ধর্ম অবমাননার দায়ে ইন্দোনেশিয়ায় টিকটকারের কারাদণ্ড

ইন্দোনেশিয়ার এক টিকটকারকে প্রায় তিন বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ফোনে যিশুর ছবি দেখে চুল কাটার পরামর্শ দিয়েছিলেন। মুসলিম ও ট্রান্সজেন্ডার এই নারী রাতু থালিসার টিকটকে ৪ লাখ ৪২ হাজারের বেশি ফলোয়ার রয়েছে। তিনি লাইভস্ট্রিমে একজন দর্শকের মন্তব্যের জবাব দিচ্ছিলেন, যেখানে তাকে পুরুষের মতো দেখাতে চুল কাটার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।

সোমবার সুমাত্রার মেদান আদালত থালিসাকে বিতর্কিত অনলাইন হেট-স্পিচ আইনের অধীনে ঘৃণা ছড়ানোর দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে তাকে ২ বছর ১০ মাসের কারাদণ্ড দেন। আদালত বলেছে, তার মন্তব্য সামাজিক ‘শৃঙ্খলা ও ধর্মীয় সম্প্রীতি’ বিনষ্ট করতে পারে। এ কারণে তাকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়। 

কয়েকটি খ্রিস্টান গোষ্ঠী থালিসার বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে পুলিশে অভিযোগ করার পর আদালত এ রায় দেয়। মানবাধিকার সংগঠনগুলো, যার মধ্যে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালও রয়েছে, এই রায়ের নিন্দা জানিয়েছে। সংগঠনটি এটিকে ‘রাতু থালিসার মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর ভয়ঙ্কর হামলা’ বলে বর্ণনা করে রায় বাতিলের দাবি জানিয়েছে। 

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ইন্দোনেশিয়ার নির্বাহী পরিচালক উসমান হামিদ এক বিবৃতিতে বলেন, ইন্দোনেশিয়ার কর্তৃপক্ষের উচিত নয় ইলেকট্রনিক ইনফরমেশন অ্যান্ড ট্রানজেকশন (ইআইটি) আইন ব্যবহার করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে করা মন্তব্যের জন্য মানুষকে শাস্তি দেওয়া। যদিও ইন্দোনেশিয়ার উচিত ধর্মীয় ঘৃণার প্রচারণা নিষিদ্ধ করা, যা বৈষম্য, শত্রুতা বা সহিংসতাকে উসকে দিতে পারে, তবে রাতু থালিসার বক্তব্য সেই পর্যায়ে পৌঁছায়নি। 

হামিদ ইন্দোনেশিয়ার কর্তৃপক্ষের প্রতি থালিসার দণ্ডাদেশ বাতিল এবং তাকে তাৎক্ষণিক মুক্তির আহ্বান জানান। তিনি ইআইটি আইনের ‘সমস্যাজনক ধারা’ বাতিল বা তা ব্যাপকভাবে সংশোধনেরও আহ্বান জানান। তার বর্ণনায় এসব ধারায় অনৈতিকতা, মানহানি ও ঘৃণামূলক বক্তব্যের অভিযোগে অপরাধীকরণ করা হয়েছে। 

২০০৮ সালে প্রথম চালু এবং ২০১৬ সালে অনলাইন মানহানি মোকাবিলায় সংশোধিত ইআইটি আইন অনলাইনে ব্যক্তির অধিকার সুরক্ষার জন্য তৈরি করা হয়েছিল। তবে মানবাধিকার সংগঠন, সংবাদমাধ্যম ও আইন বিশেষজ্ঞরা এই আইনের সমালোচনা করেছেন। তারা দীর্ঘদিন ধরে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর এই আইনের সম্ভাব্য হুমকি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছেন। 

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা প্রয়োগের সময় কমপক্ষে ৫৬০ জনকে ইআইটি আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে এবং ৪২১ জনকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। মানহানি ও ঘৃণামূলক বক্তব্যের অভিযোগে অভিযুক্তদের মধ্যে বেশ কয়েকজন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ইনফ্লুয়েন্সারও রয়েছেন। 

২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে এক মুসলিম নারীকে ইসলাম ধর্ম নিন্দার অভিযোগে দুই বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তিনি একটি ভাইরাল টিকটক ভিডিওতে শুয়োরের মাংস খাওয়ার আগে একটি ইসলামি বাক্য বলেছিলেন। ২০২৪ সালে আরেক টিকটকারকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে আটক করা হয়। অভিযোগ ছিল, তিনি একটি কুইজ পোস্ট করেছিলেন, যেখানে শিশুদের জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল কোন ধরনের প্রাণী কুরআন পড়তে পারে। 

ইন্দোনেশিয়ায় বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ও হিন্দুসহ অনেক ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বসবাস। তবে দেশটির বেশিরভাগ মানুষ মুসলিম। ইআইটি আইন লঙ্ঘনের দায়ে দোষী সাব্যস্ত বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ইসলাম ধর্ম অবমাননার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে। থালিসার মামলাটিতে একজন মুসলিম নারীকে খ্রিস্টান ধর্মের বিরুদ্ধে ঘৃণামূলক বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে। 

আসামি পক্ষ আগে থালিসাকে চার বছরের বেশি সাজা দাবি করেছিল এবং সোমবারের রায়ের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিকভাবে আপিল করেছে। থালিসাকে সাত দিনের মধ্যে আপিল করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে।