কেরালায় ভূমিধসে নিহত বেড়ে ৯৩

ভারতে কেরালার দক্ষিণাঞ্চলে ভারী বৃষ্টির কারণে ব্যাপক ভূমিধসের ঘটনায় কমপক্ষে ৯৩ জন নিহত হয়েছেন এবং বহু মানুষ এখনও আটকা পড়েছেন। মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) ভোরে ওয়ায়ানাড় জেলার পাহাড়ি অঞ্চলে এই ভূমিধসের ঘটনা ঘটে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।

এখনও উদ্ধারকাজ চলছে। তবে ভারী বৃষ্টির কারণে এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ সেতু ভেঙে যাওয়ায় উদ্ধারকাজ ব্যাহত হচ্ছে। রাজ্যের শীর্ষ সরকারি কর্মকর্তা ভি ভেনু সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ‘পরিস্থিতি এখনও অত্যন্ত গুরুতর। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।’

২০১৮ সালের পর কেরালায় এই প্রথম এত বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটলো। ওই সময়ের ভয়াবহ বন্যায় চার শতাধিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছিলেন।

সরকারি সূত্রে জানা গেছে, উদ্ধার কাজে সহায়তার জন্য দুই শতাধিক সেনা সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।

স্থানীয় হাসপাতালগুলোতে অন্তত ১২৯ জন আহতকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। প্রায় ২৫০ জনকে উদ্ধার করে ত্রাণ শিবিরে পাঠানো হয়েছে। ওয়ায়ানাড়ে ৬৫ জন মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পাশাপাশি চালিয়ার নদীতে ১৬টি মৃতদেহ পাওয়া গেছে। কিছু মৃতদেহের খণ্ডাংশ উদ্ধার করা হয়েছে।

পাহাড়ি ওয়ায়ানাড় জেলায় বর্ষাকালে ভূমিধসের ঘটনা ঘটে। এই ভূমিধসের ফলে মুন্ডাক্কাই, আট্টামালা, চুরালমালা এবং কুনহোমসহ বিভিন্ন এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ভিডিওগুলোতে দেখা যাচ্ছে, কাদামাখা পানি কাঁচা রাস্তায় এবং বনাঞ্চলে প্রবাহিত হয়ে বাড়িঘর ভাসিয়ে দিচ্ছে এবং মানুষ ও যানবাহন আটকে যাচ্ছে। চুরালমালা এবং মুন্ডাক্কাইয়ের সংযোগকারী সেতুটি ভেঙে গেছে, ফলে দুই এলাকার মধ্যে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে এবং উদ্ধারকর্মীদের আটকে পড়া পরিবারগুলোর কাছে পৌঁছানো কঠিন হয়ে পড়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা রাশিদ পাডিক্কলপরম্বান রয়টার্সকে জানিয়েছেন, রাতের দিকে কমপক্ষে তিনটি ভূমিধস ঘটেছে। যা সেতুটিকে ভাসিয়ে দিয়েছে।

রাজ্য ও জাতীয় দুর্যোগ ত্রাণ টিমগুলো উদ্ধারকাজ চালিয়ে যাচ্ছে। স্থানীয়রা এ কাজে সহায়তা করছেন। রাজ্যের কর্মকর্তা ভেনু জানিয়েছেন, একটি ছোট দল নদী পার হয়ে বিচ্ছিন্ন অঞ্চলে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছে। তবে আরও সরঞ্জাম প্রয়োজন এবং নদীর তীব্র স্রোতের কারণে উদ্ধারকর্মীদের নদী পার হওয়া কঠিন হচ্ছে।

উড়োজাহাজ দিয়ে ত্রাণ কার্যক্রমও ভারী বৃষ্টির কারণে স্থগিত করতে হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা রাঘবন সি আরুণামালা ভয়াবহ দৃশ্য বর্ণনা করে বলেছেন, আমি একজনকে ধ্বংসাবশেষে আটকে থাকতে দেখে সাহায্যের জন্য চিৎকার করতে শুনেছি। দমকলকর্মী ও উদ্ধারকর্মীরা গত কয়েক ঘণ্টা ধরে তার কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, মানুষ তাদের প্রিয়জনদের খোঁজে হাসপাতালগুলোতে ভিড় করছেন। প্রভাবিত অঞ্চলে প্রায় ৩৫০টি পরিবার বাস করত। যেখানে অনেক চা ও এলাচ বাগানের মালীদের বাসস্থান ছিল। অধিকাংশ হতাহত ব্যক্তি সম্ভবত তাদের মাটির ঘরে ঘুমাচ্ছিলেন ভূমিধসের সময়।

ওয়ায়ানাড় জেলা ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় এখনও ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। ১৪টি জেলার মধ্যে ১০টি জেলার স্কুল ও কলেজ বন্ধ রাখা হয়েছে। ২০১৯ সালে ওয়ায়ানাডের পুথুমালা এলাকায় একটি ভূমিধসে ১৭ জন মারা গিয়েছিল।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এক্স (সাবেক টুইটার)-এ জানিয়েছেন, তিনি কেরালার মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। মোদি নিহতদের পরিবারকে ২ লাখ রুপি এবং আহতদের ৫০ হাজার রুপি ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।