তালেবানের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারে আগ্রহী কেন ভারত?

সম্প্রতি আফগানিস্তানের তালেবান সরকারের সঙ্গে কূটনৈতিক যোগাযোগ বাড়িয়ে ভারত একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের সংকেত দিয়েছে। তিন বছর আগে তালেবান কাবুলের দখল নেওয়ার পর ভারত এই অঞ্চলে কৌশলগত প্রভাব হারিয়েছিল। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।

তালেবান সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকির সঙ্গে দুবাইয়ে সাক্ষাৎ করেছেন ভারতের শীর্ষ কূটনীতিক বিক্রম মিশ্রি। তালেবান ভারতকে একটি ‘গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক ও অর্থনৈতিক শক্তি’ উল্লেখ করে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নের আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

আলোচনায় চাবাহার বন্দর ব্যবহার করে পাকিস্তানের করাচি ও গোয়াদার বন্দর এড়িয়ে বাণিজ্য সম্প্রসারণের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। ভারতের এই উদ্যোগকে তালেবান তাদের জন্য কূটনৈতিক বিজয় হিসেবে দেখছে বলে জানিয়েছেন উইলসন সেন্টারের গবেষক মাইকেল কুগেলম্যান।

তালেবান শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠার পর বিভিন্ন দেশ কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনে ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করেছে। কোনও দেশ আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি না দিলেও ৪০টিরও বেশি দেশ তালেবান সরকারের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক যোগাযোগ বজায় রেখেছে। ভারতের এই উদ্যোগকে অনেকেই দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের নতুন অধ্যায় হিসেবে দেখছেন।

আফগানিস্তানে ৩ বিলিয়ন ডলারের বেশি বিনিয়োগ করেছে ভারত। এর মধ্যে পার্লামেন্ট ভবন, সড়ক নির্মাণ, বিদ্যুৎ সংযোগ, হাসপাতাল ও শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তি অন্তর্ভুক্ত। আফগানিস্তানে তালেবানের পূর্ব সমর্থক পাকিস্তানের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক অবনতির পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে তালেবানের আগ্রহ বেড়েছে।

পাকিস্তানের মাধ্যমে সরাসরি স্থলপথে যোগাযোগের সুযোগ না থাকায় ভারত ইরানের চাবাহার বন্দর উন্নয়নে গুরুত্ব দিচ্ছে। তালেবান নেতৃত্ব এই উদ্যোগকে সমর্থন করছে, যা আফগানিস্তানের বাণিজ্যিক যোগাযোগ বাড়াবে।

তালেবানের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের প্রধান ঝুঁকি তাদের অতীতের সহিংস ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপ। বিশেষজ্ঞদের মতে, তালেবানকে পাশে রাখার মাধ্যমে ভারত তাদের স্বার্থ রক্ষা করতে পারে, তবে দীর্ঘমেয়াদি আস্থার প্রশ্ন থেকে যাবে।

নারীদের প্রতি তালেবানের বর্তমান আচরণ নিয়ে উদ্বেগ থাকলেও কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে তালেবানকে সংশোধনের জন্য চাপ দেওয়া যেতে পারে। স্বীকৃতি লাভের জন্য তালেবান অভ্যন্তরীণ সংস্কারের দিকে মনোযোগ দিতে বাধ্য হবে বলে আশা করা হচ্ছে।