ঢাকায় অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ১৯৭১ সালের গণহত্যার জন্য ক্ষমা চাওয়া এবং স্বাধীনতাপূর্ব যুগের আর্থিক ক্ষতিপূরণসহ একাধিক অমীমাংসিত ইস্যু তুলে ধরা হয়েছে বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। তবে বৈঠকের বিষয়ে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে এসব অমীমাংসিত ইস্যুগুলোর কথা উল্লেখ করা হয়নি।
বৃহস্পতিবার (১৬ এপ্রিল) ঢাকায় অনুষ্ঠিত এই ফরেন অফিস কনসালটেশন (এফওসি) বৈঠকের পরে এক ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মো. জসীম উদ্দিন জানান, পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে বাংলাদেশ বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়েছে ঐতিহাসিক বিরোধগুলো নিষ্পত্তির ওপর। তিনি বলেছিলেন, আমরা মুক্তিযুদ্ধকালীন গণহত্যার জন্য আনুষ্ঠানিক ক্ষমা চাওয়ার বিষয়টি পুনরায় উত্থাপন করেছি। একইসঙ্গে স্বাধীনতার আগে বাংলাদেশের প্রাপ্য সম্পদের হিসেব অনুযায়ী ৪৩২ কোটি ডলার ক্ষতিপূরণ দাবি করেছি।
তিনি আরও জানান, আলোচনায় বাংলাদেশে আটকে থাকা পাকিস্তানিদের প্রত্যাবাসন, অবিভক্ত সম্পদের সুষম বণ্টন, ১৯৭০ সালের ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য প্রেরিত আন্তর্জাতিক সাহায্য হস্তান্তরের বিষয়ও প্রাধান্য পেয়েছে।
তবে শুক্রবার পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে তাতে এই গুরুত্বপূর্ণ অমীমাংসিত ইস্যুগুলোর কোনও উল্লেখ করা হয়নি। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ষষ্ঠবারের মতো আয়োজিত এফওসি বৈঠকে দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক পুনরুজ্জীবনের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সেখানে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষাগত ও কৌশলগত সহযোগিতার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, দুই দেশের অভিন্ন ইতিহাস, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও জনগণের আকাঙ্ক্ষার ভিত্তিতে সম্পর্ক এগিয়ে নিতে চায় ইসলামাবাদ। এছাড়া সাম্প্রতিক বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে (নিউ ইয়র্ক, কায়রো, সামোয়া ও জেদ্দা) উচ্চ পর্যায়ের সংলাপ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে এগিয়ে নিতে সহায়ক হয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বৈঠকে কানেক্টিভিটির প্রসঙ্গেও গুরুত্ব দেওয়া হয়। করাচি ও চট্টগ্রামের মধ্যে সরাসরি জাহাজ চলাচলের বিষয়টিকে স্বাগত জানানো হয়েছে। পাশাপাশি আকাশপথে সরাসরি ফ্লাইট পুনরায় চালুর ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। ইসলামাবাদের পক্ষ থেকে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বাংলাদেশিদের জন্য উচ্চশিক্ষার সুযোগ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। আর বাংলাদেশ মৎস্য ও সামুদ্রিক খাতে কারিগরি প্রশিক্ষণের প্রস্তাব দিয়েছে।
ভিসা সহজীকরণ ও ভ্রমণ ব্যবস্থায় অগ্রগতির বিষয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছে উভয়পক্ষ। পাশাপাশি সার্ককে পুনরুজ্জীবিত করার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হয়েছে বলেও জানিয়েছে পাকিস্তান।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব আমনা বালুচ বৈঠকে ভারতের ‘অবৈধ দখলে থাকা’ জম্মু ও কাশ্মির পরিস্থিতি তুলে ধরেন এবং জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব অনুযায়ী এর দ্রুত সমাধানের দাবি জানান। গাজায় ইসরায়েলি হামলা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় দুই দেশ একমত হয়ে নিন্দা জানায় বলেও উল্লেখ করা হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে।
এফওসি বৈঠকের বাইরে আমনা বালুচ সাক্ষাৎ করেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, পরবর্তী সচিব পর্যায়ের বৈঠক ২০২৬ সালে ইসলামাবাদে অনুষ্ঠিত হবে।