হিস্পানিক ও শ্রমজীবী শ্রেণির সমর্থনে ট্রাম্পের বাজিমাত

যুক্তরাষ্ট্রে এবারের নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও নির্বাচনি সমীকরণ পাল্টে দিয়েছেন। তিনি হিস্পানিক, তরুণ, ও স্নাতক পাস না করা আমেরিকান ভোটারদের সমর্থন পেয়েছেন। তার এবারের জয়ে এই ভোটার শ্রেণির সমর্থন-ই পার্থক্য গড়ে দিয়েছে, পুনরায় প্রেসিডেন্ট পদে অধিষ্ঠিত হয়েছেন। শ্রমজীবী শ্রেণির সুরক্ষা, করছাড়ের প্রতিশ্রুতি এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েই ট্রাম্পের এই পুনরুত্থান ঘটেছে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।

এডিসন রিসার্চের একটি বুথ ফেরত জরিপ অনুযায়ী, ট্রাম্পের হিস্পানিক ভোটারের সমর্থন এবারের নির্বাচনে উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। ২০১৯ সালের নির্বাচনে যেখানে ৩২ শতাংশ হিস্পানিক ভোটার ট্রাম্পকে ভোট দিয়েছিল। এবার তা বেড়ে ৪৬ শতাংশে পৌঁছেছে। কয়েক দশক ধরে হিস্পানিক ভোটারদের মধ্যে ডেমোক্র্যাটদের প্রভাব থাকলেও, ট্রাম্পের জন্য এ বছরের সমর্থন রিপাবলিকান প্রার্থীদের মধ্যে সর্বোচ্চ, এমনকি ২০০৪ সালে জর্জ ডব্লিউ. বুশের ৪৪ শতাংশ সমর্থনকেও ছাড়িয়ে গেছে।

রিপাবলিকান মিডিয়া কৌশলবিদ জিয়ানকার্লো সোপো বলেন, তরুণ হিস্পানিকদের মধ্যে তাদের পূর্বপুরুষদের মতো ডেমোক্র্যাটদের জন্য দীর্ঘকালীন সমর্থনের ঐতিহ্য নেই।

এ বছর হিস্পানিক পুরুষদের মধ্যে ট্রাম্পের সমর্থন ছিল ৫৫ শতাংশ, যা ২০২০ সালের চেয়ে ১৯ শতাংশ পয়েন্ট বেশি। হিস্পানিক নারীদের মধ্যে ট্রাম্পের সমর্থন বেড়ে ৩৮ শতাংশে পৌঁছেছে।

অর্থনৈতিক উদ্বেগ ও শ্রমজীবী শ্রেণির প্রভাব

যুক্তরাষ্ট্রে হিস্পানিক জনগোষ্ঠী অর্থনৈতিকভাবে অপেক্ষাকৃত নিম্ন শ্রেণির সঙ্গে সম্পর্কিত এবং অনেকের স্নাতক ডিগ্রি নেই। এছাড়া, এই সম্প্রদায় তুলনামূলকভাবে যুবক হওয়ায় সাম্প্রতিক বছরগুলোর মুদ্রাস্ফীতি ও সুদের উচ্চহারের প্রভাবেও তারা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ১৮ থেকে ২৯ বছর বয়সীদের মধ্যে ট্রাম্প এবার ৪৩ শতাংশ ভোট পেয়েছেন, যা ২০২০ সালের চেয়ে ৭ শতাংশ পয়েন্ট বেশি।

এবার প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ ভোটার যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়ে অসন্তুষ্ট ছিলেন। ৪৬ শতাংশ ভোটার তাদের পারিবারিক আর্থিক অবস্থা চার বছর আগের তুলনায় খারাপ বলে মনে করেছেন। ইউনিডোস ইউএস ল্যাটিনো ভোট উদ্যোগের ভাইস প্রেসিডেন্ট ক্লারিসা মার্টিনেজ ডি ক্যাস্ট্রো বলেন, এটি ছিল অর্থনৈতিক পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করে একটি গণভোট, যা হিস্পানিক ভোটারদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু।

হিস্পানিক সমাজের পরিবর্তনশীল দৃষ্টিভঙ্গি

এ বছরের নির্বাচনে হিস্পানিকদের মধ্যে অভিবাসন নিয়ে ট্রাম্পের কঠোর অবস্থান সমর্থনকারী ভোটারও দেখা গেছে। ইডিসন রিসার্চের এক্সিট পোল অনুযায়ী, প্রায় এক-চতুর্থাংশ হিস্পানিক উত্তরদাতা যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ অভিবাসীদের তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর পক্ষপাতী ছিলেন। ট্রাম্পের অভিবাসনবিরোধী অবস্থান তার সমর্থনে প্রভাব ফেলেছে।

যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেওয়া মেক্সিকান বংশোদ্ভূত আর্তুরো লাগুনা এ বছরই নাগরিকত্ব লাভ করেছেন। তিনি জানান যে, তার প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পকে ভোট দিয়েছেন। ২৮ বছর বয়সী এই কর্পোরেট ম্যানেজার জানান, তিনটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো পারিবারিক মূল্যবোধ, জীব্নপ্রীতি ও ধর্ম।

শিক্ষিত ও অশিক্ষিত শ্রেণির ভোটে বিপুল পার্থক্য

অ-স্নাতক ভোটারদের মধ্যে ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা এই নির্বাচনে উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রায় ৫৬ শতাংশ অ-স্নাতক ভোটার এবার ট্রাম্পকে সমর্থন করেছেন। অন্যদিকে, স্নাতক ডিগ্রিধারী ভোটারদের মধ্যে ৫৫ শতাংশ ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিসকে সমর্থন করেছেন।

এবার ট্রাম্পের সমর্থন শহুরে এলাকায় বিশেষ করে বড় শহরগুলোর পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। নিউ ইয়র্ক সিটির নাসাউ কাউন্টিতে ট্রাম্প প্রায় ৫২ শতাংশ ভোট পেয়ে এলাকাটি রিপাবলিকানদের দখলে নিয়েছেন। অন্যদিকে, বড় শহরের ২৫টি নগর কাউন্টিতে হ্যারিস প্রায় ৬০ শতাংশ ভোট পেয়েছেন, যা ২০২০ সালের তুলনায় ৫ শতাংশ পয়েন্ট কম।