যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চাপের মুখে নতি স্বীকার করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়। ফেডারেল তহবিল বন্ধের হুমকি সত্ত্বেও বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রশাসনের শর্ত মেনে নেবে না বলে জানিয়েছে। হার্ভার্ডের প্রেসিডেন্ট অ্যালান গার্বার এক বিবৃতিতে বলেছেন, কোনও সরকার—তা যে দলেরই হোক না কেন—বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কী শেখাবে তা নির্ধারণ করতে পারবে না।
গত শুক্রবার হোয়াইট হাউজের এক তালিকাভুক্ত শর্ত প্রত্যাখ্যান করার পর ট্রাম্প প্রশাসন হার্ভার্ডের জন্য বরাদ্দ ২২০ কোটি ডলার (প্রায় ২৩ হাজার কোটি টাকা) ফেডারেল তহবিল বরাদ্দ বাতিল করে। বিশ্ববিদ্যালয়টির এই সিদ্ধান্তকে অনেক শিক্ষার্থী ও সাবেক শিক্ষার্থীরা সমর্থন জানালেও ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, প্রতিষ্ঠানটি নাগরিক অধিকার আইন মেনে চলার দায়িত্ব এড়াচ্ছে।
ট্রাম্প দীর্ঘদিন ধরেই উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর সমালোচনা করে আসছেন। ২০২১ সালে তার ভাইস-প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জে. ডি. ভ্যান্স এক বক্তৃতায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ‘শত্রু’ আখ্যা দিয়েছিলেন। গত বছর ক্যাম্পাসে ফিলিস্তিনের সমর্থনে বিক্ষোভ ও ইহুদি শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে হয়রানির অভিযোগের পর ট্রাম্প প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওপর চাপ বাড়ায়।
গত মাসে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ট্রাম্প প্রশাসনের শর্ত মেনে নেয় ৪০০ কোটি ডলার তহবিল কাটার হুমকির পর। হার্ভার্ডও কিছু ছাড় দিয়েছিল—ইহুদিবিদ্বেষ মোকাবিলায় একটি টাস্কফোর্স গঠন এবং মধ্যপ্রাচ্য স্টাডিজ সেন্টারের প্রধানকে অপসারণ করা হয়েছিল। কিন্তু এবার হোয়াইট হাউজের অতিরিক্ত শর্ত প্রত্যাখ্যান করেছে তারা।
হার্ভার্ডের শিক্ষার্থী ও আফ্রিকান-আমেরিকান রেজিস্ট্যান্স অর্গানাইজেশনের সদস্য সা’মাইয়া এভান্স বলেছেন, হার্ভার্ড শুধু সেই কাজই করবে যার জন্য তাকে জবাবদিহি করতে হবে।
তার মতে, কলাম্বিয়ার সিদ্ধান্তের সমালোচনা এবং ক্যাম্পাসে চলমান বিক্ষোভ হার্ভার্ড কর্তৃপক্ষকে চাপে ফেলেছে।
অন্যদিকে, হার্ভার্ড স্টুডেন্ট কাউন্সিলের একাডেমিক প্রতিনিধি ম্যাথিউ টোবিন বলেছেন, ট্রাম্প প্রশাসন শুধু হার্ভার্ডকে টার্গেট করছে কারণ এটি একটি উদারপন্থি প্রতিষ্ঠান। তাদের লক্ষ্য হলো কী শেখানো হবে এবং কীভাবে শিক্ষার্থীরা চিন্তা করবে তা নিয়ন্ত্রণ করা।
৫ হাজার ৩২০ কোটি ডলারের এনডাউমেন্ট ফান্ড (দান তহবিল) নিয়ে হার্ভার্ড আপাতদৃষ্টিতে সুরক্ষিত। তবে আমেরিকান কাউন্সিল অন এডুকেশনের মুখপাত্র স্টিভেন ব্লুম বলেছেন, এনডাউমেন্ট ফান্ডের ৭০ শতাংশই নির্দিষ্ট প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ, যা সরাসরি খরচ করা যায় না। তহবিল কাটার প্রভাব কমাতে হলে হার্ভার্ডকে অতিরিক্ত ৪ হাজার কোটি ডলার তহবিল সংগ্রহ করতে হবে।
এছাড়া, ট্রাম্প যদি হার্ভার্ডের ট্যাক্স-মুক্ত মর্যাদা কেড়ে নেন, তাহলে প্রতিষ্ঠানটির বাৎসরিক সম্পত্তি কর বিল বেড়ে যেতে পারে। ২০২৩ সালে হার্ভার্ড শুধু সম্পত্তি করেই ১৫৮ কোটি ডলার সাশ্রয় করেছিল।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ শুধু হার্ভার্ডের বিরুদ্ধেই নয়, বরং সমগ্র উচ্চশিক্ষা খাতের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার একটি চেষ্টা। গ্যালাপের এক জরিপে দেখা গেছে, গত কয়েক বছরে আমেরিকানদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রতি আস্থা কমেছে, বিশেষ করে রিপাবলিকানদের মধ্যে।
হার্ভার্ডের মতো প্রতিষ্ঠান যদি ট্রাম্পের চাপে নতি স্বীকার করে, তাহলে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ও একই পথে হাঁটতে বাধ্য হতে পারে। কিন্তু হার্ভার্ডের এই লড়াই কতদিন চলবে, তা এখনও অনিশ্চিত।
সূত্র: বিবিসি