যায়নি।’
পেহেলগামে ২২ এপ্রিল জঙ্গি হামলার ঘটনায় ২৬ পর্যটক নিহত হয়। ২০০০ সালের পর থেকে হিমালয়ঘেঁষা উপত্যকাটিতে এটাকে সবচেয়ে প্রাণঘাতী সশস্ত্র হামলা বিবেচনা করা হচ্ছে।
এ ঘটনার পর থেকে পারমাণবিক অস্ত্রসমৃদ্ধ দেশ ভারত ও পাকিস্তান একে অপরের বিরুদ্ধে নানা কড়া পদক্ষেপ নিয়েছে। ভারতের পক্ষ থেকে গুরুত্বপূর্ণ সিন্ধু পানিচুক্তি একতরফাভাবে স্থগিত করা হয়েছে। পাকিস্তান পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে সিমলা চুক্তি স্থগিত করেছে। ভারতীয় উড়োজাহাজের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছে পাকিস্তানের আকাশসীমা।
সম্প্রতি ভারতের সিন্ধু পানিচুক্তি স্থগিত করার সিদ্ধান্তের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘পানি পাকিস্তানের একটি গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় স্বার্থ, আমাদের জীবনরেখা এ বিষয়ে কোনও সন্দেহ থাকা উচিত নয় যে, যেকোনও মূল্যে এবং যেকোনও পরিস্থিতিতে পানির প্রাপ্যতা রক্ষা করা হবে।’
প্রধানমন্ত্রী সতর্ক করে দিয়ে বলেন, 'সুতরাং, সিন্ধু পানিচুক্তির অধীনে পাকিস্তানের জন্য নির্ধারিত পানির প্রবাহ বন্ধ, কমানো বা অন্যদিকে ঘোরানোর যেকোনো প্রচেষ্টার মুখে আমরা সর্বশক্তি ও দৃঢ়তার সঙ্গে জবাব দেব। কেউ যেন কোনও ভ্রান্ত ধারণায় না থাকে।'
শাহবাজ শরিফ আরও বলেন, ‘আমাদের সাহসী সশস্ত্র বাহিনী দেশের সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় সম্পূর্ণভাবে সক্ষম ও প্রস্তুত। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভারতের বেপরোয়া আগ্রাসনের পরিমিত কিন্তু দৃঢ় প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে বিষয়টি স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে।’
সশস্ত্র বাহিনীর প্রতি ‘পূর্ণ আস্থা’ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই ২৪ কোটির জাতি আমাদের সাহসী সশস্ত্র বাহিনীর সাথে ঐক্যবদ্ধ এবং পাকিস্তানের প্রতিটি ইঞ্চি ভূমি রক্ষায় প্রস্তুত।’
তিনি জোর দিয়ে বলেন, 'শান্তি আমাদের অগ্রাধিকার। তবে এটি আমাদের দুর্বলতা হিসেবে গ্রহণ করা উচিত নয়।'
প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের এমন বক্তব্যের এক দিন আগে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের মাধ্যমে পরিচালিত যেকোনো তদন্তে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত আছে পাকিস্তান।’
উত্তেজনা বাড়ার সাথে সাথে, জাতিসংঘসহ বহু আন্তর্জাতিক সংগঠন উভয় দেশকে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানায়। সৌদি আরব ও ইরান মধ্যস্থতার প্রস্তাব দেয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন ভারত ও পাকিস্তান বিষয়টি মীমাংসা করবে।