মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইউএস স্টিল অধিগ্রহণে জাপানের বৃহত্তম ইস্পাত উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান নিপ্পন স্টিলের চুক্তি আনুষ্ঠানিকভাবে বাতিল করেছেন। তিনি বলেছেন, বিদেশি মালিকানা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
প্রায় ১৪.৯ বিলিয়ন ডলারের এই চুক্তি প্রথম ঘোষণা করা হয় এক বছর আগে। নিপ্পন স্টিল পেনসিলভানিয়াভিত্তিক ইউএস স্টিলের জন্য একটি প্রাণসঞ্চারী হিসেবে বর্ণনা করেছিল।
তবে, চুক্তিটি শুরু থেকেই রাজনৈতিক চাপে পড়ে। ইউএস স্টিলওয়ার্কার্স ইউনিয়নের নেতারা জোরালোভাবে এর বিরোধিতা করেন। বিশেষ করে ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় পেনসিলভানিয়ায় রাজনৈতিক চাপ উল্লেখযোগ্য হয়ে ওঠে।
বাইডেন এই চুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। যদিও কিছু উপদেষ্টা সতর্ক করেছিলেন যে এটি যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের, বিশেষত টোকিওর সঙ্গে সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
বাইডেন শুক্রবার তার ঘোষণা দেওয়ার সময় বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ইস্পাত শিল্প এবং এর সরবরাহ চেইনকে শক্তিশালী রাখতে দেশের মালিকানাধীন থাকা গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি বলেন, ইস্পাত উৎপাদন এবং যারা এটি উৎপাদন করেন, তারাই আমাদের জাতির মেরুদণ্ড। আমাদের অবকাঠামো, গাড়ি শিল্প এবং প্রতিরক্ষা শিল্পের ভিত্তি হলো ইস্পাত। দেশীয় ইস্পাত উৎপাদন ও শ্রমিক ছাড়া আমাদের দেশ কম শক্তিশালী এবং কম নিরাপদ।
ইউএস স্টিল ও নিপ্পন স্টিল উভয়েই এর আগে জানিয়েছিল যে, এই চুক্তি না হলে তারা আইনি পদক্ষেপ নিতে পারে।
টোকিওর ইন্টারন্যাশনাল ক্রিশ্চিয়ান ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও আন্তর্জাতিক অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক স্টিফেন নাগি বলেন, এটি একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত।
তার মতে, বাইডেন প্রশাসনের মধ্যবিত্তের জন্য পররাষ্ট্রনীতি প্রতিশ্রুতির সঙ্গে এই সিদ্ধান্ত সঙ্গতিপূর্ণ। তিনি আরও বলেন, এটি ট্রাম্প প্রশাসনের ‘মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন’ এজেন্ডার সরাসরি প্রতিক্রিয়া এবং এর ধারাবাহিকতা। বাইডেন প্রশাসন বিদেশি ব্যবসার প্রতি দুর্বল অবস্থান দেখাতে পারেনি, তা সে মিত্র হোক বা প্রতিপক্ষ।
এদিকে, বাইডেনের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগের পরিবেশ শীতল হতে পারে বলে আশঙ্কা করেছেন কিছু ব্যবসায়িক গোষ্ঠী। তবে, স্থানীয় কর্মী ও রাজনৈতিক নেতারা বাইডেনের এই পদক্ষেপের প্রশংসা করেছেন।
ইউএস স্টিল এর আগে সতর্ক করেছিল যে, নতুন মালিকের বিনিয়োগ ছাড়া তাদের কারখানা বন্ধ করার আশঙ্কা রয়েছে। যদিও নিপ্পন স্টিল জানিয়েছিল, তারা উৎপাদন কমানোর বা চাকরি কাটছাঁটের কোনও পরিকল্পনা করেনি।