ফিলিপাইনের সাবেক প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতার্তে গ্রেফতার হয়েছেন। মাদকবিরোধী অভিযান চালাতে গিয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) পরোয়ানার আওতায় তাকে গ্রেফতার করা হয়। হংকং থেকে সংক্ষিপ্ত সফর শেষ করে মঙ্গলবার (১১ মার্চ) ম্যানিলা বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পরই গ্রেফতার হন দুতার্তে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ মার্কোস জুনিয়রের কার্যালয় থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, ভোরে ইন্টারপোল ম্যানিলা আইসিসির কাছ থেকে গ্রেফতারি পরোয়ানার আনুষ্ঠানিক কাগজটি হাতে পাওয়ার পরই তাকে আটক করা হয়। এখন পর্যন্ত তিনি কর্তৃপক্ষের হেফাজতে আছেন।
ম্যানিলার ভিলামোর এয়ার বেসে আটক অবস্থায় মেয়ে ভেরোনিকা দুতার্তের ইনস্টাগ্রাম পোস্ট করা এক ভিডিওতে, সাবেক প্রেসিডেন্ট প্রশ্ন তোলেন, আমি কোন আইন ভঙ্গ করেছি? কী অপরাধ করেছি?
ভিডিও বার্তায় ৭৯ বছর বয়সী আরও বলেন, আমি নিজ ইচ্ছায় এখানে আসিনি, অন্য কেউ আমাকে এনেছে। এখন তোমাদেরই আমার স্বাধীনতা হরণ করার ব্যাখ্যা দিতে হবে।
২০১৬ সালে ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণের পর মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন রদ্রিগো দুতার্তে।
মানবাধিকার সংস্থাগুলোর অভিযোগ, মাদকের বিরুদ্ধে এই লড়াইয়ে হাজারো মানুষ নিহত হয়েছে। নিহতদের বেশির ভাগই দরিদ্র। অনেক সময় মাদকের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ না পাওয়া সত্ত্বেও তাদের মেরে ফেলা হয়।
আইসিসি ২০১৯ সালে ফিলিপাইনে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগ তদন্ত করতে শুরু করে। ওই সময় আইসিসি থেকে বের হয়ে আসে ফিলিপাইন। তবে ট্রাইব্যুনাল তখন বলেছিল, আইসিসি থেকে বের হয়ে আসার আগ পর্যন্ত ঘটা হত্যাকাণ্ড নিয়ে তাদের বিচার করার এখতিয়ার আছে। এছাড়া প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে ফিলিপাইনের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর দাভাওতে মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে হওয়া হত্যাকাণ্ড নিয়েও বিচারের এখতিয়ার আছে আইসিসির।
২০২১ সালে দুতার্তের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরু করে আইসিসি। তবে দুই মাস পর ম্যানিলা জানায়, মাদকবিরোধী অভিযান চলাকালীন পুলিশ, ভাড়াটে খুনি ও সশস্ত্রদের হাতে সংঘটিত বেশ কিছু মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে তদন্ত করছে তারা। এরপর আইসিসি তাদের তদন্ত স্থগিত করে।
তখন মাদকবিরোধী অভিযানে প্রাণহানি সংশ্লিষ্ট কয়েকটি মামলায় স্থানীয়ভাবে অভিযোগ আনা হয়। সন্দেহভাজনদের হত্যার জন্য মাত্র ৯ জন পুলিশকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়।
ফিলিপাইনে অনেকের কাছে এখনো দুতার্তের জনপ্রিয়তা আছে। অপরাধের দ্রুত সমাধানের কারণে তারা তাকে সমর্থন করেন। তিনি এখনো একজন ক্ষমতাবান রাজনৈতিক শক্তি। মে মাসের মধ্যবর্তী নির্বাচনে তার শক্ত ঘাঁটি দাভাওয়ে আবারও মেয়র হওয়ার জন্য তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।