ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) গ্রেফতারি পরোয়ানার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদ একটি বিল পাস করেছে। ইলিজিটিমেট কোর্ট কাউন্টারঅ্যাকশন অ্যাক্ট নামের এই বিল বৃহস্পতিবার ২৪৩-১৪০ ভোটে পাস হয়। এতে ইসরায়েলের প্রতি মার্কিন কংগ্রেসের দৃঢ় সমর্থনের ইঙ্গিত মেলে। ১৯৮ জন রিপাবলিকান এবং ৪৫ জন ডেমোক্র্যাট বিলটির পক্ষে ভোট দেন। কোনও রিপাবলিকান এর বিরোধিতা করেননি। এখন বিলটি রিপাবলিকান সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকা সিনেটে উপস্থাপিত হবে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এ খবর জানিয়েছে।
বিলটিতে প্রস্তাব করা হয়েছে, আইসিসি যদি কোনও মার্কিন নাগরিক বা যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশের নাগরিকের বিরুদ্ধে তদন্ত, গ্রেফতার বা বিচার কার্যক্রম চালানোর চেষ্টা করে, তবে এর সঙ্গে যুক্ত বিদেশিদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে।
নিষেধাজ্ঞার মধ্যে থাকবে সম্পদ জব্দ ও ভিসা বাতিল। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল কেউই আইসিসি প্রতিষ্ঠার রোম সংবিধির সদস্য নয়।
প্রতিনিধি পরিষদের পররাষ্ট্র কমিটির চেয়ারম্যান রিপাবলিকান ব্রায়ান মাস্ট বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এই আইন পাস করছে কারণ একটি বেআইনি আদালত আমাদের মহান মিত্র ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে।
ইসরায়েলের গাজা অভিযানে ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত ৪৬ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, যাদের মধ্যে অনেক নারী ও শিশু। জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা গাজায় ইসরায়েলের কার্যক্রমকে গণহত্যার বৈশিষ্ট্যসমৃদ্ধ বলে অভিহিত করেছেন।
এ ঘটনার পর গত মে মাসে আইসিসি নেতানিয়াহু এবং গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে মার্কিন আইনপ্রণেতারা আইসিসি’র বিরুদ্ধে পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দেন।
বৃহস্পতিবারের ভোটের আগে মানবাধিকার সংস্থাগুলো প্রতিনিধি পরিষদের বিলটিকে স্বাধীন বিচারিক প্রতিষ্ঠানের ওপর আঘাত বলে অভিহিত করেছে। তারা বলেছে, এই ধরনের নিষেধাজ্ঞা ক্ষতিগ্রস্তদের ন্যায়বিচার পাওয়ার পথে বাধা সৃষ্টি করবে এবং যুক্তরাষ্ট্রকে তার মিত্রদের সঙ্গে বিরোধে ফেলবে।
আইনটি দ্রুত সিনেটে বিবেচিত হবে বলে সংখ্যাগরিষ্ঠদের নেতা জন থুন জানিয়েছেন। নতুন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানুয়ারি ২০ তারিখে ক্ষমতা গ্রহণের পর বিলটিতে স্বাক্ষর করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
ট্রাম্প নিজের প্রথম মেয়াদে আইসিসির শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিলেন। তবে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সেগুলো প্রত্যাহার করেন।
আইসিসি একটি স্থায়ী আদালত, যা যুদ্ধাপরাধ, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার জন্য ব্যক্তিদের বিচার করতে পারে। ফিলিস্তিন ২০১৫ সাল থেকে এর সদস্য এবং আদালত ২০১৯ সালে ইসরায়েলি ও হামাস কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অপরাধ তদন্ত শুরু করে।