আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও বিশ্বব্যাংকের মতো বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সরে যাওয়ার আশঙ্কা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। সম্প্রতি জি-টুয়েন্টি বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্টের অনুপস্থিতি এই আশঙ্কাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংক কী করে এবং যুক্তরাষ্ট্র যদি এগুলো থেকে সরে যায় তবে কী হতে পারে?
আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংক কী করে?
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ধ্বংসস্তূপ থেকে বিশ্বকে পুনর্গঠনের লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংক প্রতিষ্ঠা করে। আইএমএফ আর্থিক সংকটে পড়া দেশগুলোকে ঋণ দেয়। গ্রিসের আর্থিক সংকট, আর্জেন্টিনার ঋণ সংকট এমনকি ১৯৭৬ সালে যুক্তরাজ্যের অর্থনৈতিক সংকটেও আইএমএফ ঋণ দিয়েছে।
আইএমএফ ঋণের শর্ত হিসেবে সংস্কার চাপিয়ে থাকে, যেমন অপচয় কমানো, বাজেট স্বচ্ছ করা, দুর্নীতি দূর করা বা কর রাজস্ব বৃদ্ধি করা। বিশ্বব্যাংক কম সুদে ঋণ দিয়ে রেলপথ থেকে বন্যা প্রতিরোধ ব্যবস্থা নির্মাণে সহায়তা করে। এটি সবুজ বন্ডের মতো উদ্ভাবনী আর্থিক সরঞ্জাম তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় কাঠামো তৈরি করে এবং ঝুঁকি বিমা প্রদান করে।
কে আইএমএফের ওপর নির্ভর করে?
বিশ্বের অনেক উদীয়মান বাজার অর্থনীতি আইএমএফের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। আর্জেন্টিনা আইএমএফের সহায়তা ছাড়া সরকারি কর্মচারীদের বেতন দিতে পারত না। সেনেগাল থেকে শ্রীলঙ্কা পর্যন্ত অনেক দেশই বর্তমানে আইএমএফের অর্থের ওপর নির্ভর করছে। আইএমএফের কর্মসূচি থাকলে বিনিয়োগকারীরা আস্থা পায়।
যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন তুলে নিলে কী হবে?
আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং উভয় প্রতিষ্ঠানের সবচেয়ে বড় শেয়ারহোল্ডার যুক্তরাষ্ট্র। আইএমএফে যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ার ১৬ শতাংশের বেশি এবং বিশ্বব্যাংকে এর শেয়ার ১৬ শতাংশের কাছাকাছি। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকরা সিদ্ধান্ত গ্রহণে শক্তিশালী প্রভাব রাখেন।
যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন প্রত্যাহার করলে তা হবে ‘একটি বিপর্যয়’, বলেছেন নিউবার্গার বারম্যানের উদীয়মান বাজার ঋণ পোর্টফোলিও ম্যানেজার কান নাজলি। মার্কিন প্রভাব কমলে চীন ও অন্যান্য দেশ বৈশ্বিক নেতৃত্ব দখলের সুযোগ নিতে পারে। চীন ইতোমধ্যে আইএমএফের শেয়ারহোল্ডিং পুনর্বিন্যাস এবং উদীয়মান বাজারের কণ্ঠস্বর শক্তিশালী করার জন্য চাপ দিচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সরে যাওয়া আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের কার্যকারিতার জন্য একটি বড় ধাক্কা হবে এবং এটি শুধু চীনকে সাহায্য করবে, বলেছেন অফিসিয়াল মনিটারি অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউশন্স ফোরামের (ওএমএফআইএফ) যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ারম্যান মার্ক সোবেল। বিশ্বব্যাংকে যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলোর চুক্তি ও কাজের সুযোগ কমে যাবে। আইএমএফের শেয়ারহোল্ডার কাঠামো পরিবর্তন হলে ক্ষমতার ভারসাম্য বদলে যাবে, সিদ্ধান্ত কম অনুমানযোগ্য এবং সম্ভবত কম স্বচ্ছ হয়ে উঠবে।
বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ কি উন্নয়নশীল বিশ্ব চায়?
আইএমএফ প্রায়ই বাজেটের ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য জ্বালানি ভর্তুকি কাটা বা কর রাজস্ব বৃদ্ধির মতো বেদনাদায়ক সংস্কারের পরামর্শ দেয়, যা জনপ্রিয় নয়। গত গ্রীষ্মে কেনিয়ায় প্রাণঘাতী বিক্ষোভের সময় কিছু কেনিয়ান আইএমএফের নিন্দা করেছিল। ১৯৯৭ সালের এশিয়ান আর্থিক সংকটে আইএমএফের প্রতিক্রিয়াও সমালোচিত হয়েছিল। তবে কিউবা, উত্তর কোরিয়া এবং তাইওয়ান ছাড়া প্রায় সব দেশই আইএমএফের সদস্য।
সূত্র: রয়টার্স